|
Date: 2024-11-27 23:48:56 |
সম্প্রতি বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক কৃষ্ণভাবনামৃত সংঘ (ইসকন) নিষিদ্ধ করার দাবি উঠেছে বেশ জোরালোভাবে। দেশের বিভিন্ন মহল এই দাবিতে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেছে। একইসঙ্গে নিষিদ্ধের দাবিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, আইন মন্ত্রণালয় ও পুলিশের আইজির কাছে পাঠানো হয়েছে আইনি নোটিশ।
» ইসকন নিষিদ্ধ চেয়ে আইনি নোটিশ
গত সোমবার (২৫ নভেম্বর) বিকেলে রাজধানী ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে এই চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীকে গ্রেফতার করে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা শাখা ডিবি। এ ঘটনার পরদিন মঙ্গলবার (২৬ নভেম্বর) তাকে চট্টগ্রামের আদালতে তোলা হলে ব্যাপক সহিংসতার ঘটনা ঘটে। সেখানে আদালত প্রাঙ্গণে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী সাইফুল ইসলামকে প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যার ঘটনা ঘটে।
ইতোপূর্বে ইসকনের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগের প্রেক্ষিতে নিষিদ্ধের দাবি উঠলেও এবারের ঘটনায় তা বেশ জোরালো হয়েছে। ইসকনকে আন্তর্জাতিক ‘উগ্রপন্থী’ সংগঠন দাবি করে চট্টগ্রামে আইনজীবী হত্যার সঙ্গে সম্পৃক্ততার অভিযোগ এনে ইসকনকে নিষিদ্ধের দাবিতে বুধবার (২৭ নভেম্বর) আইনি নোটিশ পাঠিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী আল মামুন রাসেল। তিনি ১০ আইনজীবীর পক্ষে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, আইন মন্ত্রণালয় ও পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বরাবরে ডাকযোগে এই নোটিশ পাঠান।
» ইসকন কী?
ইসকন (ইন্টারন্যাশনাল সোসাইটি ফর কৃষ্ণ কনশাসনেস) বা আন্তর্জাতিক কৃষ্ণভাবনামৃত সংঘের যাত্রা শুরু হয় ৫৮ বছর আগে। বর্তমানে বিশ্বের প্রায় শতাধিক দেশে ইসকনের অস্তিত্ব থাকলেও অনেক দেশে সংগঠনটি নিষিদ্ধ।
এটির প্রতিষ্ঠাতা অভয়চরণারবিন্দ ভক্তিবেদান্ত স্বামী প্রভুপাদ। যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক সিটিতে ১৯৬৬ সালের ১৩ জুলাই এই সংগঠনের যাত্রা শুরু হয়। ইসকন মূলত বৈষ্ণব ধর্মের একটি অংশ এবং ভগবান কৃষ্ণকে কেন্দ্র করে তাদের ধর্মীয় ও আধ্যাত্মিক কার্যক্রম পরিচালিত হয়। ভক্তিযোগ বা কৃষ্ণভাবনামৃত সংস্কৃতি হাজার বছরের ধরে শুধুমাত্র ভারতবর্ষের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল। তবে সময়ের ব্যবধানে বিশ্বের বহু দেশে সম্প্রসারণ ঘটেছে সংগঠনটির।
» ইসকনের কাজ কী?
ইসকনের প্রধান কার্যক্রমের মধ্যে রয়েছে মন্দির নির্মাণ, ধর্মীয় উপদেশ দেওয়া, শ্রীমদ্ভগবদগীতা প্রচার, ভক্তি কার্যক্রম এবং দাতব্য সংস্থা পরিচালনা। মন্দির রক্ষণাবেক্ষণ এবং আধ্যাত্মিক অনুশীলনও করে থাকে ইসকন। সংস্কৃতি চর্চার অংশ হিসেবে যোগব্যায়াম এবং জীবনযাত্রার ওপর শিক্ষামূলক প্রোগ্রাম করে থাকে সংগঠনটি। অভাবীদের বিনামূল্যে নিরামিষ খাবারও বিতরণ করে থাকে ইসকন।
» যেসব দেশে নিষিদ্ধ
চীনে ইসকনের কার্যক্রমের অনুমতি নেই। মালয়েশিয়ায়ও নিষিদ্ধ ইসকন। দেশটিতে ইসকনের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে ধর্মান্তরকরণের অভিযোগ আছে। শিয়াশাসিত ইরানে ইসকনের ক্রিয়াকলাপের অনুমতি নেই। এছাড়া সৌদি আরব ও আফগানিস্তানে ইসকনের কর্মকাণ্ডের অনুমতি নেই।
এছাড়া কিছু দেশে এই সংগঠনকে আংশিক নিষিদ্ধ করা হয়েছে। ওইসব দেশের মধ্যে রয়েছে ইন্দোনেশিয়া। সেখানে কিছু শর্ত মেনে কার্যক্রম চালাতে পারে সংগঠনটি। এ ছাড়াও তাজিকিস্তান, উজবেকিস্তান, কাজাখস্তান এবং তুর্কমেনিস্তানে ইসকনের কার্যক্রমের ওপর কঠোর নজরদারি জারি রয়েছে।
সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নে ১৯৭০ এবং ১৯৮০-এর দশকে ইসকনকে নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। তবে ১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর ইসকন রাশিয়া এবং অন্যান্য প্রাক্তন সোভিয়েত রাজ্যে কাজ করতে সক্ষম হয়।
» যে কারণে উঠেছে ইসকন নিষিদ্ধের দাবি
চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারী বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র ও চট্টগ্রামের হাটহাজারীর পুণ্ডরীক ধামের অধ্যক্ষ। তার নেতৃত্বে চট্টগ্রাম ও রংপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় সনাতনী ধর্মাবলম্বীদের ৮ দফা দাবি নিয়ে বেশ কয়েকটি সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। গত ৩০ অক্টোবর চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীসহ ১৯ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের হয়। চট্টগ্রাম নগরীর কোতোয়ালি থানায় মো. ফিরোজ খান নামে এক ব্যক্তি বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেন। জাতীয় পতাকার অবমাননার অভিযোগে রাষ্ট্রদ্রোহ আইনে এ মামলা হয়।
© Deshchitro 2024