|
Date: 2025-03-03 16:23:08 |
সোমবার (৩ মার্চ) সকাল ১১টায় সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে আহত ও ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্যদের উদ্যোগে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। সাতক্ষীরার সাবেক জেলা প্রশাসক ও বর্তমানে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব নাজমুল আহসানের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের দাবিতে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে। তার বিরুদ্ধে অবৈধ নির্বাচন, হত্যা, গুমসহ বিভিন্ন অপকর্মে জড়িত থাকার অভিযোগে মানববন্ধনে বক্তব্য দেন পুলিশের গুলিতে পা হারানো এস এম আহাদ, শহর আলী, আব্দুল গফুর, নিহতদের পরিবারের সদস্য খোরশেদ আলম, ফকরুল হাসানসহ আরও অনেকে।
বক্তারা অভিযোগ করেন, ২০১৩-১৪ সালে সাতক্ষীরায় পুলিশের গুলিতে অর্ধশতাধিক বিএনপি ও জামায়াত-শিবির নেতাকর্মী নিহত হন, যার নেপথ্যে ছিলেন তৎকালীন পুলিশ সুপার চৌধুরী মঞ্জুরুল কবির ও জেলা প্রশাসক নাজমুল আহসান। বক্তারা দাবি করেন, স্বৈরাচারী সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় এই হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে, এবং অপরাধীদের শাস্তি নিশ্চিত না হলে কঠোর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দেন তারা।
ভুক্তভোগী পরিবারগুলোর দাবি, ২০১৩-১৪ সালে সাতক্ষীরায় সহিংস অভিযানের নেতৃত্বে ছিলেন তৎকালীন জেলা প্রশাসক নাজমুল আহসান ও পুলিশ সুপার চৌধুরী মঞ্জুর কবির। যৌথবাহিনীর অভিযানে রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের বাড়িঘর গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়, অসংখ্য মানুষ গুম ও বিচারবহির্ভূত হত্যার শিকার হন।
২০১৩ সালের ৩০ ডিসেম্বর যৌথবাহিনীর গুলিতে নিহত হন আগরদাড়ি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও বিএনপি নেতা আনোয়ারুল ইসলাম (৪৫)। পরিবারের অভিযোগ, তাকে বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে গিয়ে থানায় নির্যাতন করা হয় এবং পরে ফাঁকা মাঠে নিয়ে গুলি করে হত্যা করা হয়।
২০১৪ সালের ২৪ জানুয়ারি দেবহাটার কুলিয়া গ্রাম থেকে ছাত্রশিবির নেতা আবুল কালাম (১৭) ও জামায়াত কর্মী মারুফ হাসান ছোটনকে (২২) গ্রেফতারের পর থানায় ব্যাপক নির্যাতন চালানো হয়। দুই দিন পর তাদের নারকেলি গ্রামে নিয়ে গুলি করে হত্যা করা হয়।
এছাড়া, ২০১৪ সালের ২৭ এপ্রিল সাতক্ষীরার কামালনগরে ছাত্রশিবিরের মেসে অভিযান চালিয়ে শহর শিবিরের সেক্রেটারি আমিনুর রহমানকে গুলি করে হত্যা করা হয়। এ সময় আরও সাতজন গুলিবিদ্ধ হন। ২০১৪ সালের ২০ জানুয়ারি তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাতক্ষীরায় যৌথবাহিনীর অভিযানের ঘোষণা দেন। সাতক্ষীরা সার্কিট হাউজে তিনি বলেন, “বিএনপি-জামায়াতের সন্ত্রাস দমন করতে যা যা করা দরকার, তা করা হবে।” তার সফরে তৎকালীন জেলা প্রশাসক নাজমুল আহসান উপস্থিত ছিলেন।
নাগরিক সমাজ ও ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করেন, ওই সময় সাতক্ষীরায় রাজনৈতিক সহিংসতায় ৪৩ জন নিহত হন, যার মধ্যে যৌথবাহিনীর গুলিতে নিহত হন ২৭ জন বিএনপি ও জামায়াত-শিবির নেতাকর্মী। আরও শতাধিক মানুষ আহত হন, অনেকের বাড়িঘর ধ্বংস করা হয়।
মানববন্ধন শেষে ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্যরা সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক মোস্তাক আহমেদের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী বরাবর একটি স্মারকলিপি প্রদান করেন।
© Deshchitro 2024