|
Date: 2025-01-25 03:46:31 |
◾ইমন হাওলাদার || মানুষ সামাজিক জীব। জীবন পরিচালনার জন্য তাকে বিভিন্ন স্তরের কর্মে নিযুক্ত হতে হয়। বাংলাদেশের মানুষ সরকারি চাকরিকে জীবনের একটা নিরাপত্তা হিসেবে দেখে। কারন সেখানে চাকরি হওয়া যেমন কঠিন তেমনি হারানো। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করলে বেতন বেশি কিন্তু সেখানে চাকরির সময়কাল কম এবং যেকোনো সময় চাকরি থেকে যেকাউকে কোম্পানির মালিক অব্যাহতি দিতে পারেন। অনেক সময় বেতন নিয়েও কারসাজি করে। এর জন্য সবাই সরকারি চাকরির পেছনে ছুটি। সরকারি চাকরি করলে সমাজে তাদেরকে মানুষ একটু আলাদা ভাবে গণনা করে।
সেই রকমই একটি চাকরি পেয়েছিলেন মাদারীপুর জেলার ডাসার উপজেলার পূর্ব কমলাপুর গ্রামের কৃষ্ণ বিশ্বাসের মেয়ে তৃষ্ণা বিশ্বাস। তৃষ্ণা ছোট বেলা থেকেই অনেক মেধাবী ছিলেন। পারিবারিক দারিদ্রতা আর উচ্চতার কারনে যোগ দেন প্রশাসনিক বিভাগের পুলিশ বাহিনীতে। কত কী নতুন স্বপ্ন তার চোখ ভরা আশা আর উদ্দিপনা। মেয়ে হয়েও বাবার মতো পরিবারের ঘানি টানার বন্দোবস্তো করতে পেরেছে সে। ছোট ভাইটাকে মানুষ করতে হবে অসুস্থ বাবাকে একটু রেস্ট দেওয়ার সুযোগ প্রদান,আরো কত কি! কিন্তু ট্রেনিং শেষে চাকরিতে যোগ দেওয়ার চার মাসের মধ্যেই এলে তার পৃথিবী থেকে চলে যাবার সংবাদ। যা কখনোই তার পরিবার ও এলাকাবাসী শোনার জন্য প্রস্তুত ছিলো না। সবাই বাকরুদ্ধ হয়ে যায়। অক্টোবর, নভেম্বর, ডিসেম্বর চলছে জানুয়ারি। তৃষ্ণার মা সংবাদ মাধ্যমে সাক্ষাৎকার দেওয়ার সময়ে মোটা দাগে কিছু কথা বলেছেন। প্রথমতো মেয়ের ভিতরে অনেক বেশী ভয় কাজ করতো। জিগ্যেস করলেই বলতো জানিনা।
কোথা থেকে শুরু হলো এ ভয়ের। কী এমন হয়েছিল তার সাথে যেটা থেকে সে বেরিয়ে আসতেই পারতেছিলো না। ভয় তাকে বার বার গ্রাস করছিলো। সে এমন কী দেখেছিলো যা মাকেও বলা যায়নি। তাকে হয়তো বলতে নিষেধ করা হয়েছিলো এবং কাউকে বললে বড় ধরনের ক্ষতির সম্মুখীন হতে হবে এটা বুঝিয়েছিল।সে কী কোনো ঘটনার সাক্ষীতে পরিণত হয়েছিলো? সে কেন চাকরি ছেড়ে দিতে চেয়েছিলো? যেখানে সরকারি চাকরিকে বাংলাদেশে সোনার হরিণের সাথে তুলনা করা হয়ে থাকে। সে আবার পড়ালেখা করতে চায় এবং পরবর্তিতে সে আবার চাকরি করবে। চাকরিই যেহেতু করবে তবে বর্তমানের চাকরিতে সমস্যা কোথায়। একটা ছেলে হয়তো উন্নত জীবন লাভের আশায় চাকরি ছেড়ে বেশী বেতনের চাকরি করে।
কিন্তু তাও চাকরি পেয়ে তবেই চাকরি ছাড়ে। কিন্তু দরিদ্র পরিবারের মেয়ে কেন চাকরিটা ছেড়ে দিতে চেয়েছিলো? অসুস্থ বাবা কাজ করতে অক্ষম। পরিবারে ছোট ভাই মা। তার চাকরির টাকায় চলতো পরিবারের ভরনপোষণ। সে জানে বর্তমান চাকরির বাজারে চাকরি পাওয়া এত সহজ না। আর তার যদি মানসিক সমস্যার সৃষ্টি হয়ে থাকে,তবে তার ডিপার্টমেন্ট জেনেও কেন তাকে ছুটি দিতে চাচ্ছিলেন না। যেখানে তৃষ্ণা একজন নিরাপত্তা কর্মী হিসেবে কাজ করতো। সেখানে সেই যদি মানসিক বিকারগ্রস্থ হয়ে থাকে তাহলে অন্যকে নিরাপত্তা দিবে কিভাবে।তাদের তো উচিত ছিলো সরকারি ভাবে তার ট্রিটমেন্টের সুযোগ প্রদান করে পুনরায় চাকরিতে নিয়োগ দেওয়া। তার বাবা যমুনা টেলিভিশনে সাক্ষাৎকার দেওয়ার সময় বলতেছিলেন মেয়েটা আমার ভাত রান্না করলো, ভাতে আলু সিদ্ধ দিলো এর মাঝে এমন কী হলো যে সে না খেয়ে মৃত্যুর দিকে ধাবিত হলো। ২০জানুয়ারি ২০২৫ রোজ সোমবার তৃষ্ণা বিশ্বাস সকাল ০৭:০০ টায় তার বিজিবিতে কর্মরত মামাকে ফোন দেয় ।তৃষ্ণা তার মামাকে কল করে অনুরোধ করে "যতো দ্রুত সম্ভব তৃষ্ণাকে পটুয়াখালী থেকে ট্রান্সফার করে অন্য কোথাও পাঠানোর জন্য।"
কারণ তৃষ্ণা এখানে নিরাপদ বোধ করছে না। মামার কল রাখার দের ঘন্টা পরেই তৃষ্ণার মাকে জানানো হয় তৃষ্ণার মৃত্যুর সংবাদ।পটুয়াখালী থানা থেকে সকাল ০৮:৩০ এ মাদারীপুরে কল করে তৃষ্ণার মাকে জানানো হয় যে তৃষ্ণা আত্মহত্যা করেছে। সে কেন সেখানে নিরাপদ বোধ করতে ছিলো না? দুই কনস্টেবল মেয়ে ডিউটিতে চলে গেল তাকে রেখে সে রুমে কী করতেছিলো? সে কী ডিউটিতে আজ যাবে না বলেছিলো?সে কী অফিসারের কাছ থেকে ছুটি নিয়েছিলো? সে কী প্রতিদিন এভাবেই লেট করে আর তার সহকর্মীরা তাকে রেখে ডিউটিতে চলে যায়? হাজারো প্রশ্ন উকি দেয় আমাদের মাঝে। উত্তর শূন্যে ভাসে সে চিৎকার করে বলে কিন্তু আমরা শুনিনা। যারাই তার মৃত্যু ঘটনার ভিডিও, ছবি দেখেছে সবাই বলেছে হত্যা করা হয়েছে। এটা দেখে ছোট শিশুও বুঝে। কিন্তু আমাদের সরকারি মহল প্রমানে বিশ্বাসী। চোখে যেটা দেখে তাতে তারা বিশ্বাস রাখতে পারেনে। কারন মাঝে মধ্যে চোখ ও আমাদের বিরোধীতা করে। জাতীয় সংবাদ মাধ্যম গুলোতে আত্মহত্যা বলে প্রচার চলছে । যদি সে ফাঁস দিতো তবে ওর জিহ্বা বের হয়ে আসতো,চোখ বের হয়ে আসতো,চোখ দিয়ে রক্ত বের হবার মতো ঘটনা ঘটতে পারতো,পা গুলো শূন্যে থাকতো। আশে পাশের সব জিনিস লন্ডভন্ড হয়ে যেত। কারন মানুষের যখন শ্বাস নালি বন্ধ হয়ে রগে টান লাগে তখন মানুষ বাঁচার চেষ্টা করে।এগুলোর কোনোকিছুই হয়নি। ভিডিও ও ছবিতে দেখা যায় কে শান্ত মেয়েটির মতো ঘুমাচ্ছে সে মুখ দিয়ে সামন্য স্বাদা ফ্যানা বের হয়েছে। যা বিষ পান করলে বা গলাটিপে হত্যা করলে দেখা যায়। পুলিশ ডিপার্টমেন্ট এটার সঠিক তদন্ত করবে না বা কেউ করতে চাইলে তাকে বাধা প্রদান করবে কারন সত্য সামনে আসলে তাদের ডিপার্টমেন্টের বদনাম হবে। এর সাথে জড়িত বড় বড় রাঘব বোয়ালেরা। যারা ইশারায় অনেক কিছু করে ফেলতে পারে। বাংলাদেশে হরহামেশা এমন ঘটনা ঘটার মূখ্য কারন সঠিক বিচার ব্যবস্থার অভাব। অপরাধীকে সঠিক শাস্তি প্রধান করা হয় না। বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশ গুলোতে টাকা কথা বলে। বিচারক যেখানে দুর্নীতিবাজ অপরাধীর সেখানে মহাউৎসব। এভাবে চলতে থাকলে দেশের নিরীহ মানুষের বেঁচে থাকা কষ্টকর হয়ে যাবে। তাই আইনকে কঠোর থেকে কঠোর করার বিনীত অনুরোধ জানাচ্ছি। সুন্দর বাংলাদেশ গড়তে সঠিক বিচার ব্যবস্থার বিকল্প নেই।
লেখক: ইমন হাওলাদার
তরুণ লেখক ও শিক্ষার্থী
© Deshchitro 2024