◾ স্বাস্থ্য কথা ডেস্ক || COPD বা ক্রনিক অবস্ট্রাকটিভ পালমোনারি ডিজিজ (সিওপিডি) ফুসফুসের দুটি রোগ, এমফাইসেমা ও ক্রনিক ব্রংকাইটিসের মেলবন্ধন। রোগটি অনেকটা অ্যাজমা বা হাঁপানির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ


স্ট্যাটিস্টার তথ্য বলছে, ২০২১ সালে বিশ্বব্যাপী মৃত্যুর প্রধান কারণ হিসেবে চার নম্বরে ছিল সিওপিডির অবস্থান। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্যমতে, প্রতিবছর প্রায় ৩ মিলিয়ন মানুষের মৃত্যুর জন্য সিওপিডি দায়ী, এবং বিশ্বব্যাপী আক্রান্তের সংখ্যা ৩৮০ মিলিয়ন। মৃত্যুর বেশিরভাগই ঘটে নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোতে।


◾সিওপিডিতে শ্বসনতন্ত্রে কী ঘটে?


ফুসফুসের গঠনগত ও কার্যকরী একক হলো অ্যালভিওলাস, যা কিনা বেলুনের মতো বায়ু দ্বারা পূর্ণ থাকে। অ্যালভিওলাসের প্রাচীর কোনো কারণে নষ্ট হয়ে গেলে সে রোগটি হলো এমফাইসেমা। এমফাইসেমার কারণে অ্যালভিওলাসে কার্বন ডাই অক্সাইড ও অক্সিজেন বিনিময়ের পরিধি কমে যায়। অ্যালভিওলাসের ভেতর তখন গ্যাসগুলো জমে যায়, যে ঘটনাকে বলে এয়ার ট্র্যাপিং।


আর ক্রনিক ব্রংকাইটিস হলো ব্রংকাস বা শ্বাসনালির দীর্ঘমেয়াদি প্রদাহ। এর ফলে ঘন মিউকাস উৎপন্ন হয়, যে কারণে এর ভিতর দিয়ে বায়ু চলাচল বাধাগ্রস্ত হয়। ফুসফুসে বায়ু পর্যাপ্ত পরিমাণে ঢুকতে ও বের হতে পারে না।


◾কারা সিওপিডির ঝুঁকিতে থাকেন?


1. চল্লিশোর্ধ ধূমপায়ী পুরুষ

2. সেসব পুরুষ ও নারী শ্রমিক যারা খনি বা শিল্প অঞ্চলে দূষিত পরিবেশে কাজ করেন

3. সেসব নারী যারা আবদ্ধ স্থানে খড়ির চুলায় রান্না করেন


◾কেন হয় সিওপিডি?


সিওপিডি হবার পিছনে যেসব কারণ দায়ী তাহলো:


• ধূমপান: সবচেয়ে বড় কারণ। ধূমপানের ফলে এমফাইসেমা ও ক্রনিক ব্রংকাইটিস দুটো রোগই শরীরে বাসা বাঁধে।

• দূষিত বায়ু (বিশেষত বাতাসে অত্যধিক কার্বন কণা, ক্যাডমিয়াম ও সিলিকা থাকলে)

• ধোঁয়া (কাঠকয়লা, কারখানার চিমনি থেকে নির্গত)

• ফুসফুসের অন্য কোনো সংক্রমণ

• গাঁজা সেবন 


এছাড়া জন্মগত ভাবে কারো আলফা-ওয়ান-অ্যান্টিট্রিপসিন নামক এনজাইমের ঘাটতি থাকলেও সিওপিডি হতে পারে। এই এনজাইমটি অ্যালভিওলাসের স্থিতিস্থাপকতা রক্ষা করে। তবে অ্যান্টিট্রিপসিনের অভাবে সিওপিডি হওয়ার নজির দুর্লভ।


◾কোন কোন লক্ষণ প্রকাশ পায়?


1. কাশি: টানা দুই বছর এর মধ্যে যেকোনো টানা ৩ মাস ধরে কফযুক্ত কাশি।

2. শ্বাসকষ্ট

3. বুকের ভেতর বাঁশির মতো আওয়াজ, যাকে wheezing বলা হয়

4. বুক ভারী অনুভূত হওয়া

5. শক্তিহীনতা

6.ওজন হ্রাস


◾সিওপিডির চিকিৎসা কী?


একটা সত্য কথা হলো, সিওপিডি রোগটির এমন কোনো চিকিৎসা নেই, যাতে রোগটি পুরোপুরি সেরে যাবে। বিভিন্ন উপসর্গের চিকিৎসা করিয়ে রোগটিকে রোগীর জন্য সহনীয়


পর্যায়ে রাখার চেষ্টা করা হয়। যেমন:


1. ব্রঙ্কোডাইলেটর ওষুধ, ইনহেলার বা নেবুলাইজার হিসেবে

2. অক্সিজেন থেরাপি

3. ধূমপান ছাড়ানো

4. কটিকোস্টেরয়েড

5. অ্যান্টিবায়োটিক, ফুসফুসের ব্যাকটেরিয়াজনিত সংক্রমণ প্রতিকারের জন্য


সিওপিডির রোগীকে নিয়মিত চেকআপ এবং চিকিৎসা করাতে হবে, যাতে রোগীর অবস্থা খারাপের দিকে না যায়। সিওপিডির রোগীদের ঘনঘন ঠাণ্ডা, নিউমোনিয়া ও ফ্লুতে আক্রান্ত হবার সম্ভাবনা থাকে। তাদের ফুসফুসের ধমনীর রক্তচাপ বেশি হয়, যেটিকে পালমোনারি হাইপারটেনশন বলে। কখনো কখনো সিওপিডির রোগীরা উদ্বিগ্নতা ও বিষণ্ণতায়ও ভুগে থাকেন।


◾যেভাবে সিওপিডি প্রতিরোধ করবেন:


সিওপিডি প্রতিরোধের সবচেয়ে কার্যকর উপায় হলো ধূমপান থেকে বিরত থাকা। এরপর বাঁচতে হবে দূষিত বায়ু থেকে।


শেষকথা হলো, সিওপিডি পরিপূর্ণ ভাবে নিরাময় না করা গেলেও রোগটি প্রতিরোধযোগ্য। তাই সচেতনতাই পারে এর বিভীষিকা থেকে বাঁচাতে। 


লেখক : রুফাইদা তাসফিয়াত ফিজা

এমবিবিএস শিক্ষার্থী,

ঢাকা মেডিকেল কলেজ


প্রকাশক : কাজী জসিম উদ্দিন   |   সম্পাদক : ওয়াহিদুজ্জামান

© Deshchitro 2024