নৌ মন্ত্রণালয়ের অধীনে নদীর নাব্যতা ফিরিয়ে আনতে সরকারের কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে যে কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে, এর সুবাদে এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে অর্থ উপার্জনে মেতে উঠেছে দিনাজপুরের কিছু অসাধু চক্র। যেন বালি ও মাটি বিক্রয়ের মহোসব চলছে দিনাজপুরে। দিনাজপুরের কাহারোল, বিরল ও দিনাজপুর সদরের কর্নাই শ্মশানঘাট-নশিপুর ব্রীজ সংলগ্ন উত্তরের মহিষখালা ঘাটের কৃষি জমি কেটে আবাদী জমি বিনষ্ট ও নদীর খননকৃত উত্তোলিত বালি বিক্রয় করে হাতিয়ে নিচ্ছে লক্ষ লক্ষ টাকা। প্রশাসনকে একাধিকবার অবগত করেও প্রতিকার পাচ্ছেনা মর্মে অভিযোগ করেন বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ, দিনাজপুর শহর শাখার সহ-সভাপতি ও বালির লীজ গ্রহীতা মোঃ রেজাউল করিম রাখি।

গত ২২ নভেম্বর সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় যে, পূর্ণভবা নদীর ধার ঘেঁষে জমির মাটি কেটে নিয়ে গিয়ে বিক্রয় করছে এমএমবি নামক ইটভাটায় এবং বিনষ্ট করছে কৃষি জমি। ফলে একদিকে যেমন বিনষ্ট হচ্ছে কৃষি জমি, তেমনি অন্যদিকে রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার।

গত ২৪ নভেম্বর সরেজমিনে গিয়ে আবারও দেখা যায় যে, নশিপুর এলাকার কতিপয় অসাধু ব্যক্তি নিজের স্বার্থকে চরিতার্থ করার জন্য নদীর উত্তোলিত বালি অবৈধভাবে এক্সেভেটর লাগিয়ে ট্রলির পর ট্রলি নিয়ে গিয়ে বিক্রয় করছে এবং লোকসান করছে সরকারের কোটি কোটি টাকা। অথচ এই উত্তোলিত বালি ইজারার মাধ্যমে বিক্রয় হলে সরকারের রাজস্ব খাতে যেত কোটি কোটি টাকা। এমনিতেই দেশের চলমান পরিস্থিতি মোকাবেলায় চরম বেগ পেতে হচ্ছে সরকারকে। অথচ সেদিকে ভ্রæক্ষেপ নেই কারো। সরকারের স্ব স্ব দপ্তরে নিয়োজিত কর্মকর্তারা যদি একটু সচেতনতার বহিঃপ্রকাশ ঘটায় তাহলে সরকারের রাজস্ব খাতের পাশাপাশি জেলা-উপজেলার সামগ্রিক উন্নয়ন অনেকাংশে বৃদ্ধি পেত বলে মন্তব্য করেন একাধিক সচেতন ব্যক্তি।

এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে দিনাজপুর সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তার সাথে মুঠোফোনে কথা বললে তিনি জানান, “পূর্ণভবা নদীর যে অংশ থেকে বালি উত্তোলিত হচ্ছে, তার সীমানা কাহারোলে। অতএব এই বিষয়টির প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের দায়িত্ব কাহারোল উপজেলার।পানি উন্নয়ন বোর্ড, দিনাজপুর কার্যালয় এর নির্বাহী প্রকৌশলীকে মুঠোফোনে কল দিলে তিনি ব্যস্ত থাকায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মোঃ শরিফুল ইসলাম এর সাথে কথা বললে তিনি প্রতিনিধিকে জানান যে, “অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে উক্ত কাজের সাথে সম্পৃক্ত চক্রের দৌরাত্ম এতটাই বেশি যে ইতিপূর্বে আমাদের পানি উন্নয়ন বোর্ডের এক কর্মকর্তা সরেজমিনে গেলে তার সাথেও খারাপ আচরণ করে।তবে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য তিনি প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরে চিঠি ইস্যু করার কথা জানান।

উল্লেখ্য যে, দিনাজপুর সদরের পূর্ণভবা নদীর কর্ণাই থেকে কান্তনগর পর্যন্ত কোন ঘাটেরই নদীর খননকৃত উত্তোলিত বালির ইজারা হয়নি মর্মে জানা যায়। তদুপরি নশিপুর ও কর্ণাই এলাকার আলমগীর, বাবু, নাজমুল সহ একাধিক ব্যক্তি দিনের পর দিন সরকারের উত্তোলিত নদীর বালি ও লীজের নামে আবাদী জমির মাটি কেটে বিক্রয় করে দীর্ঘদিন ধরে নিজেদের রাজত্ব কায়েম করে আসছে মর্মে একাধিক অভিযোগ সূত্রে জানা যায়।

প্রকাশক : কাজী জসিম উদ্দিন   |   সম্পাদক : ওয়াহিদুজ্জামান

© Deshchitro 2024