◾ আশিকুর রহমান || বাংলাদেশ তরুণ কলাম লেখক ফোরাম, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সদস্যদের লেখক আড্ডা অনুষ্ঠিত হয়েছে। লেখকরা স্বভাবতই সমাজ ও  রাষ্ট্রের চিন্তায় একে-অপরের সাথে ভিন্ন ভিন্ন মতবিরোধের সমাধান কল্পে নানাবিধ আলোচনা- সমালোচনা করে থাকে। এছাড়াও অজানাকে জানতে জ্ঞানপিপাসু হয়ে থাকে। লেখক আড্ডার এক দীর্ঘ ইতিহাস ও ঐতিহ্য রয়েছে। লেখক আড্ডা শুধু চায়ের কাপে সীমাবদ্ধ নয়, লেখকদের সৃষ্টিশীল চিন্তার বহিঃপ্রকাশ ঘটে এই মিলনমেলায়। বিশেষ করে ঢাবির টিএসসি, বাংলা একাডেমি ও বিভিন্ন কফি হাউজে হুমায়ুন আহমেদ ও জীবনানন্দ দাশ এর মত স্বনামধন্য লেখকরা বসিয়েছিলেন মুক্ত আলোচনার আসর।


এ উদ্দেশ্যকে ধারণ করেই রাষ্ট্রচিন্তক তথা তরুণ  লেখকদের আড্ডায় আমার থাকার সুযোগ হয়েছিল। লেখক আড্ডার সমারোহে উপস্থিত ছিলেন ইবির অন্যতম তরুণ লেখক খায়রুজ্জামান খান সানি, রুখসানা খাতুন, তুহিন বাবু, এস.এ.এইচ ওয়ালিউল্লাহ , আব্দুল্লাহ মাহমুদ, সুকান্ত দাস, রুহুল আমিন, সামিয়া জামান, ইউমনা তাবাসসুম মনি, তামান্না ইসলাম, আফরিন রেখা, সাকিব আল হাসান, সুমন, মুনায়েম ও জ্বোহা সহ আরো তরুণ লেখকবৃন্দ।


এছাড়াও ছিল বন্ধু জারীফ, রাকিবুজ্জামান ও শ্রাবণ ভাই। লেখকদের তীক্ষ্ণ চিন্তা ও সমাজ ভাবনায় উঠে এসেছে রাষ্ট্রের চলমান পরিস্থিতি, রাষ্ট্রের আর্থিক, সামাজিক, অবকাঠামোগত ও সাংবিধানিক সংস্কারের নানাবিধ আলোচনা- সমালোচনা। এছাড়াও লেখকদের মাঝে মিলনমেলা ও সেতুবন্ধনে গড়ে ওঠে সমঝোতা ও সহনশীলতা। এটি জ্ঞান আহরণের মুক্তচর্চার জায়গা।


দেশের তরুণ লেখক ও শিক্ষার্থীদের বিরাট একটা অংশ দুই রোগে আক্রান্ত; ১. বই পড়ায় অনীহা ও ২. গবেষণা বিমুখ। লেখক আড্ডা এই দুই রোগ দূর করে বইপাঠে আগ্রহ সৃষ্টি ও গবেষণামুখী করে চিন্তার বিকাশ ও দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন করে তুলতে ব্যাপক সহায়ক। বিভিন্ন বুক রিভিউ, সমাজ সংস্কার, সামাজিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, আন্তর্জাতিক, সমসাময়িক ইস্যু, লেখকদের দক্ষ করে তুলতে করণীয় ও প্রত্যেকের মতের ভিন্নতায় লেখক আড্ডা জমে উঠেছে ইবির বটতলায়। বিকেলের আড্ডায় হঠাৎ চলে আসলেন জেবু আপু। জেবু আপু সদা হাস্যোজ্জ্বল ও চা প্রিয় মানুষ। তিনি আড্ডা জমাতে পারেন ভালো, এটা তার বিশেষ গুণ।


আলোচনার মাঝে উপস্থিত সকলেই চা-খোর লেখক। চা-খোর লেখক কথাটা সামিয়া জামান ও আমার সাথে পুরোপুরি প্রাসঙ্গিক হলেও তামান্নার সাথে সাংঘর্ষিক। লেখকদের সাথে চা অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। লেখকদের লেখার প্রতিটি শব্দে, প্রতিটি বাক্যে চায়ের লুকোনো গল্প থাকে। লেখক আড্ডায় চা থাকবেনা তা হয়! হঠাৎ আড্ডার মাঝে চা আসায় সকলে যেন অ্যাস্থেটিক হয়ে গেল; সেইসাথে পূর্ণতা পেল হুমায়ুন আহমেদ, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় ও জীবনানন্দ দাশ এর বিখ্যাত কফি হাউজের ন্যায় লেখক আড্ডা। একটু পরেই আসলেন সুকান্ত দা ও মাহমুদ ভাই। তাদের সাথেও চা চক্রে গল্প বেশ জমে উঠেছিল। গল্পের সমাপ্তির সাথে সাথে সন্ধ্যা নেমে আসল দ্রুতই। সন্ধ্যায় ওয়ালিউল্লাহ ভাই ও কাওসার ভাইয়ের আগমণে চায়ের কাপে আবারো এক চুমুক দেয়া হলো সবার। চা চক্রের মাঝে সানি আমাকে কিছু বিষয় নিয়ে উত্ত্যক্ত করছিল, তারই প্রেক্ষিতে সকলে যেন হারিয়ে গেল হাসির রাজ্যে।


লেখক আড্ডার আকর্ষণীয় অংশ ছিল পাঠচক্র। পাঠচক্রের বিষয় ছিল আহমদ ছফার সুবিখ্যাত বই ‘গাভী বিত্তান্ত’। বই পাঠ ও বই পর্যালোচনা মেধা ও মনন বিকাশে কতটা কার্যকরী সেদিন অনুভব করেছি তরুণ লেখক মামুন মিসবাহ, তুহিন বাবু ও রুখসানা খাতুন এর আলোচনায়। লেখক আডডায় লেখকরা তাদের চিন্তা, সাহিত্য ও সংস্কৃতির দৃষ্টিভঙ্গি বিনিময় করেন, যা তাদের লেখায় প্রতিফলিত হয়। লেখকদের আড্ডায় মতের ভিন্নতা চিন্তার জগতকে সমৃদ্ধ ও মস্তিষ্কের প্রসার ঘটায়। যা তরুণ লেখকদের আরো দক্ষ চিন্তক, সামাজিক, মানবিক মূল্যবোধ সম্পন্ন মানুষ, অন্যের মতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল ও সভ্য সমাজের অংশ করে গড়ে তোলে। সবমিলিয়ে লেখক আড্ডা জমে উঠেছিল দারুণ সব তরুণ লেখকদের সাথে, যেখানে আবিষ্কার করেছি নতুন অভিজ্ঞতা, নতুন চিন্তাশীল মানুষদের। এটি শুধু লেখক আড্ডাই ছিলনা, বরং এটি ছিল বুদ্ধিবৃত্তিক চিন্তার কেন্দ্রস্থল।


প্রকাশক : কাজী জসিম উদ্দিন   |   সম্পাদক : ওয়াহিদুজ্জামান

© Deshchitro 2024