যন্ত্রসংগীত চর্চার প্রতি আগ্রহ বাড়ানো এবং সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের বিকাশ ঘটানোর লক্ষ্যে বিভাগীয় শহর রাজশাহীতে অনুষ্ঠিত হয়েছে ‘যন্ত্রসংগীত উৎসব’। বাংলাদেশ শিল্পকলা অ্যাকাডেমির সংগীত, নৃত্য ও আবৃত্তি বিভাগের উদ্যোগে ও জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় এ উৎসবের আয়োজন করা হয়।


শনিবার (৭ ডিসেম্বর)সন্ধ্যায় রাজশাহীর লালন শাহ মুক্তমঞ্চে এই যন্ত্রসংগীত উৎসবের উদ্বোধন করেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শহীদ আলী রায়হানের বাবা মুসলেম উদ্দিন।


উদ্বোধনী পর্বে বিশেষ অতিথি ছিলেন শিল্পকলা একাডেমির সংগীত, নৃত্য ও আবৃত্তি বিভাগের পরিচালক মেহজাবীন রহমান। তিনি বলেন, ‘‘আমাদের তরুণ প্রজন্ম নতুন বাংলাদেশ এনে দিয়েছে। এই বাংলাদেশ হতে হবে বৈষম্যহীন। ওপরতলায় বসে কেউ নিচতলাকে শাসন করবে তা হবে না। আর কোনো সরকার যেন ফ্যাসিস্ট হয়ে উঠতে না পারে, সেটা আমাদের দেখতে হবে।’’ তিনি বলেন, ‘‘আমরা শিল্পকলা একাডেমির পক্ষ থেকে জনবান্ধব সাংস্কৃতিক পরিবেশ তৈরি করতে চাই। এ জন্য বিভাগীয় পর্যায়ে যন্ত্রসংগীত উৎসবের আয়োজন করেছি। এরপর আমরা জেলায় জেলায় যাব। প্রত্যন্ত গ্রামে যাব, নদী পার হয়ে যাব। আমাদের প্রান্তিক শিল্পীরাও যে কতটা দক্ষ তা তাদের কাছে গিয়ে নিজের চোখে না দেখলে বিশ্বাস করা কঠিন।’’


অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) টুকটুক তালুকদার। তিনি বলেন, ‘‘আমাদের তরুণ প্রজন্ম যে কতটা সাহসী, দুর্বার ও দুর্দান্ত তা আমরা দেখেছি। তারা যেন আমাদের সংস্কৃতিকে অনুভব করতে পারে, সে জন্য এই আয়োজন। শিল্পকলা একাডেমি দেশব্যাপী এমন আয়োজন করেছে বলে তারা ধন্যবাদ পাওয়ার যোগ্য।’’


অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন জেলা কালচারাল অফিসার শাহাদৎ হোসেন। অনুষ্ঠানের শুরুতেই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শহীদদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।


উদ্বোধনী ও আলোচনা পর্ব শেষে হাওয়াইন গিটারে দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের ‘ধন-ধান্যে পুষ্পে ভরা…’ গানের সুর উঠল। রাজশাহীর মাহফিজুর রহমানের হাওয়াইন গিটারের এই গভীর সুর দর্শক-স্রোতাদের ভাসিয়ে নিয়ে গেল আবেগী স্রোতে। তারপর রাজশাহীর আবদুল মান্নান তাঁর দল নিয়ে এলেন দোতারার সুর।

মনোমুগ্ধকর এ উৎসবের পরিবেশনায় ছিল ধুন, রাগ যন্ত্রে সংগীত, বেঞ্জু, পিয়ানো, বাঁশি, তবলার লহড়া, বাংলার ঢোল, সরোদ, কর্নেট, পাখোয়াজ ও অনান্য যন্ত্রসঙ্গীত।


এরপর পর্যায়ক্রমে জয়পুরহাটের মো. রাকিবুলের বেঞ্জু, চাঁপাইনবাবগঞ্জের রমজান আলীর বাঁশি, রাজশাহীর জিল্লুর রহমানের সরোদ, আহনাফ মুনতাসিরের পিয়ানো, ড. দীনবন্ধু পালের পাখোয়াজ, মীর শাহরিয়ার সুলতানের বেহালা, নওগাঁর শুভ সরকারের বাংলা ঢোল বিমোহিত করল সবাইকে। একক ও সমবেত পরিবেশনার সুরের ঝংকার নীরবতা এনে দর্শকদের মাঝে। দেশের সাত বিভাগেই এ উৎসব আয়োজন করা হচ্ছে। পঞ্চম আসর হিসেবে শনিবার রাজশাহী বিভাগীয় পর্যায়ের এই উৎসবের আয়োজন করা হয়।

প্রকাশক : কাজী জসিম উদ্দিন   |   সম্পাদক : ওয়াহিদুজ্জামান

© Deshchitro 2024