
প্রিয় সমাজ তোমার কাছে এই চিঠিটা লিখতে আমার ভীষণ লজ্জা লাগছে,চোখ কান বন্ধ রেখে ও স্বস্তি পাচ্ছি না। আমার মৃত্যুর অনুভূতি যেন বার বার জেগে যাচ্ছে জোর করে, ফেলে রাখতে পারছি না। লজ্জায় মনে হচ্ছে নিজেকেই ফাঁসিতে ঝুলিয়ে দেই,আর বলতে ইচ্ছে করছে ভালো থেক সমাজ। কারণ আমরা এখনো সেই অন্ধকারে বাস করি, যেখানে নারীর শরীরকে একটা যুদ্ধক্ষেত্র মনে করা হয়।নারীকে পণ্য মনে করা হয়। যেখানে প্রজাপ্রতির সাথে খেলায় মেতে থাকা শৈশবের শিশু থেকে শুরু করে কিশোরী, প্রাপ্ত বয়স্ক নারী, বৃদ্ধ কেউ রেহাই পাচ্ছে না রক্ত খেকো হায়নাদের আঁচড় থেকে, যেখানে ক্ষমতার নাম করে, লালসার নাম করে, পশুত্বের আস্ফালনে একজন মানুষের জীবন শেষ করে দেওয়া হয়। যেখানে ভুক্তভোগীর বুভুক্ষু হাহাকার আর এলিট শ্রেণির আনন্দ রোলের প্রতিযোগিতা। আর আইন, এটা তো টাকায় কেনা একটি সংখ্যা মাত্র। সেখানে শান্তি বায়ু বড্ড অসহায় মনে হচ্ছে। ধর্ষণ কি শুধুই শরীরের ক্ষত,না এটা তার চেয়েও ভয়ংকর কিছু। এটা আত্মার মৃত্যু, বিশ্বাসের মৃত্যু, নিরাপত্তার মৃত্যু। প্রতিবার যখন কোনো মেয়ে রাস্তায় বের হয়, ওর ভেতরে একটা ভয় কাজ করে—"আমি কি নিরাপদ?" অথচ এই প্রশ্নটি তার অস্থিমজ্জায় আসার কথা ছিলো না, কারণ পৃথিবীটা কারো একার না, এটা আমাদের সবার।
কিন্তু আমাদের সমাজ কী করে। সে ধর্ষকের বিচার চায় না। সে ধর্ষিতার পোশাক নিয়ে কথা বলে, তার চালচলন নিয়ে বিচার বসায়। সে বলে, "মেয়েটার দোষ ছিল"—এ যেন এক অদ্ভুত নিষ্ঠুর পরিহাস! যে সমাজে ধর্ষিতার কবর খোঁড়ার আগে ধর্ষকের কবর খোঁড়ার কথা ছিল সেই সমাজে ধর্ষক বুক ফুলিয়ে ঘুরে বেড়ায় আর ধর্ষিতারা নিক্ষিপ্ত হয় ঘৃণার আস্তা কুঁড়ে। ডুবে যায় কবরের অন্ধকারে। প্রতিদিনের খবরের পাতায় একেকটা ধর্ষণের গল্প পড়তে পড়তে আমাদের অনুভূতি বিকলাঙ্গ হয়ে গেছে। আমরা ক্ষণিকের জন্য প্রতিবাদ করি, তারপর ভুলে যাই। কিন্তু যে মেয়ে ধর্ষণের শিকার হয়, সে কি ভুলতে পারে? তার জীবনের প্রতিটা মুহূর্তে এই দুঃসহ স্মৃতি তাকে কুড়ে কুড়ে খায়। তাই আমি আজ এই চিঠি লিখছি, জানি নাহ সঠিক জায়গায় পৌঁছাবে কি না; তবে সমাজকেই দিয়ে দিলাম। সেই সাথে সত্য সুন্দর ও সুপথের আশায় থাকা এক ঝাঁক নব দ্বীপিকাকে। আহ্বান করি - জাগো! বদলাও! ধর্ষকের জন্য ভয় তৈরি করো, তার জন্য কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা করো। আর ধর্ষিতাকে বোঝাও যে সে অপরাধী নয়, সে কোনো কলঙ্ক নয়। সে বেঁচে থাকার, স্বপ্ন দেখার, ভালোবাসার সম্পূর্ণ অধিকার রাখে। সুকান্ত ভট্টাচার্যের স্বপ্নের মতো এ পৃথিবীকে আগামীর শিশুর বাসযোগ্য করার সংকল্প বদ্ধ হও।
আমাদের কণ্ঠস্বর যদি এক হয়, তবে এই অভিশাপ একদিন নিশ্চয়ই শেষ হবে।
সজিব হোসেন
শিক্ষার্থী বাংলা বিভাগ , ঢাকা কলেজ