
নির্মাণের ১৬ বছর পার হলেও এখনও চালু হয়নি ঝিনাইদহ ওরাল স্যালাইন ফ্যাক্টরি। ফলে অযত্ন-অবহেলায় নষ্ট হচ্ছে অবকাঠামো ও যন্ত্রাংশসহ আসবাবপত্র। ঝোপঝাড়ে ছেয়ে গেছে ফ্যাক্টরি এলাকা। ফ্যাক্টরিটি চালু হলে একদিকে যেমন কর্মসংস্থানের সুযোগ হতো, অন্যদিকে খাবার স্যালাইনের সুবিধা পেত কয়েক জেলার মানুষ।
তবে স্বাস্থ্য বিভাগ বলছে, বারবার চেষ্টা করেও তারা সফল হয়নি। চালু করতে আবারো কাজ করবেন তারা। তবে রাজনৈতিক কারণে চালু হয়নি বলে অভিযোগ রয়েছে।
স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, জেলা শহরের মদনমোহন পাড়ায় ১০ শতাংশ জমিতে দুই তলাবিশিষ্ট এই ভবনটি নির্মাণ করা হয়। ২০০৫ সালের ২২ অক্টোবর এর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন ঝিনাইদহ-২ আসনের সাবেক এমপি ও জেলা বিএনপির তৎকালীন সভাপতি মসিউর রহমানসহ তখনকার স্বাস্থ্যমন্ত্রী।
২০০৮ সালের ২১ আগস্ট শেষ হয় দ্বিতল ভবনের নির্মাণকাজ। এতে ব্যয় হয় ৯৮ লাখ ৩৪ হাজার ১৮৯ টাকা। দীর্ঘদিন পড়ে থাকার পর ২০১২ সালের ২৩ আগস্ট স্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগ প্রতিষ্ঠানটি জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের কাছে হস্তান্তর করে।
২০১৩ সালের ৮ অক্টোবর ঝিনাইদহ সফরকালে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কারখানাটি ভার্চুয়ালি উদ্বোধন করেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর প্রতিষ্ঠানটি চালুর বিষয়ে সরকারের খাবার স্যালাইন উৎপাদন ও সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে দফায় দফায় জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের পক্ষ থেকে পত্র পাঠানো হলেও চালুর উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।
ফলে অবহেলায় পড়ে থাকে প্রতিষ্ঠানটি। এ স্যালাইন ফ্যাক্টরি নির্মাণের উদ্দেশ্য ছিল, উৎপাদিত স্যালাইন ঝিনাইদহ ও আশপাশের জেলায় সরকারি হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলোতে সরবরাহ করা। এতে দরিদ্র মানুষ উপকৃত হতো। তবে তা এখন পর্যন্ত চালুই হয়নি।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, ভবনের চারপাশে ভরে গেছে ঝোঁপঝাড়ে, বিভিন্ন কক্ষে সৃষ্টি হয়েছে ময়লা-আর্বজনার স্তুপ। ভেঙে পড়ছে দরজা-জানালা। ফাটল দেখা দিয়েছে ভবনের দেওয়ালে। এমনকি উদ্বোধনী কোনো ফলক নেই। বিভিন্ন কক্ষ ও সিঁড়িতে জমেছে ময়লা। বিড়ি-সিগারেটের অংশও পাওয়া গেছে।
স্থানীয় রাশেদুল ইসলাম বলেন, ‘এত বছরেও জানি না এখানে কোনো স্যালাইন ফ্যাক্টরি আছে। কোনোদিন কার্যত্রম চোখে পড়েনি। তাই বিষয়টি সম্পর্কে জানা নেই।’
জাহাঙ্গীর হোসেন নামের একজন বলেন, ‘কারখানাটি চালু না হওয়ায় আজ পর্যন্ত এখানে কারো কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হয়নি। এভাবে বন্ধ পড়ে আছে। কারখানাটি চালু হলে ঝিনাইদহসহ আশপাশের মানুষ স্যালাইন সংকট থেকে মুক্তি পেত।’
রুবেল নামে আরেকজন বলেন, ‘কারখানাটি বন্ধ পড়ে থাকার কারণে এখানে নিয়মিত মাদকের আড্ডা বসে।’
এদিকে, অভিযোগ রয়েছে, বিএনপি সরকার নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়ায় রাজনৈতিক কারণে প্রতিষ্ঠানটি চালুর আগ্রহ দেখায়নি আওয়ামী লীগ সরকার।
বিএনপির সাবেক এমপি প্রয়াত মসিউর রহমানের ছেলে ডা. ইব্রাহিম রহমান বাবু বলেন, ‘শুধু রাজনৈতিক কারণে কারখানাটি চালু হয়নি। রাজনৈতিক প্রতিহিংসা, আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় এ ধরনের সরকারি প্রকল্প যেন মুখ থুবড়ে না পড়ে, সেদিকে দৃষ্টি রাখতে সংশ্লিষ্ট দপ্তর বা মন্ত্রণালয়ের কাছে অনুরোধ থাকবে। সেই সঙ্গে দ্রুত যেন কারখানাটি চালু করা হয়, সেদিকে কর্তৃপক্ষকে নজর দেওয়ার অনুরোধ জানাচ্ছি।’
জানা গেছে, ঝিনাইদহ জেলায় মাসে ১ লাখ ৪ হাজার ২৩২ প্যাকেট খাবার স্যালাইনের চাহিদা রয়েছে। কারখানাটি চালু হলে জেলার চাহিদা মেটানো সম্ভব হতো বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। পাশাপাশি অন্য জেলায় সরবরাহ করা যেত। অথচ এখন জেলার চাহিদা মেটাতে যশোর থেকে আনতে হচ্ছে। সেখান থেকেও চাহিদা পূরণ না হলে ইডিসিএল থেকে প্রায় ৪ টাকা ৫০ পয়সা দরে প্রতি প্যাকেট স্যালাইন কিনতে হয়। আর এটি হাসপাতালের ওষুধ ক্রয়ের বরাদ্দ থেকে কাটা হচ্ছে।
ঝিনাইদহ সদর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মিথিলা ইসলাম বলেন, ‘অনুমোদন না দেওয়ায় এখনো চালু করা সম্ভব হয়নি কারখানাটি। এ বিষয়ে অনেকবার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করেছি, তবে দৃশ্যমান কোনো কাজ হয়নি। কারখানাটি চালু করতে যোগাযোগ অব্যাহত থাকবে।