প্রতিটি অর্জনের পিছনে লুকিয়ে থাকে হাজারো গল্প। আজ আমি একজন দুর্দান্ত ক্ষুদে দৌড়বিদের কথা তুল ধরবো। যে এ বছর ২০০ মিটার দৌড় প্রতিযোগিতায় ১ম স্থান অর্জন করে দেশ সেরা দৌড়বিদদের তালিকায় নিজের নাম লিখিয়েছেন। তার সাক্ষাৎকার দিয়েছেন ঢাকা কলেজের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী সাকিবুল হাছান।
মারুফ ইসলাম শিদলাই আশরাফ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী। তিনি টানা তিন বছর ধরে জাতীয় পর্যায়ে এথলেটিক্স (দৌড়) ইভেন্টে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এ বছর ২০০ মিটার দৌড় প্রতিযোগিতায় ১ম স্থান অর্জন করে দেশ সেরা দৌড়বিদদের তালিকায় নিজের নাম লিখিয়ে তার কাঙ্খিত স্বপ্ন পূরণ করেন।
মারুফ ইসলাম বলেন, " আমি টানা তিন বছর ধরে জাতীয় পর্যায়ে অ্যাটলেটিক্স দৌড় ইভেন্টে প্রতিদ্বন্দিতা করে এ বছর ২০০মি: দৌড়ে ১ম স্থান অর্জন করে দেশ সেরা দৌড়বীদ দের তালিকায় নিজের নাম লিখিয়ে আমার কাঙ্খিত স্বপ্ন পূরন করতে সক্ষম হই এতে আমি অনেক খুশি। আমার এই স্বপ্ন পূরণে সবচেয়ে বেশি অবদান রেখেছেন আমাদের বিদ্যালয়ের সম্মানিত প্রধান শিক্ষক মুমিনুল হক ভূয়া স্যার এবং জনাব রফিকুল ইসলাম স্যার। তাদের দুজনের উদ্যেগ ও প্রচেষ্টায় আমি এই পর্যায় আসতে পেরেছি। তারা সবসময় আমাকে সাহস ও আত্মবিশ্বাস দিয়েছে।
সাত বছর আগে আমার বাবা মারা যান। কিন্তুু আমার মা এবং এই দুজন স্যার আমাকে বাবার অভাব বুঝতেই দেননি। তাদের প্রতি আমি সারাজীবন কৃতজ্ঞতা থাকবো। আমি গত ২৩ ও ২৪ সালে শীতকালীন ক্রিয়া প্রতিযোগিতায় উপজেলা, জেলা, উপঅঞ্চল, অঞ্চলে জাতীয় পর্যায়ে উত্তীর্ণ হই। কিন্তু জাতীয় পর্যায়ে পুরস্কার আনতে পারিনি কিন্তু এবার ২০২৫ সালে জাতীয় পর্যায়ে খেলে আমি প্রথম ও দ্বিতীয় স্থান অধিকার করে স্কুলের সম্মান ও শিক্ষকদের মুখ উজ্জ্বল করতে পেরে আমি খুবিই খুশি। অবশেষে একটাই কথা বলতে চাই সবাই আমার জন্য সবাই দোয়া করবেন। আমি যেন আন্তর্জাতিক পর্যায়ে খেলতে পারি এবং আমাদের স্কুলের সম্মান ও শিক্ষকদের সম্মান রাখতে পাড়ি।
মারুফের এই সাফল্যে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো: মমিনুল হক ভূইয়া বলেন, "আমাদের বিদ্যালয়ের ক্রীড়া শিক্ষক রফিক স্যার ২০২৩ সালের বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতার বাছাই পর্বে তার দৌড়ের সাফল্য দেখে তার খোঁজ খবর নেন এবং আমাকে জানান এই ছেলেটা এতিম! তাকে গাইড করলে সে হয়তো দৌড়ে অনেক ভালো করতে পারবে। আমিও তার দৌড় দেখে খুবই খুশি হই। তারপর থেকেই তাকে নিয়ে স্বপ্ন দেখা শুরু।
২০২৩ সালের ৫১তম জাতীয় শীতকালীন ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় মধ্যম বালক দলে উপজেলা, জেলা, উপ-অঞ্চল এবং অঞ্চল এই সবগুলো প্রতিযোগিতায় বিজয়ী হয়ে জাতীয় পর্যায়ে এসে অল্পের জন্য হেরে যায়! কিন্তু তার এই অর্জনে আমরা বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ অনেক খুশি হই। পরবর্তী বছরের জন্য তাকে আরও প্রস্তুতি নিতে উৎসাহ দেই। ২০২৪ সালে আবারও উপজেলা, জেলা, উপ-অঞ্চল, অঞ্চল এই সবগুলো প্রতিযোগিতায় বিজয়ী হয়ে জাতীয় পর্যায়ে ব্যার্থ হয়। কিন্তু আমরা হাল ছেড়ে দেই নি।
এবছর ২০২৫ সালে, মারুফ উপজেলা এবং জেলায় ১০০ মিটার, ২০০ মিটার, ৪০০ মিটার এবং রিলে দৌড় এই সবকয়টি ইভেন্টেই ১ম হয়ে উপ-অঞ্চলে যায়। তবে সে সময় মারুফ মাটিতে পড়ে গিয়ে মারাত্মক আহত হয়। তার দুই হাঁটুর চামড়া ছিলে যায়। অথচ মাত্র চারদিন পর অঞ্চলের প্রতিযোগিতা। এই অবস্থায় সে আমি অনেকটা হাল ছেড়ে দিয়েছি, ভেবেছি জাতীয় পর্যায়ে শ্রেষ্ঠত্বের স্বীকৃতি হয়তো তার ভাগ্যে নেই! কিন্তু তাকে বুঝতে না দিয়ে উৎসাহ দেই। কারণ সে সে প্রচন্ড আত্মবিশ্বাসী। মারুফের পায়ে ব্যাথা নিয়েই সে গত ২০ ফেব্রুয়ারি অঞ্চলে অংশগ্রহণ করে এবং ২০০ মিটার দৌড়ে ২য় এবং রিলে দৌড়ে ১ম স্থান অর্জন করে জাতীয় পর্যায়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার সুযোগ পায়।
২৩ ফেব্রুয়ারি বিকেলে সে জীবনের শত প্রতিকূলতা অতিক্রম করে তার স্বপ্ন পূরণ করে অর্থাৎ মারুফ ২০২৫ সালের শীতকালীন ২০০ মিটার দৌড় প্রতিযোগিতায় মারুফ প্রথম স্থান অর্জন করে। সে একজন সম্ভাবনাময় এথলেট। আমার বিশ্বাস, উপযুক্ত প্রশিক্ষণ এবং গাইডলাইন পেলে সে একদিন দেশের সুনাম বয়ে আনতে পারবে। আমি পিতৃহারা, এতিম এবং সম্ভাবনাময় ক্ষুদে দৌড়বিদ মারুফের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ও দেশবাসী সকলের দোয়া ও সহযোগিতা কামনা করছি।