রোজা এলে চাহিদা বাড়ে খেজুরের। তাই নানা রকমের ও মানের খেজুর বিক্রির জন্য ডালা সাজিয়ে বসেন বিক্রেতারা। বিক্রিও চলে হরদমে। অনেক রকমের খেজুর পাওয়া গেলেও আজোয়া, মেডজুল, মরিয়ম, দাব্বাস, জায়েদিসহ কয়েকটি খেজুরের চাহিদা বেশি বাজারে। চলতি বছরের শুরুতে খেজুরের আমদানি শুল্ক ২৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১৫ শতাংশ করা হয়। এ বছর খেজুর আমদানি হয়েছে গত বছরের চেয়ে দ্বিগুণ। ফলে এবার মানভেদে প্রতি কেজিতে খেজুরের দাম কমেছে ১০০ থেকে ৪০০ টাকা পর্যন্ত। বিশ্বে প্রায় ৩০০০ প্রজাতির খেজুর আছে। বাংলাদেশের বাজারে ১০০টিরও বেশি প্রজাতির খেজুর পাওয়া যায়। এর মধ্যে মাবরুম, মরিয়ম, সুকারি, সুগাই, ভিআইপি, মাশরুক, কালমি, আম্বার ও আজওয়া অন্যতম। বিশ্বের সবচেয়ে দামি খেজুর হলো আজওয়া। বাজারে বর্তমানে সৌদি, ইরান, মিশর, আলজেরিয়া, তিউনিসিয়া ও দুবাই থেকে আমদানিকৃত জাহিদি, সায়েদি, ফরিদি, সাফায়ি, রশিদি, মাশরুখ, মাবরুর, নাগাল, কুদরি, আজওয়া, মেডজুল, মরিয়ম, দাব্বাস, সুক্কারিসহ বিভিন্ন ধরনের খেজুর রয়েছে। চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের ৫ জানুয়ারি পর্যন্ত দেশে ৫ হাজার ৮৮৩ টন খেজুর আমদানি করা হয়েছে। একই সময়ে খেজুর আমদানির জন্য এলসি খোলা হয়েছে ৮৬ হাজার ১০৯ টন। পাইপলাইনে আছে আরও ৭৫ হাজার ২৫৮ টন খেজুর। গত অর্থবছরের ১ জুলাই থেকে ৫ জানুয়ারি পর্যন্ত ৯ হাজার ৬২৮ টন খেজুর আমদানি হয়েছিল। দেশে জনপ্রিয় কিছু খেজুরগুলো হলো- আজওয়া: সৌদি আরবে চাষ করা হয় এই খেজুর। বিশ্বের অন্যতম দামি খেজুর হিসেবে পরিচিত আজওয়া। মহানবী হজরত মুহাম্মাদ (সা.)-এর একটি হাদিস অনুসারে, আজওয়া খেজুরে রোগ নিরাময়ের বিভিন্ন গুণ রয়েছে। আজওয়া খেজুরের বিভিন্ন জাত রয়েছে। জাতভেদে দেশের বাজারে এ খেজুরের দাম ৯০০-১৭০০ টাকা। মেডজুল: খেজুরের রাজা হিসেবে পরিচিত মেডজুল। বড় আকার আর কড়া গন্ধের কারণে অনেকের কাছেই এটি জনপ্রিয়। মেডজুল খেজুরে ক্যালসিয়াম ও আয়রন বেশি থাকে। প্রতিদিন একটি মেডজুল খেলে শরীরে প্রয়োজনীয় ফাইবারের ২০ শতাংশ পাওয়া যায়। কেজিপ্রতি মেডজুল খেজুরের দাম ১২০০-১৫০০ টাকা। আম্বার: অন্যান্য খেজুরের তুলনায় আকারে বড় হলেও আম্বারের বীজ ছোট। তাই এই খেজুরের খাওয়ার অংশই বেশি। প্রতিকেজি আম্বার খেজুরের দাম ১৫০০-২০০০ টাকা। মরিয়ম: মরিয়ম খেজুর লালচে, হালকা কালো রঙের হয়ে থাকে। মরিয়ম খেজুর পুষ্টিগুণে ভরপুর। এতে রয়েছে প্রচুর পরিমানে ভিটামিন, মিনারেলে ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। এটি শরীরের জন্য খুবই উপকারী। প্রতিকেজি মরিয়ম খেজুরর দাম ১৪০০-১৯০০ টাকা। মাবরুম: শুকনো খেজুরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি পুষ্টিসমৃদ্ধ এবং উপকারী ভাবা হয় মাবরুম খেজুরকে। এতে থাকা ভিটামিন-এ ও ভিটামিন-সি চোখের দৃষ্টিশক্তি বাড়ায়, রক্তশূন্যতা দূর করে, হৃৎপিন্ডকে সুস্থ রাখে, যাদের হৃৎপিণ্ড দুর্বল তারা এ খেজুর খেলে উপকার পাবেন। এ খেজুরের দাম প্রতিকেজি ৮০০-১৭০০ টাকা। এছাড়া ইরাকের বরই খেজুরের দাম প্রতিকেজি ৪৪০-৫৪০ টাকা, সৌদি আরবের দাবাস খেজুর ৩০০-৩৬০ টাকা, ইরাকের জাহেদী খেজুর ২৪০-২৫০ টাকা এবং বাংলাদেশে উৎপাদিত গলা বা বাংলা খেজুর ২০০ টাকা কেজি দরে বাজারে পাওয়া যাচ্ছে। ভালো খেজুর চেনার উপায়: ভালো খেজুরের চামড়া কুচকানো, চকচকে ও উজ্জ্বল হবে। খেজুরের গায়ে কোনো আঠালোভাব থাকবে না। ভালো খেজুরে সহনীয় মাত্রায় মিষ্টতা থাকবে৷ যদি খেজুরের আশেপাশে মৌমাছি বা মাছি ঘোরাফেরা করে, তাহলে বুঝতে হবে ঐ খেজুরে কৃত্রিম মিষ্টি মেশানো হয়েছে। ভালো খেজুরের ভেতরের অংশ সাদা বা বাদামী বর্ণযুক্ত হয়ে থাকে। রসুলুল্লাহ (স.) এর প্রিয় ফল ছিলো আজওয়া খেজুর। আল্লাহর শেষ নবী হজরত মুহাম্মদ(স.) ইফতারে খেজুর দিয়ে রোজা ভাঙতেন বলে আজও তার অনুসারীরা ইফতারের শুরুতে খেজুর মুখে দেয়। হজরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূল(স.) বলেন, 'সকালে খালি পেটে মদিনার উঁচু ভূমির আজওয়া খেজুর খেলে তা সর্বপ্রকার জাদু অথবা বিষক্রিয়ার আরোগ্য হিসেবে কাজ করে। নাফিজ-উর-রহমান শিক্ষার্থী,ঢাকা কলেজ,ঢাকা
প্রকাশক : কাজী জসিম উদ্দিন   |   সম্পাদক : ওয়াহিদুজ্জামান

© Deshchitro 2024