
বরিশালে ৫ দফা দাবি আদায়ে চলমান আন্দোলন কর্মসূচির অংশ হিসেবে বরিশালে বহির্বিভাগে রোগী দেখা বন্ধ রেখেছেন শেরে বাংলা চিকিৎসা মহাবিদ্যালয় (শেবাচিম) হাসপাতালের চিকিৎসকরা। বুধবার (১২ মার্চ) সকাল থেকে এই কর্মসূচি শুরু করেছে তারা। ফলে দুর্ভোগে পড়েছে চিকিৎসা নিতে আসা শত শত মানুষ। হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, প্রতিদিন গড়ে ১৫শ থেকে ২ হাজার মানুষ এই হাসপাতালের বহির্বিভাগে চিকিৎসা নেন। আজ সকালেও একইভাবে সকাল ৮টা থেকে শুরু হয় আউট ডোরের টিকিট বিতরণ। কিন্তু ২/৩শ টিকিট বিতরণের পর তা বন্ধ করে দেয় হাসপাতালের কর্মীরা। পরে জানা যায় যে, ধর্মঘটে গেছেন চিকিৎসকরা। বেলা ১০টা পর্যন্ত রোগী দেখার পর কক্ষ ছেড়ে চলে যান চিকিৎসকরা। ফলে চিকিৎসা নিতে আসা সাধারণ রোগীরা পড়েন চরম দুর্ভোগে।কর্মবিরতিতে অংশ নেওয়া চিকিৎসক মর্তুজা আলম বলেন, কেন্দ্র ঘোষিত এই কর্মসূচি দেশব্যাপী পালিত হচ্ছে। আমাদের এখানে দেড়িতে খবর পৌঁছায় সকালে আউট ডোরের রোগীদের টিকিট বিতরণ শুরু হয়ে যায়। যতগুলো টিকিট বিতরণ হয়েছে তাদের চিকিৎসা দেওয়ার পরই আমরা কাজ বন্ধ করেছি। কেন্দ্র থেকে আসা সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।চিকিৎসা নিতে আসা রোগী নগরীর আমানতগঞ্জ এলাকার তাসলিমা বেগম বলেন, উনারা ধর্মঘটে যাবেন সেটা আগে বললেই পারতেন। হঠাৎ করে কাজ বন্ধ করে দেওয়ায় আমরা বিপদে পড়েছি। সকাল থেকে এসে বসেছিলাম ডাক্তার দেখানোর আশায়। এখন না দেখিয়েই ফেরত যেতে হচ্ছে। একইভাবে আরো কয়েকশ রোগী ফেরত যান চিকিৎসা না পেয়ে।
হাসপাতালের উপ—পরিচালক ডা. মনিরুজ্জামান শাহিন বলেন, ধর্মঘটরত চিকিৎসকদের সঙ্গে আলোচনা চলছে। আশা করি, খুব শিগগিরই পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে যাবে।প্রসঙ্গত: মেডিক্যাল অ্যাসিস্ট্যান্ট ট্রেনিং স্কুল থেকে পাস করা ম্যাটসদের অনেকগুলো দাবির একটা হচ্ছে নামের আগে ‘ডাক্তার’ লেখার বৈধতা দেওয়া। বিষয়টি নিয়ে আদালতে এটি রিট আবেদন করা হয়েছে। আজ বুধবার (১২ মার্চ) ওই রিটের শুনানি হবে।এমবিবিএস ও বিডিএস ছাড়া কেউ ‘ডাক্তার’ লিখতে পারবে না— এমন দাবি তুলে দেশের বিভিন্ন মেডিক্যাল কলেজের শিক্ষার্থীরা ক্লাস বর্জনসহ নানা কর্মসূচি পালন করছেন। তাদের দাবিতে সংহতি প্রকাশ করে কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছেন ইন্টার্ন চিকিৎসকরাও। পরে তাদের সঙ্গে যোগ দেয় পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ট্রেইনি চিকিৎসকরা।শিক্ষার্থী, ইন্টার্ন চিকিৎসক এবং চিকিৎসক পেশাজীবীদের ১৭ সংগঠন নিয়ে এ ‘সর্বস্তরের চিকিৎসক ও চিকিৎসা শিক্ষার্থীদের’ ব্যানারে এ ঐক্য গড়ে তোলা হয়েছে। এর অধীনে মেডিক্যাল ও ডেন্টাল কলেজের শিক্ষার্থীরা ক্লাস বর্জন আর ইন্টার্নরা প্রতিদিন তিন ঘণ্টা করে কর্মবিরতি পালন করছেন।
বিভিন্ন দাবি নিয়ে গত কয়েক মাস ধরে আন্দোলন করে আসছেন মেডিক্যাল অ্যাসিন্ট্যান্ট ট্রেনিং স্কুল বা ম্যাটস শিক্ষার্থীরা। তাদের আন্দোলনের পাল্টায় কর্মসূচি পালন করছেন চিকিৎসক, মেডিক্যাল শিক্ষার্থীরাও।
চিকিৎসকদের পাঁচ দফা দাবি হচ্ছে— এমবিবিএস/বিডিএস ডিগ্রিধারী ছাড়া অন্য কেউ নামের আগে ‘ডাক্তার’ পদবি ব্যবহার করতে পারবে না। আদালতে চলমান এ সংক্রান্ত আইন ও জনস্বাস্থ্য বিরোধী সব রিট আবেদন আগামী ১২ মার্চের মধ্যে নিষ্পত্তি করতে হবে এবং বাংলাদেশে ‘ডিপ্লোমা চিকিৎসক’ নামে বিভ্রান্তিকর কোনও পদবির প্রচলণ করা যাবে না, যার অস্তিত্ব বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বা বিশ্বের কোথাও নেই। রেজিস্টার্ড চিকিৎসক (এমবিবিএস /বিডিএস) ছাড়া অন্য কেউ স্বাধীনভাবে প্রাইভেট প্র্যাকটিস করতে পারবে না— এ বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করতে হবে। আগামী ৭ কর্মদিবসের মধ্যে মেডিক্যাল অ্যাসিস্ট্যান্ট কোর্স কারিকুলাম সংস্কার কমিটি গঠন করে তাদের কোর্স কারিকুলাম পুনর্নির্ধারণ এবং মানহীন সব ম্যাটস (মেডিক্যাল অ্যাসিস্ট্যান্ট ট্রেনিং স্কুল) বন্ধে বিশেষ অভিযান পরিচালনা করতে হবে। জনগণের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতকরণের জন্য শূন্যপদে পর্যাপ্ত সংখ্যক চিকিৎসক নিয়োগ এবং চিকিৎসকদের বিসিএসের বয়সসীমা ৩৪ বছরে উন্নীত করতে হবে। অবিলম্বে চিকিৎসক সুরক্ষা আইন প্রণয়ন এবং বেসরকারি চিকিৎসকদের জন্য সুনির্দিষ্ট বেতন কাঠামো (পে—স্কেল) তৈরি করতে হবে।
তাদের এ পাঁচ দফা দাবির সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করেছে ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ড্যাব)।