শ্রীমঙ্গলে ৫ দিনব্যাপী টি টেস্টিং অ্যান্ড কোয়ালিটি কন্ট্রোল প্রশিক্ষণ শুরু


বাংলাদেশ চা বোর্ডের চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল শেখ মো. সরওয়ার হোসেন এসইউপি এনডিসি পিএসসি বলেছেন, ‘দামের চেয়ে কোয়ালিটির চ্যালেঞ্জটা বেশি। কোয়ালিটি কম্প্রোমাইজ করার জন্য দামটা ধরে রাখতে পারছে না। চায়ের কোয়ালিটি উন্নতি করতে পারলে দাম অবশ্যই পাবে। কিন্তু এখন যেহেতু কোয়ালিটি উন্নতি হচ্ছে না, তাই দাম পড়ে যাচ্ছে। লোকজন ভালো চায়ের সাথে খারাপ চা মিশ্রণ করে বাজারে বিক্রি করছে। যার কারনে দাম বাড়ছে। মানুষ যখন বেশি টাকা দিয়ে একটা জিনিস কিনতে যাবে তখন ভালোটাই কিনবে। তাই ভালো চা করতে পারলে দাম অবশ্যই পাওয়া যাবে। এছাড়া যদি প্রশাসনিক কোনো চ্যালেঞ্জ থাকে আমরা সবাই মিলে সেটা থেকে বেরিয়ে আসার চেষ্টা করবো।

মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে অবস্থিত বাংলাদেশ চা গবেষণা কেন্দ্রের প্রকল্প উন্নয়ন ইউনিটের আয়োজনে রবিবার (১০ নভেম্বর) সকালে প্রকল্প উন্নয়ন ইউনিটের কক্ষে পাঁচদিন ব্যাপী ‘টি টেস্টিং অ্যান্ড কোয়ালিটি কন্ট্রোল’ প্রশিক্ষণ কোর্স-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শেষে গণমাধ্যমকর্মীদের প্রশ্নের উত্তরে এসব কথা বলেন।

প্রকল্প উন্নয়ন ইউনিট কনফারেন্স রুমে অনুষ্ঠিত টি টেস্টিং অ্যান্ড কোয়ালিটি কন্ট্রোল প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে ৫ দিনব্যাপী প্রশিক্ষণের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন বাংলাদেশ চা বোর্ডের চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল শেখ মো. সরওয়ার হোসেন এসইউপি এনডিসি পিএসসি।

প্রকল্প উন্নয়ন ইউনিটের পরিচালক ড. একেএম রফিকুল হক এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ চা বোর্ডের সদস্য (গবেষণা ও উন্নয়ন) ইয়াছমিন পারভীন তিবরীজি, বাংলাদেশ চা গবেষণা ইনস্টিটিউটের পরিচালক ড. মো. ইসমাইল হোসেন, বাংলাদেশীয় চা সংসদের সিলেট ব্রাঞ্চের চেয়ারম্যান জি এম শিবলী। 

উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শেষে চা বোর্ডের চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল শেখ মো. সরওয়ার হোসেন এসইউপি এনডিসি পিএসসি 'ভ্যালু এডেড চা প্রদর্শনী' ঘুরে দেখেন এবং চা আস্বাদন করে সন্তোষ প্রকাশ করেন। 

এসময় তিনি সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে আরও বলেন, কোয়ালিটি চায়ের উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে শঙ্কা দেখা দিয়েছে। চলতি মৌসুমে আমাদের একটু ডিফেসেন্সি যাবে। অধিকাংশ বাগানে অক্টোবর পর্যন্ত গত বছরের চেয়ে কিছুটা বেশি উৎপাদন হলেও এবার আমরা উৎপাদন টার্গেটে পূরণ নিয়ে শঙ্কায় রয়েছি। 

ন্যাশনাল চা কোম্পানির বাগানে উৎপাদন বন্ধের ব্যাপারে তিনি বলেন, ওই চা বাগান (এনটিসি) সরাসরি টি বোর্ডের অধীনে না। এ ব্যাপারে মন্ত্রনালয় ও এনটিসি আলাদা মিটিং হচ্ছে। কিভাবে এই রুগ্নদশা থেকে উৎপাদনে ফিরিয়ে আনা যায়। আমরাও এটাতে যুক্ত হচ্ছি। সবাই মিলেই চেষ্টা করছি যাতে করে এনটিসির যে চ্যালেঞ্জ সেটা থেকে বেরিয়ে আসতে পারে।

শুধু বাগানে পাতা নষ্ট হচ্ছে সেটা না, অনেক চা গুদামে আছে সেটাও একটা ইস্যু, অনেক শ্রমিক রয়েছে যারা কাজ করতে পারছে না এবং অনেক পাতা বাগানে পড়ে আছে সেগুলো উৎপাদন করতে পারছে না। সবদিক থেকেই চেষ্টা করা হচ্ছে উত্তোরণের জন্য। সরকারের পক্ষ থেকে স্বদিচ্ছার কোনো অভাব নেই। ওই বাগানের আগের এমডি এবং চেয়ারম্যান নেই। বর্তমান সরকারের পক্ষ থেকে একজন এমডি, একজন চেয়ারম্যানকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। মন্ত্রনালয় থেকে চার থেকে পাঁচজন বোর্ড অব ডাইরেক্টর নিয়োগ করা হয়েছে। সবাই মিলে চেষ্টা করা হচ্ছে। আমার বিশ্বাস দ্রুততম সময়ের মধ্যেই এই সমস্যা থেকে সমাধানের দিকে যেতে পারব।

অবৈধ পথে নিম্নমানের চা আমদানি এবং দেশীয় চা বিদেশে রফতানির ব্যাপারে চা বোর্ডের চেয়ারম্যান বলেন, টি বোডের্র পক্ষ থেকে আমরা মনিটরিং আরো জোড়দার করব। উত্তরবঙ্গে আমাদের মনিটরিং আরো বাড়বে। যাতে করে আমরা কোয়ালিটি আরো ধরে রাখতে পারি। আমরা যতই পরিকল্পনা করি না কেন যদি কোয়ালিটি চা উৎপাদন করতে না পারি তাহলে রফতানি করা সম্ভব না। আমরা সবার সাথে কথা বলছি, কোয়ালিটি চা উৎপাদনের জন্য। এজন্য ডিপ্লমেটিক চ্যানেলে আমাদের যোগাযোগ বাড়ানোর পাশাপাশি কোয়ালিটি উন্নত করতে হবে।

চোরাইপথে যেসব চা পাশের দেশ থেকে আসছে তা রোধ করার জন্য আমরা বিজিবিকে অনুরোধ করব। যাতে করে বর্ডার মনিটরিং তারা বাড়িয়ে দেয়। বিশেষ করে যেসব এলাকা দিয়ে নিম্নমানের চা অবৈধভাবে নিয়ে আসে সেসব বর্ডারে যেন তারা নজরদারি আরো বাড়িয়ে দেন।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শেষে চা বোর্ডের চেয়ারম্যান বিটিআরইর ভ্যালু অ্যাডেড চা প্রদর্শন ঘুরে দেখেন। ভ্যালু এডেড চা প্রদর্শনীতে ইম্পেরিয়াল জেসমিন টি, প্রিমিয়ার ব্লাক টি, অর্থোডক্স টি, ওলং টি, গ্রিন টি, হোয়াইট টি, মাসালা টি, অ্যালোভেরা এণ্ড পাইনআপেল টি, চায়না লিচি টি, তুলসি টি, ইয়োলো টি, রোজ টি, জিঞ্জার টি, আর্ল গ্রে টিসক ১২ রকমের কোয়ালিটি চা প্রদর্শন করা হয়।

এদিকে পাঁচদিন ব্যাপী এই ‘টি টেস্টিং অ্যান্ড কোয়ালিটি কন্ট্রোল’ প্রশিক্ষণ কর্মশালা উদ্বোধনী দিনে দেশের ৮০ থেকে ৯০ টি চা বাগানের প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া ঢাকা, ময়মনসিংহ,  সিলেট, চট্টগ্রাম, ঝিনাইদহ, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জসহ বিভিন্ন জেলার ২৮ জন প্রশিক্ষনার্থী অংশগ্রহণ করেন। 

প্রকাশক : কাজী জসিম উদ্দিন   |   সম্পাদক : ওয়াহিদুজ্জামান

© Deshchitro 2024