জামালপুর আদালতে চেক প্রতারণার একটি মামলায় খোকন সরকার (৩২) নামে একব্যক্তিকে ৬ মাসের কারাদণ্ডের রায় দিয়ে তাঁর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির আদেশ দেন সংশ্লিষ্ট বিচারক। রায় ঘোষণার এক বছর অতিবাহিত হলেও দণ্ডপ্রাপ্ত আসামির বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা পৌঁছেনি সংশ্লিষ্ট থানায়। তবে অর্থ আত্মসাতের পৃথক তিনটি মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা থাকায় খোকনকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে আদালতে সোপর্দ করলেও পরক্ষণেই জামিনে মুক্ত হন তিনি। দণ্ডপ্রাপ্ত খোকন সরকার জামালপুরের ইসলামপুর পৌর শহরের ভেঙ্গুড়া গ্রামের সোনা মিয়ার ছেলে। 

ইসলামপুর থানা সূত্রে জানা গেছে, খোকন সরকারের বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাতে অভিযোগে এনআই এ্যাক্টের ধরায় আদালতে তিনটি মামলা রয়েছে। মামলাগুলোর নম্বর হলো ৪৯ (১)২০২৪, ৩৪০(১)২০২৩ এবং ২৫ (১)২০২৫। এসব মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা থাকায় গত শুক্রবার (৭ মার্চ) রাতে নারায়ণগঞ্জ শহর থেকে খোকনকে গ্রেপ্তার করে ইসলামপুর থানা-পুলিশ। পরদিন শনিবার দুপুরে পুলিশ তাঁকে জামালপুর আদালতে সোপর্দ করে। পরে বিকেলে তিনি মামলাতেই খোকনকে জামিন দেন সংশ্লিষ্ট বিচারক। 

আদালত সূত্রে জানা গেছে, পাঁচ লাখ টাকা আত্মসাতে অভিযোগে ইসলামপুর পৌর শহরের বাসিন্দা সৈয়দ মাসুদুর রহমান রাজা বাদী হয়ে খোকনকে আসামি দিয়ে ২০২৩ সালের ৪ জুন জামালপুরের ইসলামপুর সিআর আমলি আদালতে মামলা করেন। মামলার নম্বর ১৯২। শুনানি শেষে আসামি খোকনকে আদালতে হাজির হওয়ার জন্য সমনের আদেশ দেন বিচারক। ওই বছরের ৬ জুলাই আদালতে থেকে জামিন নেন খোকন। একইদিন বিচারের জন্য মামলটি জেলা ও দায়রা জজ আদালতে প্রেরন করেন সংশ্লিষ্ট বিচারক। ২১ আগষ্ট বিচার নিষ্পত্তির জন্য যুগ্ম ২য় জেলা জজ আদালতে বিচারক মামলাটি বদলির আদেশ দেন। ২০২৪ সালের ১৮ জানুয়ারি আদালতে হাজির না হওয়ায় খোকনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন বিচারক। এরপর খোকন আত্মগোপনে চলে যান। ২০২৪ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি যুগ্ম জেলা জজ ২য় আদালতের বিচারক খোকনের অনুপস্থিতিতে তাঁর বিরুদ্ধে দায়রা নম্বর ৭২৯ (১) ২০২৩ মোকদ্দমায় ৬ মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ডসহ পাঁচ লাখ টাকা জারিমানা করে গ্রেপ্তারি পরোয়ানার আদেশ দেন। ওই গ্রেপ্তারি পরোয়ানা গত এক বছরেও থানায় পৌঁছেনি। 

জামালপুর যুগ্ম জেলা জজ ২য় আদালতের পেশকার নজরুল ইসলাম বলেন, ’আমি এই আদালতে কিছুদিন আগে যোগদান করেছি। যখন মামলাটির রায় ঘোষণা করা হয়েছে, তখন পেশকার ছিলো অন্য একজন। সেকারণেই সাজাপ্রাপ্তা পরোয়ানা দীর্ঘদিনেও থানায় না পৌঁছার বিষয়টি আমি জানি না।’ 

ইসলামপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সাইফুল্লাহ সাইফ বলেন, ’খোকনের বিরুদ্ধে তিনটি মামলার গ্রেপ্তারি পরোয়ানা ছিলো। তাঁকে আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে। তবে তাঁর বিরুদ্ধে সাজাপ্রাপ্ত কোনো পরোয়ানা থানায় আসেনি।’ 

জামালপুর চিপ জুডিশিয়াল আদালতের হাজতখানার দায়িত্বে থাকা পুলিশের সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) মো. সানাদুল হাসান বলেন, ’গত শনিবার দুপুরে এনআই এ্যাক্টের তিনটি মামলায় পরোয়ানাপ্রাপ্ত খোকন সরকার নামে এক আসামিকে আদালতে সোপর্দ করা হয়। বিকেলে আদালতের জামিনে তিনি বের হয়ে যান।’ 

মামলার বাদী মাসুদুর রহমান রাজা বলেন, 'আসামি খোকনকে ইসলামপুর থানা-পুলিশ গ্রেপ্তার করার খবর পেয়ে থানায় গিয়ে জানতে পারি তাঁর বিরুদ্ধে ছয় মাসের সাজাপ্রাপ্ত গ্রেপ্তারি পরোয়ানা এক বছরেও থানায় পাঠায়নি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। পরে সংশ্লিষ্ট  পেশকারের মাধ্যমে সাজাপ্রাপ্ত পরোয়ানা কারাগারে পাঠাই। পরে জানতে পারি কারাগারে না গিয়েই খোকন গত শনিবারে জামিনে বের হয়েছে।'

প্রকাশক : কাজী জসিম উদ্দিন   |   সম্পাদক : ওয়াহিদুজ্জামান

© Deshchitro 2024