সংবিধান হচ্ছে একটি রাষ্ট্র পরিচালনার মূল দলীল। সংবিধানের মধ্যে একটি রাষ্ট্রের আইন-কানুন, নিয়ম-নীতি লিপিবদ্ধ থাকে। বাংলাদেশেরও এমন একটি সংবিধান রয়েছে। ১৯৭২ সালের ১৬ই ডিসেম্বর স্বাধীনতার একবছর পূর্তিতে আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশের সংবিধানের যাত্রা শুরু হয়। এর আগে শেখ মুজিব দেশে ফেরার পরদিন ১৯৭২ সালের ১১ই জানুয়ারী অস্থায়ী আদেশ জারি করেন। সংবিধান তৈরীর জন্য সংবিধান প্রণয়ণ কমিটি করা হয়। সেই কমিটির সবাই ছিলো শেখ মুজিবের খুবই কাছের ঘনিষ্ঠ লোকজন। এজন্য বলা যায়, ১৯৭২ এর সংবিধান তৈরী হয়েছিল শেখ মুজিবের মনের মতো। মুক্তিযুদ্ধের মূল চেতনা ছিল বৈষম্য থেকে মুক্তি। কিন্তুু, এই সংবিধানের মাধ্যমে শুধু জাতীয়তাবাদ,সমাজতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা আর গণতন্ত্রকে মূল চেতনা হিসেবে উপস্থাপনের চেষ্টা করা হয়েছে। যদিও শেখ মুজিব নিজেই একসময় গণতন্ত্রকে কবর দিয়ে বাকশাল কায়েম করেছিল। মুক্তিযুদ্ধের সময় সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য যুদ্ধ করার আহ্বান জানালে কেউই যুদ্ধে অংশগ্রহণ করতোনা।মানুষ যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল মূলত শোষণ,বৈষম্য,অত্যাচার,নির্যাতনের হাত মুক্ত হয়ে বৈষম্যহীন সমঅধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য।কিন্তুু,৭২এর সংবিধান বৈষম্যহীন সমঅধিকার প্রতিষ্ঠা করতে ব্যর্থ হয়েছে।যার ফলেই বৈষম্য মুক্তির লক্ষ্যে ২৪এর গণবিপ্লব সংঘটিত হয়।৭১এর বিজয়ে শুধু লাভবান হয়েছিল ক্ষমতালোভীরা। আওয়ামীলীগকে কোনো দল না বলে ধর্ম বলে উল্লেখ করলে ১৯৭২ সালের তৈরী করা সংবিধান হবে তাদের ধর্মগ্রন্থ। যেখানে শেখ মুজিবকে তারা উপস্থাপন করেছে নবিদের মতো করে। ১৯৭২ সালের সংবিধানে শেখ মুজিবের ইচ্ছা অনুযায়ী আইন-কানুন ও নিয়ম-নীতি তৈরী করা হয়েছে। তার কন্যা শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আসার পর ১৬ বছরের একনায়কতান্ত্রিক শাসনামলে বিরোধী মতের মানুষদের ওপর দমন-পীড়ন ও অত্যাচার-নির্যাতন চালানোর জন্য বিভিন্ন আইন-কানুন ও নিয়ম-নীতি সংযুক্ত করেন।১৯৭২ সালের সংবিধানের সাথে শেখ হাসিনার সংযুক্ত করা আইন-কানুন ও নিয়ম- নীতি তার রাজনৈতিক দলের লোকদের মানুষের ওপর অত্যাচার, লুটপাট, দূর্ণীতি, ঘুষ ইত্যাদি করতে সাহায্য করেছে।যার ফলে সংবিধান সংস্কার না হলে অন্যকোনো দল ক্ষমতায় এলে একই কাজ করবে।এজন্যই, ১৯৭২ এর সংবিধান বাতিল করে নতুন করে সবার মতামত নিয়ে নতুন সংবিধান তৈরী করার প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম।জনমতকে উপেক্ষা করে একতরফাভাবে তৈরী ৭২ এর সংবিধান বাতিল হওয়া অত্যন্ত জরুরী।
লেখক: মোঃমাহিন ভূঁইয়া
শিক্ষার্থী , সমাজবিজ্ঞান
ঢাকা কলেজ