ছবি- বাবার কবরের পাশে তাসকিয়া। 

এই অবুঝ শিশুটি এখনো জানে না, তার জীবন থেকে কী হারিয়ে গেছে। তার বাবা, এডভোকেট সাইফুল ইসলাম আলিফ, যে আর কোনোদিনও ঘরে ফিরবেন না—এই নির্মম সত্য তাকে এখনও কেউ বোঝাতে পারেনি। এই শিশু এখনো আশায় বুক বেঁধে আছে, ভাবছে, বাবা একদিন ফিরে আসবেন, তাকে কোলে তুলে আদর করবেন। কিন্তু নির্মম বাস্তবতা তাকে এতিম করে গেছে।

এই শিশুটির জন্য সময় থমকে গেছে। সে জানে না, তার বাবা শহর থেকে বাড়ি ফিরতে গিয়ে কেন এমন দূরত্বে চলে গেলেন, যেখান থেকে আর কোনো ফেরার পথ নেই। তাকে এখনো কেউ বোঝাতে পারেনি, বাবা আর ফিরে আসবেন না। সে জানে না, তার বাবা যখন আদর করে তাকে বুকে টেনে নিতেন, সেই মুহূর্তগুলো কেবল স্মৃতি হয়ে গেছে। সে অপেক্ষা করছে, কিন্তু এই অপেক্ষার শেষ নেই।

সময়ের নির্মম পরিহাসে একদিন সে বড় হবে। তখন সে বুঝবে, বাবা মানে কী। বুঝবে, বাবার আদর কেমন, বাবার ছায়া কেমন নিরাপদ। কিন্তু বাবাহীন এই পৃথিবী কতটা নিষ্ঠুর, তা হয়তো তখন তার প্রতিটি মুহূর্তে তাকে শিখতে হবে। সে তখন বাবাকে ডাকতে চাইবে, কিন্তু তার ডাক শূন্যে মিলিয়ে যাবে। 

অ্যাড. সাইফুলের  নির্মম মৃত্যুর  প্রয়াণ শুধু তার পরিবারের জন্য নয়, সমাজ ও রাষ্টের  জন্যও এক ভয়ংকর ক্ষতি। 

এটাই সবচেয়ে বেদনাদায়ক। বাবার স্নেহ, ভালোবাসা, এবং সেই নির্ভরতার হাতছানি ছাড়া একটি শিশুর শৈশব যে কতটা শূন্যতায় ভরা, তা বোঝা যায় এই নিষ্পাপ মুখের দিকে তাকালে।

কিছুদিন আগে চট্টগ্রাম আদালতের সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর নিযুক্ত হওয়া আইনজীবী আলিফ ছিলেন সাত ভাইবোনের মধ্যে চতুর্থ। পেশার তাগিদে তিনি থাকতেন বন্দরনগরীতে। মেয়ে আর স্ত্রী থাকতেন চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলা সদরের দরবেশহাটের টেন্ডল পাড়ার বাড়িতে, বাবা-মায়ের সঙ্গে। সারা সপ্তাহের কর্মব্যস্ততা শেষে বৃহস্পতিবার বিকেলেই আলিফ ছুঁটতেন মেয়ের কাছে। দুদিন পরিবারের সঙ্গে কাটিয়ে আবার ফিরতেন শহরে

উল্লেখ্য, গত ২৬ নভেম্বর২০২৪ বিকেল সাড়ে তিনটার দিকে  ইসকন নেতা চিন্ময়ের মুক্তির দাবিতে তার অনুসারীরা চট্রগ্রাম আদালত চত্বরে  অ্যাডভোকেট সাইফুল ইসলাম আলিফকে কুপিয়ে হত্যা করে। বুধবার (২৭ নভেম্বর ২০২৪) বিকেল ৫টার দিকে লোহাগাড়া উপজেলার চুনতি ইউনিয়নের ফারেঙ্গা গ্রামের চতুর্থ দফা জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়।


 

প্রকাশক : কাজী জসিম উদ্দিন   |   সম্পাদক : ওয়াহিদুজ্জামান

© Deshchitro 2024