মাদকদ্রব্য বলতে এমন বস্তুসমূহকে বুঝায় যেগুলো শরীরে প্রবেশ করলে কিছু স্নায়বিক প্রতিক্রিয়ার উদ্রেক ঘটে এবং বারবার এসব দ্রব্য গ্রহণে আগ্রহ জন্মায়। নেশাদায়ক পদার্থের মধ্যে নিকোটিন, হেরোইন, এলএসডি, কোকেইন প্রভৃতি প্রধান।বাংলাদেশে শহর থেকে প্রত্যন্ত গ্রাম পর্যন্ত গাজা,মদ,হিরোইন,ফেনসিডিল,ইয়াবা,আইস,আফিমসহ বিভিন্ন মাদকদ্রব্য দ্রুত ছড়িয়ে পড়েছে।কৌতুহূলতা,সঙ্গদোষ,হতাশা,বেকারত্ব, অথবা প্রেমে ব্যর্থতা হয়ে তরুণ সমাজ মাদকের সাথে জড়িয়ে পড়ছে। প্রথম অবস্থায় সিগারেট দিয়ে শুরু হলেও ধীরে ধীরে গাজা,হিরোইন, মদ,ফেনসিডিল ও অন্যান্য মাদকের সাথে জড়িয়ে পড়ে। মাদকদ্রব্য গ্রহণের ফলে মানসিক স্বাস্থ্যের ক্ষতি হয়, চাপ সহ্য করার ও সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতাকে ব্যাহত করে, মানসিক পীড়ন বাড়িয়ে দেয়, মস্ত্যিষ্কের স্নায়ুকোষকে ধ্বংস করে, খাদ্যাভ্যাস নষ্ট করে, চোখের দৃষ্টিশক্তি কমিয়ে দেয়, এইচআইভি ও হেপাটাইটিস-বি এর সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়, খাদ্যনালি ও ফুসফুসে ক্যান্সার হয়, কিডনির রোগ হয়, মেজাজ খিটখিটে হয়, খুধা ও রক্তচাপ কমে যায়, শ্বাস-প্রশ্বাসে কষ্ট হয়, নিদ্রাহীনতা দেখা দেয়, আচরনে আক্রমণাত্মক মনোভাব পরিলক্ষিত হয়, হার্টঅ্যাটাক ও স্টক হয়,আত্মহত্যার প্রবণতা বাড়িয়ে দেয় প্রভৃতি হয়ে থাকে। মাদকাসক্ত ব্যক্তির পরিচয় কেউ দিতে চায়না।কারণ, মাদকাসক্তব্যক্তিকে সমাজের সবাই ঘৃণার চোখে দেখে। মাদকাসক্ত ব্যক্তি নেশার টাকা যোগাতে চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই, রাহাজানী, খুন ইত্যাদি করে থাকে। এছাড়াও সকলের সাথে উগ্র আচরন করে থাকে।মাদকাসক্ত ব্যক্তির পরিবার সমাজে তার পরিচয় দিতে লজ্জায় পড়ে যান।মাদকাসক্ত ব্যক্তিরা নারীদের ইভটিজিং,ধর্ষণসহ নানা অপকর্ম করে থাকে। মাদক গ্রহণের ফলে সমাজে অশ্লীলতা বৃদ্ধি পায়। মাদকাসক্ত ব্যক্তিদের জন্য সমাজের মানুষ নিরাপত্তাহীনতায় ভোগে। রাসূল (সাঃ) বলেছেন, প্রত্যেক নেশাদ্রব হারাম। আল্লাহ্ তায়ালার ওয়াদা, যে ব্যক্তি নেশাদ্রব পান করবে আল্লাহ অবশ্যই তাকে 'তিনাতুল খাবাল' খাওয়াবেন। তারা জিঙ্গেস করল, হে আল্লাহর রাসূল 'তিনাতুল খাবাল' কি? তিনি বললেন, জাহান্নামীদের ঘাম অথবা পুজঁ।(সহীহ মুসলিম)। ইসলাম ধর্ম ছাড়াি সকল ধর্মে মাদকদ্রব্য গ্রহণের প্রতি কঠোর বিধিনিষেধ আছে। মাদকাসক্ত প্রতিরোধে জনসচেতনতার পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে কঠোর ভূমিকা পালন করতে হবে।মাদকাসক্ত ব্যক্তিদের মাদকপূনর্বাসন কেন্দ্রে রেখে সুস্থ করে প্রশিক্ষণ দিয়ে দক্ষ জনশক্তিতে রুপান্তর করতে হবে।মাদকাসক্ত ব্যক্তিদের আদালত থেকে জামিন দেয়ার পূর্বে মাদকপূনর্বাসন কেন্দ্র থেকে সুস্থ করার ব্যবস্থা করতে হবে।মাদকব্যবসায়ীদের কঠোর হস্তে দমন করতে হবে।সকল চাকরিতে ডোপ টেষ্ট করা বাধ্যতামূলক করতে হবে।সরকারি চাকুরিজীবি সকলের প্রতিমাসে ডোপ টেষ্ট বাধ্যতামূলক করা উচিত।

লেখক মো: মাহিন ভূঁইয়া
সমাজবিজ্ঞান বিভাগ
ঢাকা কলেজ।
প্রকাশক : কাজী জসিম উদ্দিন   |   সম্পাদক : ওয়াহিদুজ্জামান

© Deshchitro 2024