১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে ইসলামপন্থীদের যতটুকু না অবদান ছিল, তার চেয়ে বেশি তাদের নিয়ে অপপ্রচার চালানো হয়েছে।বিভিন্ন সিনেমা, নাটক ও অন্যান্য অনেকক্ষেত্রে ইসলামপন্থীদের স্বাধীনতাবিরোধী হিসেবে জনগণের সামনে উপস্থাপন করে ইসলামবিদ্বেসীরা অপপ্রচার চালিয়েছে। কিন্তু, আমরা অনেকেই জানিনা, মুক্তিযুদ্ধে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিল ইসলামপন্থীরাই।ইসলামবিদ্ধেসীরা বারবার দাড়ি-টুপি আর পান্জাবিকে স্বাধীনতাবিরোধীদের চিহ্ন হিসেবে উপস্থাপনের অপচেষ্টা চালিয়েছে। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে বড় ভূমিকা রেখেছিল জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম। জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম নামের রাজনৈতিক দলটি ভারত, পাকিস্তান ও বাংলাদেশ এই তিনটি দেশেই বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষে কাজ করে। পুরো উপমহাদেশে বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষে সংগ্রাম করার দাবি জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম নামের ইসলামপন্থী রাজনৈতিক দলটি ছাড়া অন্যকেউ করতে পারবেনা। কারণ, শুধু জমিয়তে উলামায়ে ইসলামই স্বাধীনতার পক্ষের দল হিসেবে পুরো উপমহাদেশব্যাপী বিস্তৃত ছিল। মুক্তিযুদ্ধের সময় রণাঙ্গনে যুদ্ধের জন্য 'জমিয়াতুল আনসার' নামের বিশেষ সশস্ত্র বাহিনী গঠন করে জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম। জমিয়াতুল আনসার' বাংলাদেশকে স্বাধীন করার জন্য সারাদেশব্যাপী যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে। ২৫শে মার্চ রাতে হত্যাযজ্ঞের প্রতিবাদে পাকিস্তানের লাহোরে বিক্ষোভ করে জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম।এজন্যই জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের পাকিস্তানের দলীয় কার্যালয় পুড়িয়ে দেয়া হয়। স্বাধীনতার পর ধর্মভিত্তিক দলগুলোর রাজনীতি বন্ধ করা হলেও জমিয়তে উলামায়ে ইসলামকে রাজনীতি করতে কোনো বাঁধা প্রদান করা হয়নি। মুক্তিযুদ্ধে জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের অনেকেই শহীদ হন। ১৯৭১ সালের ২৬ শে মার্চ রাতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর গুলিতে শহীদ হন ঢাকার হাতিরপুল মসজিদের ইমাম। হুমায়ূন আহমেদের বিখ্যাত উপন্যাস 'জোছনা ও জননী গল্প'তে যে ইমতিয়াজ আলী কাশেমপুরীর উল্লেখ করেছেন, তিনি ছিলেন বৃহত্তর ময়মনসিংহের ইমাম। তিনি যুদ্ধকালে পরাধীন দেশে জুম্মার ইমামতি করতে অস্বীকৃতি জানালে পাকিস্তানি হানাদারদের গুলিতে শহীদ হন। যশোর স্টেশন মাদ্রাসা মুহতামিম মাওলানা আবুল হাসান যশোরী এবং তার মাদ্রাসার ছাত্ররা মুক্তিযুদ্ধকে সমর্থন করে সরাসরি যুদ্ধে অংশগ্রহণ করে। এই কারণেই ১৯৭১ সালের ৮ই এপ্রিল পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী মাদ্রাসায় হামলা চালায় এবং এতে ২১ জন শহীদ হন। আবুল হাসান যশোরী গুলিবিদ্ধ হলেও ভাগ্যক্রমে বেঁচে যান। স্বাধীন বাংলা বেতারকেন্দ্রের একজন প্রতিষ্ঠাতা বেলাল আহমেদের 'স্বাধীন বেতারকেন্দ্র' বই থেকে জানা যায়, শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানকে মুক্তিযুদ্ধের সময় চট্টগ্রামের পটিঁয়া মাদ্রাসার মুহতামিম মাওলানা দানেশ রহি. তার মাদাসায় আশ্রয় দিয়েছিলেন এবং এজন্য পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী মাদ্রাসায় বোমা হামলা চালালে মাওলানা দানেশ সহ অনেকে শহীদ হন। মাওলানা আব্দুর রশীদ তর্কবাগীশ ২৪৩ দিন আত্মগোপনে থেকে হাজার-হাজার মানুষকে সংঘটিত করে মুক্তিযুদ্ধকে বেগবান করেন। এজন্য পাকিস্তানি হানাদাররা তার ঘর-বাড়ি জ্বালিয়ে দেয়। সারাদেশের মাদ্রাসার ছাত্ররাই যুদ্ধে অংশগ্রহণ করে এবং শহীদ হন। ১৯৭১ সালের অস্থায়ী সরকারের উপদেষ্টা মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানির সঠিক পরামর্শ ও নেতৃত্ব বিজয় লাভ করাকে সহজ করেছে। ইসলামপন্থীদের এতো পরিমাণ অবদান থাকার পরেও কিছু ইসলামবিদ্ধেসীরা দাড়ি-টুপিকে রাজাকারের লক্ষণ হিসেবে উপস্থাপনের অপচেষ্টা চালাচ্ছে। বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরুদ্ধে রাজাকার নামের সংগঠন গড়ে ওঠে। রাজাকার শব্দের বাংলা প্রতিশব্দ স্বেচ্ছ্বাসেবী, স্বেচ্ছ্বায় যুদ্ধ করার লক্ষ্যে সংগঠনটি গড়ে ওঠায় এর আরবি হিসেবে নাম দেয়া রাজাকার।১৯৭১ সালে যেসব রাজাকাররা আত্মসমর্পণ করে বা,আটক হয়, তাদের কারোর মুখে দাড়ি, টুপি বা,পান্জাবী ছিলনা। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক গণমাধ্যম এপি বা,এসোসিয়েট প্রেস এর ভিডিওক্লিপ সম্প্রচারে দেখা যায়, ১৯৭১ সালে আত্মসমর্পনকারী ও আটক রাজাকাররা বিশেষ একধরণের পোশাক পরিহিত অবস্থায় ছিল এবং কাঁধের উপর স্টিল দিয়ে খোঁদাই করা RAZAKAR শব্দ লিখা ছিল।মুক্তিযুদ্ধের শেষে এই রাজাকারদের আটক করে ভারত নিয়ে যাওয়া হয়। বাংলাদেশে বিদ্যমান ইসলামবিদ্ধেসীরা ইতিহাসকে গোপন করে ইসলামপন্থীদের অপবাদ দিয়ে ঘায়েল করতে চেয়েছে। ধর্মনিরপেক্ষতার কথা বলে ইসলামপন্থীদের মাইনাস করে ফ্যাসিবাদী বাকশাল- মুজিববাদ কায়েম করতে চেয়েছে। মোঃমাহিন ভূঁইয়া শিক্ষার্থী, সমাজবিজ্ঞান,ঢাকা কলেজ। মোবাইলঃ01643078920
প্রকাশক : কাজী জসিম উদ্দিন   |   সম্পাদক : ওয়াহিদুজ্জামান

© Deshchitro 2024