করোনা ভাইরাস একটি আতঙ্কের নাম ছিল। যেই আতঙ্কে ভুগছে সারা বিশ্ব। যুক্তরাষ্ট্রের জনস হপকিন্স ইউনিভার্সিটি রিপোর্ট অনুযায়ী, বিশ্বে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ৩০ লাখের বেশি মানুষ মারা গেছে। এই ভাইরাসের উৎপত্তিস্থল ছিল শীন। এই করোনা মানুষে মানুষে দূরত্ব সৃষ্টি করেছিল তা সম্পর্কে বাংলাদেশসহ বর্হির বিশ্বের দেশগুলো অবগত আছে। এখন নতুন কোনো ভাইরাসের নাম শুনলেই মানুষের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়। যদিও বর্তমানে করোনার ভয় অনেকটাই কমে গেছে। তবুও বিজ্ঞানীরা ভবিষ্যতে এমন ভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকি নিয়ে সতর্ক করেন। আবারো চীনে একটি নতুন ভাইরাস সংক্রমণ শুরু হয়েছে। সম্প্রতি চীনে একটি অদ্ভুত ভাইরাস আতঙ্কের সৃষ্টি করেছে। এই নতুন ভাইরাসের নাম হিউম্যান মেটাপনিউমোভাইরাস। (এইচএমপিভি)। আসলে এই ভাইরাস টা কি, তার উপসর্গ এবং চিকিৎসা পদ্ধতি সম্পর্কে জানার চেষ্টা করবো। এইচএমপিভি একটি শ্বাসতন্ত্রের ভাইরাস যা প্রায় দুই দশক আগে প্রথম শনাক্ত করা হয়। এই ভাইরাস নতুন নয়, তবে সাম্প্রতিক সময়ে এর প্রাদুর্ভাব বেড়েছে, যা করোনা ভাইরাসের মতো সম্ভাব্য মহামারির ভয় তৈরি করছে চীনে। সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর) তথ্য অনুযায়ী, গতকাল (রোববার) বাংলাদেশে এক নারীর শরীরে হিউম্যান মেটানিউমো ভাইরাস (এইচ এমপিভি) শনাক্ত হয়েছে। ওই নারী বর্তমানে রাজধানীর সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন।  গতকাল রোববার আইইডিসিআরের সূত্র এ তথ্য জানিয়েছে। হাসপাতালে ভর্তি একজন রোগীর দেহে হিউম্যান মেটানিউমো ভাইরাস শনাক্ত হয়েছে।  হিউম্যান মেটাপনিউমোভাইরাসের প্রাদুর্ভাব সম্প্রতি চীন পরে জাপানেও ছড়িয়ে পড়েছে। ইতোমধ্যে চীন এবং জাপানের অনেক মানুষ এই ফ্লু-জাতীয় ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হয়েছে। বিশেষজ্ঞদের তথ্য অনুযায়ী, এই ভাইরাস করোনার মতোই বিপজ্জনক হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। যদিও এখনো নিশ্চিতভাবে বলা সম্ভব নয় যে কোন রোগটি মহামারি আকার ধারণ করবে, তবে এইচএমপিভি ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব বিশেষজ্ঞদের উদ্বিগ্ন করে তুলেছে। কারণ করোনার প্রথম দিক স্বাভাবিক থাকলেও পরবর্তীতে কি হয়েছিল তা সম্পর্কে আমরা খুব ভালো করে জানি। এখন অনেকেই বলতে পারে, হিউম্যান মেটাপনিউমোভাইরাস তো চীন জাপানে আমাদের সমস্যা কি! আমরা তো করোনা ভাইরাস সম্পর্কে জানি, প্রথমে চীনে শুরু হলেও শেষ করেছে পুরো বিশ্বকে। তাই হিউম্যান মেটাপনিউমোভাইরাস নিয়ে বাংলাদেশের সচেতন হতে হবে। হিউম্যান মেটাপনিউমো ভাইরাস যা সম্প্রতি চীন ও জাপানে প্রাদুর্ভাব ঘটিয়েছে, তা বিশ্বজুড়ে হবে না যে তার তো নিশ্চয়তা নেই। ফ্লুর মতো উপসর্গযুক্ত এই হিউম্যান মেটাপনিউমোভাইরাস শিশু ও প্রবীণদের মতো ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীর শ্বাসতন্ত্রের স্বাস্থ্যের ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলতে পারে। তাই বাংলাদেশকে এখনই সচেতন হতে হবে। আমরা এইচএমপিভি ভাইরাসের উপসর্গ সম্পর্কে জানবো। এইচএমপিভির ভাইরাসের উপসর্গ গুলো হলো, কাশি সাথে জ্বর নাক বন্ধ হওয়া শ্বাসকষ্ট জটিলতার মধ্যে থাকতে পারে। ব্রংকাইটিস, নিউমোনিয়া এবং অ্যাজমার বৃদ্ধি পেতে পারে। ব্রংকাইটিস, নিউমোনিয়া, হাঁপানির সংক্রমণ এর মতো বিভিন্ন জটিলতা দেখা দিতে পারে। তাই বাংলাদেশে কারোর এই উপসর্গ দেখা দিলে ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করতে হবে। করোনা ভাইরাস বিভিন্নভাবে মানুষের শরীরে প্রবেশ করতো। এখন প্রশ্ন হচ্ছে হিউম্যান মেটাপনিউমো ভাইরাসও কি করোনার মতো ছুঁয়া ছুয়ে ভাইরাস! চলুন জেনে নেওয়া যাক কীভাবে এইচএমপিভি ছড়ায়৷ এইচএমপিভি ছড়ায়, কাশি ও হাঁচির মাধ্যমে সৃষ্ট ড্রপলেট হয়ে। দূষিত কোনোকিছু স্পর্শ করার পরে মুখ, নাক বা চোখ স্পর্শ করলে হিউম্যান মেটাপনিউমো ভাইরাস হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সেইসঙ্গে ঘনিষ্ঠ সংস্পর্শ, যেমন হাত মেলানো এর মাধ্যমেও ছড়াতে পারে হিউম্যান মেটাপনিউমো ভাইরাস। বর্তমানে হিউম্যান মেটাপনিউমো ভাইরাস বাংলাদেশের পরিস্থিতি সম্পর্কে আলোচনা করা যাক। আমাদের দেশে এখন পর্যন্ত এইচএমপিভির বড় ধরনের প্রাদুর্ভাবের কোনো খবর পাওয়া যায়নি, তবে আমাদের সর্বোচ্চ সতর্ক থাকা দরকার। চীন ও জাপানে এই ভাইরাস ইতিমধ্যেই উল্লেখযোগ্য সংখ্যক রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি করিয়েছে, যা করোনা ভাইরাসের মহামারির প্রথম দিকের পরিস্থিতির সাথে তুলনীয়। পরবর্তীর অবস্থা সম্পর্কে আমরা সবাই জানি। তাই প্রথম থেকেই আমাদের সর্বোচ্চ সচেতনতা দরকার। হিউম্যান মেটাপনিউমো ভাইরাস নিয়ে আতঙ্ক নয় চাই সচেতন। আর সচেতনতার জন্য চাই প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা। তাহলে আমরা কীভাবে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারি তা নিচে আলোচনা করা হলো। সুষম খাদ্য এবং পর্যাপ্ত ঘুমের মাধ্যমে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বজায় রাখু সম্ভব। ভিড়যুক্ত জায়গায় অবশ্যই মাস্ক ব্যবহার করতে হবে যা করোনার সময় আমরা উল্লেখ্যযোগ্য ভাবে দেখেছি। আমাদের হাত ধোয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন। সাবান দিয়ে ঘন ঘন হাত ধুয়ে নিতে হবে। এবং শ্বাসতন্ত্রের উপসর্গযুক্ত ব্যক্তিদের সাথে ঘনিষ্ঠ সংস্পর্শ এড়িয়ে চলতে হবে। আমরা হিউম্যান মেটাপনিউমো ভাইরাসের চিকিৎসার পদ্ধতি নিয়ে কথা বলবো। এই ভাইরাসের দুই ধরনের চিকিৎসা পদ্ধতির কথা বলা যেতে পারে। অ্যালোপ্যাথিক এবং হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা পদ্ধতি। এইচএমপিভি ভাইরাসের জন্য এখনো কোনো ভ্যাকসিন বা নির্দিষ্ট অ্যান্টিভাইরাল চিকিৎসা নেই। চিকিৎসা সাধারণত উপসর্গ ব্যবস্থাপনার উপর নির্ভরশীল। অনেক চিকিৎসক রাসটক্স,পালসাটিলর মতো ব্যক্তিকেন্দ্রিক হোমিওপ্যাথিক ওষুধ সুপারিশ করেন। তবে উপরে উল্লেখিত উপসর্গ দেখা দিলে প্রথমে প্রাথমিক ডাক্তারের শরণাপন্ন হবেন৷ বাংলাদেশে ইতোমধ্যে ১ জনের শরীরে হিউম্যান মেটাপনিউমো ভাইরাস সংক্রামিত হয়েছে। তাই এখন আমাদের সর্বোচ্চ সচেতন থাকতে হবে। এক্ষেত্রে প্রাথমিক শনাক্তকরণ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমি আপনি কিংবা আমাদের পরিচিত কারোর যদি হিউম্যান মেটাপনিউমো ভাইরাসের উপসর্গ দেখা দেয় তাহলে দ্রুত চিকিৎসকের সাথে যোগাযোগ করতে হবে। হিউম্যান মেটাপনিউমো ভাইরাস নিয়ে আতঙ্ক নয় চাই সর্বস্তরের সচেতনতা। আসুন নিজে সচেতন হই এবং এই সম্পর্কে অন্যকেও সচেতন করি।

লেখক : সাকিবুল হাছান
সমাজবিজ্ঞান বিভাগ
ঢাকা কলেজ, ঢাকা 
প্রকাশক : কাজী জসিম উদ্দিন   |   সম্পাদক : ওয়াহিদুজ্জামান

© Deshchitro 2024