|
Date: 2025-03-01 23:09:09 |
চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে র্যাব কর্মকর্তা রসুল আহমদ নিজামী ও তার পরিবাবের অবৈধ দখলকৃত জমি উদ্ধারের দাবীতে সংবাদ সম্মেলন করেছে ভুক্তভোগী পরিবার। শনিবার (১ মার্চ) উপজেলার একটি রেস্টুরেন্টে সংবাদ সম্মেলন করেন তাজুল ইসলাম নামের এক ব্যক্তি। তিনি মিরসরাই উপজেলার ৭ নম্বর কাটাছরা ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের তেতৈয়া গ্রামের ধনকাজী জমাদার বাড়ী প্রকাশ বশর মেম্বার বাড়ীর বাসিন্দা। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন তাজুল ইসলামের ছেলে তারিফুল ইসলাম, ভাগিনা মীর হোসেন সোহেল, ভাগিনা ইকবাল হোসেন খোকন। র্যাব কর্মকর্তা রসুল আহমদ নিজামী বর্তমানে র্যাব ফোর্সেস সদর দপ্তর-ঢাকার সহকারী পুলিশ সুপার সহকারী পরিচালক (আরঅ্যান্ডডি সেল) হিসেবে কর্মরত রয়েছেন।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে তাজুল ইসলাম জানান, মিরসরাই উপজেলার ৭ নম্বর কাটাছরা ইউনিয়নের কাটাছরা মৌজায় আমাদের পৈত্রিক সম্পত্তি ২৬১৫ দাগে ২৯ শতক নাল জমি রয়েছে। এছাড়া কাটাছরা মৌজায় ৩১৫৯ দাগে নাল জমি রয়েছে ১৫ শতক, ৩১৪০ দাগে নাল জমি রয়েছে ৬ শতক। আমাদের জায়গা জমির অধিকাংশের কাগজপত্র ১৯৭১ সালে বসতঘরে আগুনে পুড়ে যায়। পরবর্তীতে সেগুলো উদ্ধার করলেও ২০২০ সালে ফের অগ্নিকান্ডের ঘটনায় আবারো কাগজপত্রগুলো পুড়ে যায়। এতে করে আমরা চরম বিপাকে পড়ে যাই। পুড়ে যাওয়া পরবর্তী সময়ে আমরা অন্যদাগের কাগজপত্র উদ্ধার করতে না পারলেও কাটাছরা মৌজায় আমাদের পৈত্রিক সম্পত্তি ২৬১৫ দাগে ২৯ শতক নাল জমির কাগজপত্র উদ্ধার করতে সক্ষম হয়েছি এবং অন্যগুলোও উদ্ধারের জন্য জোর প্রচেষ্টা চালাচ্ছি। ইতিমধ্যে ১৯৭৩ সালে পুলিশ কর্মকর্তা রসুল আহমদ নিজামীর বাবা আবুল বশরকে আমাদের ২৬১৫ দাগে ২৯ শতক, ৩১৫৯ দাগে ১৫ শতক, ৩১৪০ দাগে ৬ শতক জমি বর্গা দেওয়া হয়। ১৯৭৩ থেকে তারা বর্গা চাষাবাদ করলেও জমিতে উৎপাদিত ফসলাদি না দেওয়ায় পরবর্তীতে আমরা ১৯৭৬ সালে বর্গার মালিকানা পরিবর্তন করে স্থানীয় বাসিন্দা মজিবুল হক ও চৌধুরীকে বর্গা দিই। ওই বর্গাচাষীরা চাষাবাদের জন্য জমিতে গেলে তাদের মারধর করে পুলিশ কর্মকর্তা রসুল আহমদ নিজামীর স্বজনরা। ২০০৮ সালে পুলিশ কর্মকর্তা রসুল আহমদ নিজামীর বাবা আবুল বশর মারা গেলে ওইদিন আমাদের সম্পত্তির বিরোধ নিষ্পত্তির দাবী নিয়ে ওদের বাড়ীতে ছুটে যাই। তখন আবুল বশরের ভাইপো নুর উদ্দিন জাহেদ ও ফজলুল হক বিষয়টি সমাধান করার আশ্বাস দেন। কিন্তু পরবর্তীতে আমরা তাদের কাছে বারবার বিরোধ নিরসনের জন্য বললেও তারা কোন সাড়া দেয়নি। ২০১৯ সালে আমাদের ২৬১৫ দাগের ২৯ শতক নাল জমি থেকে জোরপূর্বক প্রায় ৯ লক্ষ টাকার মাটি বিক্রি করে দেয় পুলিশ কর্মকর্তা রসুল আহমদ নিজামী। মাটি বিক্রির খবর পেয়ে আমরা আমাদের জমিতে গেলে আমি তাজুল ইসলাম, আমার ভাই সিরাজুল ইসলামের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজীর অভিযোগ এনে জোরারগঞ্জ থানা পুলিশকে দিয়ে হয়রানি করায়। রসুল আহমদ নিজামী একজন উর্দ্ধতন পুলিশ কর্মকর্তা হওয়ায় ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে জোরারগঞ্জ থানায় প্রভাব বিস্তার করেন। জোরারগঞ্জ থানা পুলিশ মাটি বিক্রির ঘটনাস্থলে গিয়ে ঘটনার মূল বিষয় জানতে পেরে আমাদেরকে থানায় গিয়ে যোগাযোগ করতে বললে আমরা থানায় যাই। থানায় গেলে পুলিশ গ্রাম্য সালিশের মাধ্যমে বিষয়টি সমাধান করার পরামর্শ দেন। তাতেও আমাদের সম্পত্তির দখলদার পুলিশ কর্মকর্তা রসুল আহমদ নিজামী গংরা বিষয়টি আমলে নেয়নি। সর্বশেষ ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে পুলিশ কর্মকর্তা রসুল আহমদ নিজামীর ভাই জিন্নাহর সাথে জমি নিয়ে বিরোধের বিষয়টি সমাধানের জন্য তাদের বাড়ীতে গেলে তারা আমাদেরকে কোন পাত্তা না দিয়ে জমি পেলে আদালতে ‘মামলা কর’ বলে বিষয়টি এড়িয়ে যায়। সবশেষে আমরা উপায়ান্ত না পেয়ে সাংবাদিকদের শরনাপন্ন হয়েছি। আশা করি আপনাদের লিখনীর মাধ্যমে আমাদের সম্পত্তি আমরা বুঝে পাবো।
তাজুল ইসলামের ছেলে তারিফুল ইসলাম জানান, রসুল আহমদ নিজামী পুলিশের বিভিন্ন পর্যায়ে বিভিন্ন জায়গায় কর্মরত ছিলেন। বর্তমানে তিনি র্যাব ফোর্সেস সদর দপ্তর-ঢাকার সহকারী পুলিশ সুপার সহকারী পরিচালক (আরঅ্যান্ডডি সেল) হিসেবে কর্মরত রয়েছেন। ইতিপূর্বে তিনি বিজয়নগর ও আখাউড়া থানার ওসি, কক্সবাজার উখিয়ার সহকারী পুলিশ সুপার ও ৮ এপিবিএন’র পানবাজার পুলিশ ক্যাম্পের সহকারী ক্যাম্প কমান্ডার, চাঁদপুর জেলার পুলিশ পরিদর্শক (নিরস্ত্র)সহ অসংখ্য জেলা ও উপজেলায় বিভিন্ন পদে কর্মরত ছিলেন। তিনি পুলিশের ভিবিন্ন পর্যায়ে কর্মরত থাকার কারণে আমাদের ন্যায্য পাওনা থেকে আমাদের দীর্ঘ প্রায় ৫০ বছর যাবত বঞ্চিত করে রেখেছেন। আমরা আশা করছি শীঘ্রই এই বিষয়ে তিনি একটি সুন্দর সুরাহা করবেন।
এবিষয়ে র্যাব কর্মকর্তা রসুল আহমদ নিজামী বলেন, আমার বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলনে করা অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বানোয়াট। ৫০ বছর এই জায়গা আমাদের দখলে রয়েছে। জায়গা নিয়ে তারা কখনো আমার সাথে বসেনি, আমাকে জানায়ওনি। ওরা কাগজপত্র দেখাতে পারলে তাদের জায়গা তারা নিয়ে যাবে, আমরা কেন দখল করে রাখবো?
© Deshchitro 2024