লালন ফকির কারো মতে একজন আধ্যাত্মিক বাউল সাধক। কারো মতে, মানবতার অন্তরালে সর্বেশ্বরবাদী সুফি সাধক, সমাজ সংস্কারক, দার্শনিক। লালন অসংখ্য অসাধারণ গানের সম্রাট সুরকার ও গায়ক ছিলেন। লালনকে বাউল গানের অগ্রদূত বলা যায়। তাঁর গানের মাধ্যমেই উনিশ শতকে বাউল গান জনপ্রিয়তা পেয়েছিল। তাকে বাউল গানের সম্রাট হিসেরে গণ্য করা হয়ে থাকে। তারই ধারাবাহিকতায় প্রতি বছরের ন্যায় এবারও নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার মধ্য নরসিংহপুর লালন সাঁই স্মরণে 'সাধুসঙ্গ ও লালন মেলার' আয়োজন করেছে লালন ভক্তরা। তবে এই অনুষ্ঠানকে নাজায়েজ আখ্যা দিয়ে বন্ধ করার হুমকি প্রদান করেন হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় নায়েবে আমীর মাওলানা আব্দুল আউয়াল। তার এই বক্তব্যকে নিন্দা ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক অঙ্গণের লোকজনসহ লালন ভক্তরা। এদিকে, জেলা প্রশাসকের পক্ষ থেকে অনুষ্ঠানের অনুমতি মেলেনি। শুক্রবার সকালে কাশীপুর ইউনিয়নের মধ্য নরসিংহপুর গ্রামে মুক্তিধাম আশ্রম ও লালন একাডেমির প্রতিষ্ঠাতা ফকির শাহ জালাল গণমাধ্যমকে এসব কথা জানান। তবে এদিন বিকেল থেকে সংক্ষিপ্ত পরিসরে ঘরোয়াভাবে দুইদিন ব্যাপি 'সাধুসঙ্গ ও লালন মেলার' কার্যক্রম চলবে। ফকির শাহ জালাল আরও বলেন, প্রতি বছরের মতো এবারও ২২ ও ২৩ নভেম্বর দুই দিনব্যাপী মেলার আয়োজনে ছিল লালন স্মরণে ভক্তিমূলক গান, লালন সম্পর্কে আলোচনা ও খাবার বিতরণ। এখানে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে লালন ভক্তরা এসে জড়ো হয়েছিলেন। তবে প্রশাসনের অনুমতি না মিলায় ও হুমকির মুখে আতংকে ভক্তরা আশ্রম ছেড়েছেন। তিনি বলেন, ‘আমার নিজের জমিতে এই আশ্রম প্রতিষ্ঠা করে গত ১০ বছর ধরে সাধুসঙ্গ ও লালন মেলার আয়োজন করছি। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে লালনভক্তরা এই আয়োজনে আসেন এবং লালনের গান চর্চা করেন। এখানে কোনও ধরনের অসামাজিক কর্মকাণ্ড হয় না। তবে এবার তৌহিদি জনতার ব্যানারে মেলার কার্যক্রম বন্ধের হুমকি দিয়েছেন ডিআইটি মসজিদের খতিব ও হেফাজত নেতা মাওলানা আব্দুল আউয়াল। এমনকি মেলা বন্ধ না করলে সবকিছু ভেঙে ফেলার হুমকি দিয়ে আসছেন। ফোনে ও নানা লোকের মাধ্যমে প্রতিনিয়ত হুমকি দিচ্ছেন। হুমকির মুখে মেলার আগতরা সবাই চলে গেছেন। এই অবস্থায় বেশ আতঙ্কের মধ্যে আছি।’ তিনি আরও বলেন, ‘এই বিষয়টি পুলিশ-প্রশাসনকে জানিয়েছি। প্রতি বছর জেলা প্রশাসকের অনুমতি নিয়ে মেলার কার্যক্রম সম্পন্ন করেছি। তবে এবার হেফাজত নেতার হুমকির পরে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে লালন মেলার কার্যক্রম পরিচালনা করতে অনুমতি দেওয়া হয়নি।’ এর আগে, ১৫ নভেম্বর কাশিপুর ইউনিয়নের মধ্য নরসিংহপুর ঈদগাহ মাঠে ‘তৌহিদি জনতা’ ব্যানারে এক দল লোক নিয়ে হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় নায়েবে আমির মাওলানা আব্দুল আউয়াল লালন মেলা বন্ধের হুমকি দেন। তার সেই হুমকি দেওয়ার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। এ হুমকির তীব্র নিন্দা জানিয়ে নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি জিয়াউল ইসলাম কাজল বলেন, ‘বিভিন্ন সময় ধর্মীয় ইস্যু তুলে তারা বাধা দিয়ে আসছে। এটি অবশ্যই নিন্দনীয় ও অপরাধমূলক কাজ। আর মাওলানা আব্দুল আউয়াল পলাতক গডফাদার শামীম ওসমানের দালাল ছিলেন। তিনি আলোচনায় আসতে সাম্প্রদায়িক উসকানি দিয়ে লালন মেলা বন্ধের হুমকি দিচ্ছেন।’ নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ জাফর সাদিক চৌধুরী বলেন, ‘লালন মেলার অনুমতি দেওয়া হয়নি। আর তৌহিদি জনতার হুমকির বিষয়টি জানা নেই।’
প্রকাশক : কাজী জসিম উদ্দিন   |   সম্পাদক : ওয়াহিদুজ্জামান

© Deshchitro 2024