ময়মনসিংহ বিভাগের গৌরীপুর উপজেলার ছেলে তাহমিন ইসলাম আদিব কাব স্কাউটের সর্বোচ্চ পদক **" শাপলা কাব অ্যাওয়ার্ড"** পেয়েছে। আদিব গজন্দর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের স্কাউট দল থেকে উপজেলা, জেলা, আঞ্চলিক ও জাতীয় পর্যায়ের বিভিন্ন পরীক্ষায় কৃতিত্বের সাথে অংশ নিয়ে এ সাফল্য অর্জন করে।  


পাঠ্য শিক্ষার পাশাপাশি স্কাউটিং শিশু-কিশোরদের আত্মপ্রত্যয়ী, পরোপকারী, আত্মনির্ভরশীল ও দেশপ্রেমিক নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। গৌরীপুরের আদিব শাপলা কাব অ্যাওয়ার্ড বিজয়ী হয়ে বলেন, *"আমি এওয়ার্ড পেয়ে খুবই খুশি, কারণ এটি স্কাউটের সর্বোচ্চ পদক। আমি মনে করি, স্কাউটের যাবতীয় কার্যক্রমে অংশ নিয়ে আমরা আত্মপ্রত্যয়ী হতে পারি, অসহায় ও দুর্ঘটনাকবলিত মানুষের পাশে দাঁড়ানোর প্রশিক্ষণ পাই এবং পরিবেশবান্ধব সমাজ ও দেশ গঠনে প্রেরণা পেয়ে থাকি, যা মানবিক চেতনাকে উজ্জীবিত করে। আমি আমার এই অর্জনের পিছনে আমার স্কুলের কাব লিডার রাজিব স্যার, প্রধান শিক্ষক এবং আমার বাবা-মায়ের কাছে কৃতজ্ঞ। বলতে গেলে, তারাই আমাকে স্কাউট কার্যক্রমের সাথে যুক্ত থাকতে সব রকমের অনুপ্রেরণা জুগিয়েছেন।"*  


আদিব জানায়, *"আমরা সূর্য গ্রুপের আওতায় জনস্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা, পরিবেশ সংরক্ষণ, বেগুনি অধ্যায়ের সমাজসেবা, প্রাথমিক প্রতিবিধান, সাক্ষরতা, কৃষ্টি, স্বাস্থ্য সচেতনতা, শিশু অধিকার, বিনোদন, খেলাধুলা, সংগ্রহ, গৃহ পরিচর্যা, আকাশী অধ্যায়ে খেলনা তৈরি, মডেল তৈরি, নকশা তৈরি, সেলাই করা, চিত্রকলা, দড়ির কাজ, কম্পিউটার, সাইকেল চালনা, বই বাঁধাই, ব্যক্তিগত লাইব্রেরি, রান্না, হলুদ অধ্যায়ে কবুতর, মুরগি পালন, হাঁস পালন, কোয়েল পাখি পালন, কমলা অধ্যায়ে ফুলবাগান, সবজি চাষ, বনকলা, কবে চাষ, লাল অধ্যায়ে প্রকৃতি পরিবেশ, পাখি পর্যবেক্ষণ, আবহাওয়া ও ভূগোল পরিপূর্ণভাবে অনুসরণ করে জাতীয় শাপলা কাব অ্যাওয়ার্ড অর্জনে সহায়ক ভূমিকা রাখে।"*  


আদিবের মা ইসরাত জাহান বলেন, *"স্কাউটিং বই-পত্রে সীমাবদ্ধ কোনো বিষয় নয়, এটি মূলত মুক্তাঙ্গনের শিক্ষা। পাঠ্যক্রমিক শিক্ষার পাশাপাশি বর্তমান অবক্ষয় ও মাদকাসক্তির অভিশাপ থেকে মুক্ত থাকার জন্য স্কাউটিং প্রশিক্ষণ গ্রহণ করা জরুরি। এটি শিক্ষার্থীদের পরিচালিত জীবন গঠনে সহায়তা করে এবং প্রকৃত দেশপ্রেমিক নাগরিক হিসেবে গড়ে তোলে।"*  


স্কাউট আন্দোলনের জনক লর্ড ব্যাডেন পাওয়েল ১৮৯৯ সালে এর প্রাথমিক কার্যক্রম শুরু করেছিলেন, পরে তা বিশ্বব্যাপী দ্রুত প্রসার লাভ করে। একজন স্কাউটকে জাতীয় শাপলা কাব অ্যাওয়ার্ড অর্জনে বিভিন্ন ধাপ অতিক্রম করতে হয়। প্রথমে সদস্য ব্যাচ অর্জনের তিন মাস নানা পথ অতিক্রম করে পরীক্ষায় অবতীর্ণ হতে হয়, যেমন **আপন শক্তি, চেষ্টা করি, থাকব ভালো, জানবো জগৎটাকে, আনন্দ উল্লাস, আমিও পারি ও ক্যাম্পিং**। এরপর তারা ব্যাচ অর্জনে চার থেকে ছয় মাস নিবিড়ভাবে অংশ নেয় বিভিন্ন পরবর্তী ধাপে, যেমন **আপন শক্তি, চেষ্টা করি, থাকবো ভালো, জানবো জগৎটাকে, কম্পিউটার পরিচিতি, আনন্দ উল্লাস, আমিও পারি**। পরে গঠন হয় সূর্যগ্রহণ রংধনু গ্রুপ ও ক্যাম্পে। এরপর চাঁদ ব্যাচ অর্জনে চলে নিবিড় প্রশিক্ষণ, যেমন **চেষ্টা করি, থাকবো ভালো, জানবো জগৎটাকে, আনন্দ উল্লাস, আমিও পারি**।  


সূর্যগ্রহণ রংধনু গ্রুপ ক্যাম্পে শিক্ষার্থীদের তৈরি করা হয় চাঁদ-তারা ব্যাচের জন্য। এতে তারা আবারও চার থেকে ছয় মাস **আপন শক্তি**সহ নানা শাখা-প্রশাখায় প্রশিক্ষণ নিয়ে ক্যাম্পিং কার্যক্রমে অংশ নেয়। এর মধ্যে স্কাউটিংয়ের পুরো সময় অন্তত একটি কাব কার্নিভাল, একটি কাব অভিযান, দুটি কাব হলিডে স্কাউট, একটি উপজেলা, জেলা, আঞ্চলিক এবং জাতীয় পর্যায়ে অংশগ্রহণ করে নিজেদের শাপলা কাব অ্যাওয়ার্ডের জন্য প্রস্তুত করে থাকে। সবশেষে শাপলা কাব অ্যাওয়ার্ডের জন্য চলে তিন মাসের নিবিড় অনুশীলন, যা সাফল্যের দিকে নিয়ে যায়।  


গজন্দর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ইউনিট লিডার ও স্কাউট শিক্ষক রাজীব আহমেদ বলেন, *"আমি সত্যিই আনন্দিত, আমার প্রশিক্ষণে তাহমিন ইসলাম আদিব শাপলা কাব অ্যাওয়ার্ড পেয়েছে। আমি মনে করি, এ অর্জন তাকে যেমন আত্মপ্রত্যয়ী করবে, তেমনি দেশ, সমাজ ও মানবতার প্রতি আরও বেশি দায়বদ্ধ করবে।"*  


গজন্দর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সভাপতি বলেন, *"আমার বিদ্যালয় থেকে শাপলা কাব অ্যাওয়ার্ড পেয়ে আদিব আমাদের গৌরবান্বিত করেছে। আমি এজন্য তাকে সাধুবাদ জানাই ও তার মঙ্গল কামনা করি।"*  


-

প্রকাশক : কাজী জসিম উদ্দিন   |   সম্পাদক : ওয়াহিদুজ্জামান

© Deshchitro 2024