আমাদের দেশে যে কয়টি দ্বীপ  আছে তার মধ্য সুন্দর্যের দিক দিয়ে অন্যতম  সাগর কন্যা দ্বীপ  কক্সবাজারের কুতুবদিয়া।চলুন জেনে নেওয়া যাক কক্সবাজার থেকে মাত্র ৭৫ কিলোমিটার দূরত্বের সৌন্দর্যের লীলাভূমি এ দ্বীপটি ৬টি  দর্শনীয় স্হান প্রসঙ্গে, ভ্রমণপিপাসুদের জন্য আদর্শ স্থান সমুদ্র, আকাশের নীল আর সাগরের নীল মিলে এক অপরূপ বিশালতা সৃষ্টি করে। আর এদিক থেকে এদেশের মানুষ  কিছুটা সৌভাগ্যবানই বটে। কেননা পৃথিবীর সবচেয়ে বড় সমুদ্র সৈকত কক্সবাজার আমাদের দেশে অবস্থিত।  তবে এখনও পর্যন্ত অনেকেরই হয়তো জানা নেই কক্সবাজার জেলার অন্তর্গত একটি কুতুবদিয়া উপজেলার মনোমুগ্ধকর সৌন্দর্যের কথা। এটি মূলত একটি দ্বীপ, যা কুতুবদিয়া চ্যানেল দ্বারা মূল ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন। এর আয়তন ৮৩.৩২ বর্গমাইল। কক্সবাজার জেলা সদর থেকে এ উপজেলার দূরত্ব ৭৫ কিলোমিটার। দ্বীপটির উত্তর,পশ্চিম ও দক্ষিন তিন দিকেই বঙ্গোপসাগর দ্বারা বেষ্টিত এবং পূর্বদিকে কুতুবদিয়া চ্যানেল ও মহেশখালী উপজেলা,পেকুয়া উপজেলা এবং চট্টগ্রাম জেলার বাশখালী জেলা অবস্থিত।এ দ্বীপটি সমুদ্র বক্ষ থেকে জেগে উঠে চতুর্দশ শতাব্দীর শেষের দিকে।পঞ্চদশ শতাব্দীর শেষের দিকে এই দ্বীপে মানুষের পদচারণা পাওয়া যায় বলে ধারনা করা হয়।হযরত কুতুবউদ্দীব নামে এক কামেল ব্যক্তি তার কিছু সঙ্গী নিয়ে মগ পর্তুগীজ বিতাড়িত করে এই দ্বীপে আস্তানা স্থাপন করে।অন্যদিকে আরাকান থেকে পলায়নরত মুসলমানেরা চট্টগ্রামের আশেপাশের অঞ্চল থেকে ভাগ্যন্বষনে উক্ত দ্বীপে আসতে শুরু করে।নির্যাতিত মুসলমানের কুতুবউদ্দিনের প্রতি শ্রদ্ধান্তরে কুতুবউদ্দিনের নামানুসারে এ দ্বীপের নামকরন করে কুতুবউদ্দিনের দিয়া,যা পরবর্তীতে কুতুবদিয়া নামে স্বীকৃতি লাভ করে।বর্তমানে এই দ্বীপের বয়স ৬০০ পেরিয়ে গেছে।এই দ্বীপের আয়তন প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ কমে গেছে এবং এখনও সাগরের ঢেউয়ের প্রভাবে ভেঙে সমুদ্রে পরিণত হচ্ছে সৌন্দর্যের লীলাভূমি সাগরকন্যা কুতুবদিয়া দ্বীপটি।

কুতুবদিয়ার দর্শনীয় স্থানঃ

বাতিঘর: বহুবছর আগে সমুদ্রে চলাচলকারী জাহাজকে পথ দেখাতে কুতুবদিয়ায় একটি বাতিঘর নির্মাণ করা হয়েছিল, ভাটার সময় সেই বাতিঘরের ধ্বংসাবশেষ দেখা যায়। সমুদ্র সৈকত ধরে উত্তর দিকে গেলে বর্তমানে নির্মিত নতুন বাতিঘর দেখতে পাবেন।

সমুদ্র সৈকত: কুতুবদিয়ায় রয়েছে প্রায় ১৬ কিলোমিটার দীর্ঘ সমুদ্র সৈকত। নির্জন এই সৈকতে পর্যটকের আনাগোনা খুব কম তবে এখানে জেলেদের কর্মব্যস্ততা চোখে পড়ে। সৈকতের প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো এখানে প্রচুর গাংচিল ঘুরে বেড়ায়। সূর্যাস্তের দৃশ্য দেখার জন্য আদর্শ জায়গা হচ্ছে কুতুবদিয়া সমুদ্র সৈকত।

বায়ুবিদ্যুৎ কেন্দ্র: কুতুবদিয়া সমুদ্র সৈকতের দক্ষিণে রয়েছে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় বায়ুবিদ্যুৎ কেন্দ্র। এখানে প্রায় এক হাজার কিলোওয়াট বিদ্যুৎ উৎপন্ন হয়।

লবণ চাষ: শীতকালে কুতুবদিয়ায় লবণ চাষ করা হয়। প্রাকৃতিক উপায়ে লবণ উৎপাদন দেখতে হলে চলে আসতে পারেন কুতুবদিয়ায়।

কুতুব শরীফ দরবার: কুতুব শরীফ  দরবার  দেখতে আপনাকে যেতে হবে দ্বীপের ধুরং এলাকায়। এই দরবারের প্রতিষ্ঠাতা শাহ আব্দুল মালেক আল কুতুবী, তিনি১৯১১ সালে জন্মগ্রহণ করেন। মৃত্যু বরণ করেন ২০০০ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি। প্রতিবছর ৭ ফাল্গুন শাহ আব্দুল মালেক আল কুতুবীর মৃত্যুবার্ষিকীতে হাজার হাজার ভক্তের আগমন ঘটে।

কুতুবদিয়া চ্যানেল: মাগনামা ঘাট থেকে কুতুবদিয়া দ্বীপে যাবার সময় এই চ্যানেলটি পাড়ি দিতে হবে।তবে পর্যটকদের কাছে কুতুবদিয়ার চ্যানেল যাত্রা নি:সন্দেহ নান্দনিক।প্রায় প্রাকৃতির নয়নাভিরাম অপরুপ সৌন্দর্যে আপনাকে বিমোচিত করবে।শীতকাল ছাড়া বছরের অন্যান্য সময় একটু উত্তাল থাকে। এছাড়াও রয়েছে শুটকী মহল, কালারমার মসজিদ, ধুরুং স্টেডিয়াম, সিটিজেন পার্ক, প্রাচীন দীঘির পাড়ের মতো দর্শনীয় স্থান।শীতের ছুটিতে একান্ত সময় কাটানোর জন্য নির্জন সমুদ্র সৈকত। চাইলে পরিবার, বন্ধুবান্ধবদের সাথেও আসতে পারেন। ঝাউগাছের ঘেরা দ্বীপের সৈকত এলাকা নীরবতা প্রিয় পর্যটকদের কাছে ভীষণ আকর্ষণীয়। চাইলে  সময় বের করে ঘুরে আসতে পারেন বৈচিত্র্যময় প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যের লীলাভুমি সুন্দর এই কুতুবদিয়া দ্বীপে।

প্রকাশক : কাজী জসিম উদ্দিন   |   সম্পাদক : ওয়াহিদুজ্জামান

© Deshchitro 2024