◾মুহা.আব্দুল্লাহ ইমরান || রমজান মাস পবিত্র কুরআন নাজিলের মাস। এ মাসেই মহাগ্রন্থ আল কুরআন আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে হযরত মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর উপর অবতীর্ণ করা হয়েছিল। এ মাসের শ্রেষ্ঠত্বের অন্যতম কারণ এটি একটি।


আল্লাহ তাআলার ইরশাদ করেন।

شَہۡرُ رَمَضَانَ الَّذِیۡۤ اُنۡزِلَ فِیۡہِ الۡقُرۡاٰنُ ہُدًی لِّلنَّاسِ وَبَیِّنٰتٍ

مِّنَ الۡہُدٰی وَالۡفُرۡقَانِ ۚ

অর্থাত: রমজান মাস, যাতে কুরআন নাযিল করা হয়েছে মানুষের জন্য হিদায়াতস্বরূপ এবং হিদায়াতের সুস্পষ্ট নিদর্শনাবলী ও সত্য-মিথ্যার পার্থক্যকারীরূপে। (সুরা বাকারা : আয়াত : ১৮৫)


এ মর্যাদাপূর্ণ মাসে রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এতো পরিমাণ আমল করতেন যা অন্য মাসে সচরাচর করতেন না। আর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর এ মাসের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ আমল ছিলো কুরআন তিলাওয়াত। এ মাসে এমন কোনো দিন অতিবাহিত হতো না যে দিন তিনি কুরআন তিলাওয়াত করতেন না।


হাদিস শরীফে এসেছে।

হযরত ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত;

তিনি বলেন আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ছিলেন সর্বশ্রেষ্ঠ দানশীল। রমজানে তিনি আরো অধিক দানশীল হতেন, যখন জিবরীল (আ.) তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতেন। আর রমজানের প্রতি রাতেই জিবরীল (আ.) তাঁর সাথে দেখা করতেন এবং তারা একে অপরকে কুরআন তিলাওয়াত করে শোনাতেন। নিশ্চয়ই আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) রহমতের বায়ু অপেক্ষাও অধিক দানশীল ছিলেন।

(সহিহ বুখারী)


কুরআন তিলাওয়াত কারীর জন্য আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে স্পেশাল কিছু প্রতিদান রয়েছে। তার মধ্যে অন্যতম একটি হলো, প্রত্যেক হরফে যে সওয়াব হবে আল্লাহ তায়ালার তা দশ গুণ বৃদ্ধি করে দিবেন। যদি একটু যদি লক্ষ্য করি, কুরআন মাজীদে লক্ষ লক্ষ হরফ রয়েছে। প্রত্যেকটি হরফে দশ নেকী হলে কি পরিমান নেকী হবে (সুবহানাল্লাহ)। যেমনিভাবে হাদিস শরীফে এসেছে।


হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসঊদ (রা.) থেকে বর্ণিত;

তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, “যে ব্যক্তি আল্লাহর কিতাব (কুরআন মাজীদ) এর একটি বর্ণ পাঠ করবে, তার একটি নেকী হবে । আর একটি নেকী দশটি নেকীর সমান হয় । আমি বলছি না যে, ‘আলিফ-লাম-মীম’ একটি বর্ণ; বরং আলিফ একটি বর্ণ, লাম একটি বর্ণ এবং মীম একটি বর্ণ ।” (অর্থাৎ তিনটি বর্ণ দ্বারা গঠিত ‘আলিফ-লাম-মীম, যার নেকীর সংখ্যা হবে ত্রিশ ।

(জামে তিরমিযী)


শুধু তাই নয়, কুরআন মাজীদ হাশরের ময়দানে কঠিন বিপদের মুহুর্তে তার পাঠকের ক্ষমার জন্য স্বয়ং নিজেই আল্লাহ তায়ালার নিকট সুপারিশ করবে। অন্য কোনো আমলের ব্যাপারে এভাবে বলা হয় নি যে হুবহু আমল নিজেই সুপারিশ করবে। কেবলমাত্র কুরআনকেই আল্লাহ তায়ালার এ ক্ষমতা দান করেছেন। হাদিস শরীফে এসেছে।


আবূ উমামাহ (রা.) থেকে বর্ণিত;

তিনি বলেন, আমি রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কে এ কথা বলতে শুনেছি যে, “তোমরা কুরআন মাজীদ পাঠ কর । কেননা, কিয়ামতের দিন কুরআন, তার পাঠকের জন্য সুপারিশকারী হিসাবে আগমন করবে"।

(সহিহ মুসলিম)


কুরআন মাজীদ সহিহ শুদ্ধভাবে তারতীলের সহিত তিলাওয়াত কারীর আরো একটি স্পেশাল উপহার হলো তিনি যত আয়াত তেলাওয়াত করতে পারবেন আল্লাহ তায়ালার তাকে জান্নাতে তত উঁচু মর্যাদার অধিকারী করবেন। এজন্য কুরআন শুদ্ধভাবে তিলাওয়াতের পাশাপাশি কিছু আয়াত মুখস্থ করাও বাঞ্ছনীয়।


হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) থেকে বর্ণিত;


নবী করিম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, (ক্বিয়ামাতের দিন) কুরআনের বাহককে বলা হবে, পাঠ করতে থাক ও উপরে আরোহণ করতে থাক এবং দুনিয়াতে যেভাবে ধীরে সুস্থে পাঠ করতে ঠিক সেরূপে ধীরে সুস্থে পাঠ করতে থাক। যে আয়াতে তোমার পাঠ সমাপ্ত হবে সেখানেই তোমার স্থান।

(জামে তিরমিজী)


উপরোক্ত হাদিসে পরিলক্ষিত যে, কুরআন তিলাওয়াত মহা মূল্যবান আমল। সাথে সাথে যারা বুঝার প্রতেষ্টা করবেন তারাতো আরো বেশি মর্যাদাশীল হবেন ইনশাআল্লাহ। আল্লাহ তাআলার আমাদের সকলকে আমল করার তাওফিক দান করুক। আমিন।


লেখক : মুহা.আব্দুল্লাহ ইমরান


প্রকাশক : কাজী জসিম উদ্দিন   |   সম্পাদক : ওয়াহিদুজ্জামান

© Deshchitro 2024