◾ইমরান ফয়সাল : প্রবাদে আছে, "একতাই বল।" আবার বলা হয়েছে,"দশে মিলে করি কাজ হারি জীতি নাহি লাজ।" আবার কোথাও বলা হয়েছে "দশের লাঠি একের বোঝা।" অনেক প্রবাদ থেকেই আমরা একতা থাকার গুরুত্ব অনুধাবন করতে পারি। বাঙালি সমাজের দিকে একটু দৃষ্টি দিলে দেখতে পাই। বাঙালি সমাজে রয়েছে একান্নবর্তী পরিবার, যে পরিবার দলবদ্ধভাবে চলার শিক্ষা দেয়। তারা সুসময়ে যেমন একে অপরের পাশে থাকে, তেমনি দুঃসময়তেও তাদের সাহায্যার্থে এগিয়ে আসে দলবদ্ধভাবে।
আবার বাঙালিদের একটি সহজাত বৈশিষ্ট্য হলো তারা কারো কাছে সহজে মাথা নত করে না। তারা বলতে গেলে এক কথায় প্রতিবাদমুখী মানুষ। তাদের মাঝে কোনো বৈষম্য পরিলক্ষিত হলে তারা তখন প্রতিবাদে মুখর হয়ে ওঠে। একসাথে সবাই ঝাঁপিয়ে পড়ে দেশ থেকে বৈষম্য দূর করতে। ঠিক তারই দৃষ্টান্ত রেখে গেছেন শহীদ তিতুমীরের মতো ইতিহাসের মহান নায়কেরা। এভাবে বাংলাদেশের ভূখণ্ডে বৈষম্য দূর করতে ও নিজেদের অধিকার আদায় করে নিতে অনেক আন্দোলন হয়েছে। যেটি আমাদেরকে ঐক্যের বার্তা দেয়। সম্প্রতি সময়ে চব্বিশ এর আন্দোলনে আমাদের একতা চব্বিশের স্বৈরাচার পতনের পেছনে বিরাট ভূমিকা পালন করেছে।
কিন্তু ঐক্য থাকা দেশটা বর্তমানে অনেক বিশৃঙ্খলা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। বিশেষ করে সম্প্রতি সময়ে কিছু বিশৃঙ্খলা দৃশ্যমান হচ্ছে। তার মধ্যে অন্যতম হলো রাজনৈতিক বিশৃঙ্খলা।
স্বৈরাচার পতনের পর থেকে তারা বিভিন্ন রূপে ফিরে আসতে চাচ্ছে। বিশেষ করে "সংখ্যালঘু" হিসেবে তাদের আবির্ভাব হওয়ার হদিস পাওয়া যায়। তারা ধর্মকে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করার কৌশলে লিপ্ত ছিল। তা আবার নতুন কিছু নয়, যুগ যুগ ধরে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে ধর্মকে রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহার করা হয়েছে। বিশেষ করে ভারতীয় উপমহাদেশে এটি আরও প্রকট। এখানে হিন্দু মুসলিম সম্পর্ক বহু দিন ধরে রাজনৈতিক কেন্দ্রে রয়েছে। নির্বাচন কেন্দ্রিক রাজনীতিতে ধর্মীয় পরিচিতিকে উস্কে দিয়ে বিভেদ সৃষ্টি করা এখন একটি সাধারণ কৌশল।যার মাধ্যমে রাজনৈতিক বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হচ্ছে।
এরপরে আমরা দেখতে পাই, ধর্মীয় বিশৃঙ্খলা। আমাদের সমাজে অনেক শ্রেণীর মানুষের বসবাস বিদ্যমান।
তবে মুসলিমদের মধ্যে অনেক দল রয়েছে।যারা বিভিন্ন পন্থায় ইসলামের দাওয়াত দেয়।তার মধ্যে তাবলীগ অন্যতম।তারা মসজিদ থেকে মসজিদে সফর করার মাধ্যমে মানুষের কাছে দাওয়াত পৌঁছানোর প্রচেষ্টায় থাকে।তাদের একটা বড় সম্মেলন টঈী তোরাগ নদীর তীরে ইজতেমার মাঠে হয় । আবার তাদের মধ্যে দুটি গ্রুপে আছে। এক গ্রুপ অপর গ্রুপের আগেই সম্মেলন টি বাস্তবায়ন করতে চায়।এ নিয়ে তাদের মধ্যে বিভাজন তৈরি হয়।তারই সূত্র ধরে এক গ্রুপ মুসলিম তিন ভাইকে নিহত করে।এই ঘটনা টি খুবই বেদনাদায়ক।যার মধ্য দিয়ে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়।
সম্প্রতি, আরেক টা বিশৃঙ্খলা লক্ষ্য করা যায়, ছাত্র -শিক্ষকের মাঝে। ছাত্র -শিক্ষকের মাঝে একতা খুবই প্রয়োজন। কিন্তু একতা না থাকায় বিভিন্নভাবে ছাত্রদের কে হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে।
সমাজে রাজনৈতিক শৃঙ্খলা, ধর্মীয় শৃঙ্খলা, ছাত্র -শিক্ষকদের মাঝে শৃঙ্খলা আনয়ন সম্ভব যদি তাদের মাঝে সদিচ্ছা ও সামাজিক সচেতনতা সৃষ্টি করতে পারি। এছাড়া শিক্ষার মাধ্যমে তরুণ প্রজন্মকে সহনশীলতা ও সাম্প্রদায়িকতার ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে সচেতন করা উচিত , যাতে তারা একতাবদ্ধ সমাজে অবদান রাখতে পারে। গণমাধ্যমকেও দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে, যাতে তারা কোনোভাবে সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা বা বিভেদ সৃষ্টি না করে সমাজে শান্তির বার্তা ছড়াতে পারে। সর্বোপরি, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নিরপেক্ষতা এবং দক্ষতা নিশ্চিত করতে হবে, যাতে বিশৃঙ্খলা প্রতিরোধে তারা দ্রুত ও কার্যকর পদক্ষেপ নিতে পারে।এসব পদক্ষেপ একত্রে সব বিশৃঙ্খলা রোধে সাহায্য করবে এবং দেশের শান্তি শৃঙ্খলা বজায় রাখবে।
একতা বদ্ধ থাকার ফলে ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ এবং দেশ অনেক সুফল ভোগ করতে পারে। একতাবদ্ধ থাকলে সবাই মিলে কাজ করার ফলে সমস্যা মোকাবিলা করা সহজ হয়। একটি দলবদ্ধ প্রচেষ্টায় যে শক্তি ও সম্ভাবনা তৈরি হয়, তা এককভাবে সম্ভব নয়।একতা মানুষকে পরস্পরের প্রতি আস্থা ও ভালোবাসা বাড়াতে সাহায্য করে। পারস্পরিক সহায়তার মাধ্যমে সম্পর্ক আরও গভীর হয়।সমাজ বা প্রতিষ্ঠানের উন্নয়নের জন্য দলবদ্ধ প্রচেষ্টা বেশি কার্যকর।
একতার মাধ্যমে কাজের গতি এবং মান উভয়ই বৃদ্ধি পায়।একতা থাকলে দলগত চিন্তাভাবনা ও পরামর্শের মাধ্যমে জটিল সমস্যার সমাধান সহজ হয়।একতার মাধ্যমে ব্যক্তি এবং সমাজে শান্তি বজায় থাকে। এতে মনোভাবের ভিন্নতা কমে এবং অস্থিরতা এড়ানো যায়।সমাজে একতা থাকলে কোনো দল বা গোষ্ঠী সহজে অন্যের অধিকার হরণ করতে পারে না। একত্রিতভাবে অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো যায়।একতা মানুষকে কাজ করার উৎসাহ ও প্রেরণা যোগায়। একসঙ্গে কাজ করলে মনোবল শক্তিশালী হয়।সুতরাং, একতা বদ্ধ থাকা শুধু ব্যক্তিগত লাভ নয়, পুরো সমাজ ও দেশের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
• লেখক : ইমরান ফয়সাল