সাতক্ষীরার কালিগঞ্জ উপজেলার সাদপুর দাখিল মাদ্রাসার সুপার ও কুশুলিয়া ইউনিয়ন জামায়াতের সাধারণ সম্পাদক আশরাফুল ইসলামকে ২০১৪ সালের ৭ মে মধ্যরাতে নির্যাতনের পর চোখে কালো কাপড় বেঁধে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে ভদ্রখালি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের মাঠে গুলি করে হত্যার অভিযোগে তৎকালিন পুলিশ সুপার মঞ্জুরুল কবীর, সদর সার্কেলের সহকারি পুলিশ সুপার কাজী মনিরুজ্জামানসহ ৪৪ জনের নাম উল্লেখ করে আদালতে মামলা দায়ের করা হয়েছে।


নিহতের শ্বশুর উপজেলার মুকুন্দ মধুসুধনপুর গ্রামের মৃত জনাব আলীর ছেলে আব্দুল আজিজ বাদি হয়ে বৃহষ্পতিবার সাতক্ষীরার ২নং আমলী আদালতে এ মামলা দায়ের করেন। রবিবার (০১ ডিসেম্বর) শুনানী শেষে বিচারক সুজাতা আমিন এব্যাপারে ইতিপূর্বে কালিগঞ্জ থানায় মামলা হয়েছিল কিনা তা জানাতে আগামি ১২ ডিসেম্বরের মধ্যে আদালতে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন।


নিহত আশরাফুল ইসলাম কালিগঞ্জ উপজেলার ঠেকরা গ্রামের মৃত আহম্মদ আলী ওরফে আদমের ছেলে।


মামলার অন্যতম আসামীরা হলেন, তৎকালিন কালিগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা গোলাম রহমান, কালিগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাদপুর দাখিল মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটির সভাপতি এনামুল হোসেন ছোট, আওয়ামী লীগ নেতা অ্যাড. মোজাহার হোসেন কান্টু, ধলবাড়িয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি সজল মুখার্জী, বাজারগ্রাম রহিমপুরের কলেজ শিক্ষক তমিজউদ্দিনের ছেলে ও উপজেলা স্বেচ্ছাসেবকলীগের তৎকালিন সভাপতি তানভির আহম্মেদ উজ্জ্বল, উপজেলা যুবলীগের সভাপতি নাজমুল আহসান, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক শ্রীকলা গ্রামের ডিএম সিরাজুল ইসলাম, নলতা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আনিছুজ্জামান খোকন, যুবলীগ নেতা নলতার সাইফুল ইসলাম টুটুল ও শ্যামনগরের ভুরুলিয়া ইউপি চেয়ারম্যান একেএম জাফরুল আলম বাবু।


মামলার বিবরণে জানা যায়, ২০১৪ সালে রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে কালিগঞ্জ উপজেলার সাদপুর দাখিল মাদ্রাসার সুপার ও কুশুলিয়া ইউনিয়ন জামায়াতের সাধারণ সম্পাদক আশরাফুল ইসলাম দীর্ঘদিন আত্মগোপানে ছিলেন। মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও আওয়ামী লীগ নেতা এনামুল হোসেন ছোট এর পরামর্শে ২০১৪ সালের ৭ মে আশরাফুল বাড়িতে ফিরে আসেন।


এরপর থেকে ১১ থেকে ৪৪ নং আসামীরা আশরাফুলের উপর নজরদারি করতে থাকে। এক থেকে ১০ নং আসামীর সহযোগিতায় ১১ থেকে ৪৪ নং আসামীরা এলাকায় চাঁদাবাজি ও দখলবাজিসহ ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে। ২০১৪ সালের ৭ মে দিবাগত রাত ১২টা ২০ মিনিটে মটর সাইকেলে ও পুলিশ ভ্যানে করে ১০ থেকে ২০ নং আসামীরা ভিকটিম আশরাফুলের বাড়ির ফটক ভেঙে ঘরে ঢোকে।


এ সময় আসামী এনামুল হোসেন ছোট বাদির উপস্থিতিতে ভিকটিমকে ঘুষি মারে। পরে তার ঘাড় ধরে ঘরের বাইরে নিয়ে আসে। ১০ থেকে ২০ নং আসামীরা ভিকটিমকে এলোপাতাড়ি কিল, চড় ও ঘুষি মারে। চার নং আসামী উপপরিদর্শক নয়ন চৌধুরী ভিকটিমের দুই চোখ কালো কাপড় দিয়ে বেঁধে ফেলে।


এরপর সকল আসামী তাকে মারপিট করে ভদ্রখালি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের মাঠে নিয়ে আসে। ১নং আসামী সকল আসামীদের উদ্দেশ্যে বলে যে, আশরাফুলের লাশ দেখতে চাই। মৃত্যুর জন্য তৈরি হও। আশরাফুল নিজের সন্তানদের মুখের দিকে চেয়ে মঞ্জুরুল কবীরের পায়ে ধরে বাঁচার জন্য আকুতি জানায়।


একপর্যায়ে ২০১৪ সালের ৭ মে দিবাগত রাত ১২টা ২৫ মিনিট থেকে ১২টা ৫০ মিনিটের মধ্যে আসামী মঞ্জুরুল কবীরের নির্দেশে আসামী কাজী মনিরুজ্জামান ও গোলাম রহমান ভিকটিম আশরাফুল ইসলামের বুকে আগ্নেয়অস্ত্র দিয়ে বুকে দুটি গুলি করে। ভিকটিম মাটিতে লুটিয়ে পড়লে মৃত অবস্থায় তাকে পুলিশ ভ্যানের পিছনে করে কালিগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। পরদিন বিকেলে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালের মর্গে ময়না তদন্ত শেষে আশরাফুলের লাশ পরিবারের সদস্যদের কাছে হস্তান্তর করা হয়।


ঘটনাটি ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে পুলিশ ভিকটিম আশরাফুলসহ কয়েকজনকে আসামী করে ২০১৪ সালের ৭ মে কালিগঞ্জ থানায় হত্যার চেষ্টা, সরকারি কাজে বাঁধাসহ ১৯০৮ সালের বিষ্ফোরক দ্রব্য আইনের ৩(ক)/৪ ধারায় জিআর-৯৫/১৪ নং মামলা দায়ের করে। ওই বছরের ১৬ নভেম্বর পুলিশ আদালতে চুড়ান্ত প্রতিবেদন(৫৩ক)) দাখিল করে।


মামলার বিবরণে আরো জানা যায়, তৎকালিন রাজনৈতিক পরিস্থিতি মামলা করার জন্য অনুকুলে না থাকায় বর্তমানে পরিস্থিতি অনুকুল হওয়ায় এ মামলা দায়ের করা হলো।


এ ব্যাপারে মামলার আর্জিতে উল্লেখিত বাদি আব্দুল আজিজের মুঠোফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলে ওই নম্বারটি আর ব্যবহার করা হচ্ছে না বলে জানা যায়।


সাতক্ষীরা জজ কোর্টের অতিরিক্ত পিপি অ্যাড. সিরাজুল ইসলাম মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

প্রকাশক : কাজী জসিম উদ্দিন   |   সম্পাদক : ওয়াহিদুজ্জামান

© Deshchitro 2024