বর্তমান সমাজে চুরি, ডাকাতি, ছিনতাইয়ের পাশাপাশি বেড়ে উঠেছে চরম ঘৃণিত ও নষ্ট মানসিকতার রোগ 'ধর্ষণ'। ধর্ষণ বর্তমানে মহামারি আকার ধারণ করেছে। এটি মানবিক বিপর্যয়ও বটে। ধর্ষণ নারীদের নিরাপত্তা ও মর্যাদাকে ক্ষুণ্ণ করে। প্রতিনিয়তই দেশের কোথাও না কোথাও ধর্ষণের শিকার হচ্ছে শিশু থেকে তরুণী এমনকি বিবাহিত মহিলারাও। শিশুকে অপহরণ করে ধর্ষণ তারপর হত্যা চেষ্টা, মায়ের সামনে মেয়েকে ধর্ষণ, স্বামীকে বেঁধে রেখে স্ত্রীকে ধর্ষণ, প্রেমের প্রস্তাবে রাজী না হওয়ায় রাস্তা থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ আজ স্বাভাবিক ঘটনায় পরিণত হয়েছে। কিন্তু এর বিচার হচ্ছে কোথায়? ধর্ষকরা কি শাস্তির আওতায় আসছে? ধর্ষকদের উপযুক্ত শাস্তির আওতায় না আনায় তারা বারবার পার পেয়ে যাচ্ছে এবং ধর্ষণকান্ড দিনকে দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। অন্যদিকে এসব ভুক্তভোগীরাও সমাজ ও মান-সম্মানের ভয়ে সামনে আসতে পারছে না, উপযুক্ত বিচার চাইতে পারছে না। ফলে ধর্ষণ সংস্কৃতি বেড়েই চলেছে। রাষ্ট্র কি তবে নারীদের নিরাপত্তা প্রদানে ব্যর্থ? কেন ধর্ষণ এমন মহামারী আকার ধারণ করেছে? ধর্ষণের কারণ হতে পারে পুরুষদের সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি। পুরুষরা কি এখনো নারীকে ভোগের পণ্য মনে করে? নারীদের কাজ কি শুধুই পুরুষের চাহিদা মেটানো? বর্তমানে ধর্ষণের জন্য ভুক্তভোগীকে বেশি দায়ী করা হয়। ভুক্তভোগীর পোশাক-পরিচ্ছদ, চলাফেরা, পারিবারিক শিক্ষাকেই এখনো আমাদের সমাজ দায়ী করে। কিন্তু ধর্ষকের পারিবারিক শিক্ষা নিয়ে কেউ কখনো প্রশ্ন তোলে না। ভুক্তভোগীর প্রতি সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি তাকে সমাজ থেকে বিছিন্ন করে ফেলে। বিচার চাইতে গিয়ে তাকে হেনস্তার শিকার হতে হয়। ধর্ষণ বর্তমানে মরণব্যাধিতে পরিণত হয়েছে। বিচার না পেয়ে অনেক ভুক্তভোগীই শেষ পর্যন্তু আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়। ধর্ষকের বিরুদ্ধে শাস্তির ব্যবস্থা করতে গেলে ভুক্তভোগীকে বিভিন্নভাবে হুমকির সম্মুক্ষীণ হতে হয়। উপায় না পেয়ে ভুক্তভোগী বিচারকাজ থেকে সরে আসে। দিনশেষে ধর্ষকের কোনো বিচারই হয় না। ২০২০ সাল থেকে ২০২৪, এ পাঁচ বছরে ধর্ষনের শিকার হয়েছে ৬ হাজার ৩০৫ জন নারী ও শিশু যাদের মধ্যে ৩ হাজার ৪৭১ জনের বয়স ১৮ বছরের নিচে। চলতি বছরের গত দুই মাসে ধর্ষণের শিকার হয়েছে প্রায় ১০৭ জন যাদের মধ্যে ৬৬ জনের বয়স ১৮ বছরের নিচে। গত দুই মাসে ২২৪ জন নারী ও শিশু শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের শিকার হয়েছে। বিকৃত মানসিকতাও ধর্ষণের জন্য একটি বড় কারণ। আসলে মানসিকভাবে বিকৃতি হচ্ছে কিভাবে? পর্ণোগ্রাফির সহজলভ্যতা, অবাধ ইন্টারনেটের ব্যবহার, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিকৃত কন্টেন্ট এর মাধ্যমেই বর্তমান সমাজের মানসিকতা বিকৃত হচ্ছে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে বয়োঃবৃদ্ধরাও ধর্ষণের জন্য দায়ী। গত কিছুদিনের পত্রিকায় খবর মিলছে যে, খাবার ও বেলুন কিনে দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে দুই শিশুকে ধর্ষণ করে সেকান্দার আলী নামের এক বৃদ্ধ। বোনের বাড়িতে বেড়াতে গিয়ে ধর্ষণের শিকার ৮ বছরের শিশু। শিক্ষক তার ছাত্রীকে ধর্ষণ। এছাড়া নানান কিছুর প্রলোভন দেখিয়ে ধরে নিয়ে বিভিন্ন বয়সিরা শিশুদের ধর্ষণ করছে, সবশেষে হত্যা। তবে এটি কি মানবিক বিপর্যয় নয়? কিছু কিছু ধর্ষক অর্থ দিয়ে ধর্ষণের ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করে। আবার আবার ধর্ষণের ভিডিও মোবাইল ফোনে ধারণ করে তা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে অর্থ আদায় করা বা পুনঃরায় শারীরিক সম্পর্কে জড়ানোর জন্য ভুক্তভোগীকে জোর করে। ধর্ষণ কমাতে হলে মূলত ধর্ষণের শাস্তিকে জোরজার করতে হবে। আইনের কঠোর প্রয়োগ, নাহয় ধর্মীয় পদ্ধতিতে ধর্ষকের শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। ইসলাম ধর্মে ধর্ষণের শাস্তির ক্ষেত্রে বলা হয়েছে পাথর মেরে মৃত্যুদন্ড। ধর্ষকদেরকে উপযুক্ত শাস্তির আওতায় আনা গেলে সমাজে ধর্ষণের পারিমাণ কমানো সম্ভব। এর জন্য প্রয়োজন বিদ্যমান আইনের যথাযথ বাস্তবায়ন। সম্মিলিত শিক্ষাগত, সামাজিক ও আইনগত প্রয়োগ করা ছাড়া ধর্ষণ রোধ করা সম্ভব নয়। নিরাপদ সমাজ গড়তে শুধু আইন পাশ নয় বরং আইনের যথাযথ প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে। ধর্ষণমুক্ত দেশ গড়তে পরিবার হতে শুরু করে সমাজ, সংস্কৃতি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, আইনের যথাযত প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে। এছাড়াও সমাজের সকলকে নৈতিকতার শিক্ষা প্রয়োগ করতে হবে। বিগত কিছুদিনের পরিস্থিতি বিবেচনায় একথা বলা যেতেই পারে যে ধর্ষকের একমাত্র শাস্তি প্রকাশ্যে মৃত্যুদণ্ড। মানুষের আদিম শিক্ষাঘর হলো পরিবার। পরিবার থেকেই নৈতিকতা ও মূল্যবোধকে জাগ্রত করতে হবে এখনই, এই মূহুর্ত থেকে। নারীর প্রতি সম্মান নিয়ে পরিবারের সকলে আলোচনা করতে হবে, পরিবারের কোনো সদস্য যেন সমাজের বোঝা হয়ে না দাঁড়ায় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। আজ হয়তো অন্যের মা-বোন সম্ভ্রম হারাচ্ছে, কাল আপনার আমার মা-বোনের উপর বিপদ আসবে না সে কথা কে বলতে পারে? সমাজকে পঁচে যাওয়ার হাত থেকে রক্ষা করতে আজ থেকেই আমাকে আপনাকে সোচ্চার হতে হবে। যেকোনো অপরাধের জন্য দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। নাফিজ-উর-রহমান শিক্ষার্থী, ঢাকা কলেজ, ঢাকা
প্রকাশক : কাজী জসিম উদ্দিন   |   সম্পাদক : ওয়াহিদুজ্জামান

© Deshchitro 2024