সাত কলেজের কথা ভাবলে ঢাকার ঐতিহ্যবাহী সাতটি কলেজের ছবি ভেসে ওঠে। তাহলো ঢাকা কলেজ,ইড়েন মহিলা কলেজ, বাঙলা কলেজ,কবি নজরুল কলেজ, তিতুমীর কলেজ, বদরুন্নেসা কলেজ ,শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ।২০১৭সালে ঢাকার ঐতিহ্যবাহী সাতটি কলেজ কে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তর্ভুক্ত করা হয়। কারণ তাদের পড়াশোনার মান উন্নয়ন করার জন্য।এখানে প্রায় দুই লাখ শিক্ষার্থী পড়াশোনা করে। তারা গ্রাম থেকে অনেক বড় স্বপ্ন নিয়ে ঢাকা শহরের উদ্দেশ্যে পাড়ি জমায়। কিন্তু পড়াশোনা করতে এসে তারা বিভিন্ন ভাবে হয়রানির শিকার হয়। যা তাদের পড়াশোনার গতিশীলতা কে শীতল করে দেয়।যা আদৌ কাম্য নয়।
সাত কলেজের অনেক গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস রয়েছে।যা আমাদের কে প্রেরণা যোগায়। সুন্দর ভবিষ্যৎ বিনির্মাণে পাথেয় হিসেবে কাজ করে।সাত কলেজের ইতিহাস ও ঐতিহ্য বলতে গেলে প্রথমে বলতে হয় ঢাকা কলেজের কথা। ঢাকা কলেজ ছিল এদেশের প্রাচীন বিদ্যাপীঠ।এই বিদ্যানিকেতনের শিক্ষার্থী ছিল অনেক প্রথিতযশা ব্যক্তিবর্গরা, খ্যাতিমান কবি সাহিত্যিকরা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার সূচনালগ্নে যার অবদান ছিল অবিস্মরণীয়।একইভাবে বাকি ছয় কলেজের ও এমন অনেক গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস রয়েছে।
সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের চেয়ে পর্যাপ্ত শিক্ষক নাই। আবার শিক্ষার্থীদের পাঠদানের জন্য প্রয়োজন মাফিক ক্লাসরুম নাই।যার কারণে এক ডিপার্টমেন্টের ১ম বর্ষের শিক্ষার্থীর ক্লাস চলাকালীন একই সাথে ২য় ব্যয় বর্ষের ক্লাস থাকলে তাদের জায়গা দিতে হিমশিম খাইতে হয়। অন্যদিকে পরীক্ষার খাতা সঠিকভাবে মূল্যায়ন না করা ও রেজাল্ট প্রকাশে বিলম্বিত করা এবং সঠিক ফলাফল প্রকাশে ব্যর্থ হওয়া।এক পরীক্ষার পর অপর পরীক্ষা দেওয়ার মাঝে দীর্ঘদিন গেপ থাকা। পরিচয়ের সংকট তো দৃশ্যমান। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষার্থী জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হিসেবে পরিচয় দিতে পারে । কিন্তু সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা নির্দ্বিধায় নিজেদের পরিচয় দিতে পারে না।কারণ বরাবরই বলা হয়েছে,সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী নয়। অনেক ক্ষেত্রে নিজের কোনো বিশ্ববিদ্যালয় পরিচয় দিতে না পারায় শিক্ষার্থীরা সামাজিকভাবে হেয়প্রতিপন্ন হয়। আবার বিশ্ববিদ্যালয় প্রদত্ত সার্টিফিকেটে ভিন্ন অ্যাফিলিয়েট শব্দটি উল্লেখ থাকায় উচ্চশিক্ষার জন্য বিদেশে যেতে ইচ্ছুক শিক্ষার্থীরা দূতাবাস সমূহে বিড়ম্বনার শিকার হয়েছেন।
সাত কলেজ নিয়ে টেকসই পরিকল্পনা গড়তে হলে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক মাথায় রাখা প্রয়োজন। শিক্ষা, প্রশাসন, অবকাঠামো এবং শিক্ষার্থীদের চাহিদা বিবেচনায় একটি সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণ করা জরুরি। সাত কলেজে শিক্ষকদের পর্যাপ্ত নিয়োগ নিশ্চিত করতে হবে।গবেষণার সুযোগ বাড়াতে উন্নত গবেষণা ল্যাব স্থাপন করা প্রয়োজন।শিক্ষার্থীদের জন্য নিয়মিত কর্মশালা ও প্রশিক্ষণ আয়োজন করতে হবে। সাত কলেজের জন্য আলাদা প্রশাসনিক ইউনিট গঠন করা যেতে পারে।পরীক্ষার সময়সূচি ও রেজাল্ট প্রকাশের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা ও দ্রুততা নিশ্চিত করা প্রয়োজন।প্রতিটি কলেজে শ্রেণিকক্ষ, লাইব্রেরি, ও আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তি সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে।শিক্ষার্থীদের জন্য হোস্টেল সুবিধা এবং ক্যাম্পাস পরিবেশ উন্নত করতে হবে।সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের মতামত গ্রহণ করে পরিকল্পনা তৈরি করা উচিত।নিয়মিত ছাত্র সংসদ নির্বাচন আয়োজন এবং শিক্ষার্থীদের সমস্যার সমাধান করা প্রয়োজন।শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে আলাদা বাজেট বরাদ্দ এবং সুষ্ঠু ব্যবহারের জন্য স্বচ্ছ পদ্ধতি নিশ্চিত করতে হবে।প্রাইভেট-পাবলিক পার্টনারশিপের মাধ্যমে উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করা যেতে পারে।
সাত কলেজের সমস্যা সমাধান হলে আমরা সুন্দর একটি পরিবেশ পাবো পড়াশোনার জন্য।যার সুফল ভোগ করবে সব সাধারণ শিক্ষার্থীরা। যেখানে কোনো ধরনের শিক্ষা সিন্ডিকেটের বৈষম্যের শিকার হতে হবে না।যার মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা তাদের স্বপ্নের প্রত্যাশিত জায়গায় পৌঁছাতে দুর্ভোগ পোহাতে হবে না। তাই আগামীর সুন্দর দেশ বিনির্মাণে সাত কলেজ পরিকল্পনা হোক টেকসই।
লেখক: ইমরান ফয়সাল
শিক্ষার্থী, ঢাকা কলেজ