|
Date: 2025-03-21 20:37:48 |
বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ ও ধর্মীয় মূল্যবোধে বিশ্বাসী বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) শিক্ষকদের সংগঠন সোনালী দলের ইফতার মাহফিলে আওয়ামীপন্থী জুনিয়র শিক্ষকদের আমন্ত্রণ জানানোর অভিযোগ উঠেছে। সোনালী দলের গুটিকয়েক শিক্ষকের কারণে সংগঠনের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন সংগঠনটির অনেক সদস্য।
ওই ইফতার মাহফিলে উপস্থিত বিভিন্ন শিক্ষক সূত্রে জানা যায়, ইফতার মাহফিলে ২০ জনের অধিক বিগত পলাতক ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলে নিয়োগপ্রাপ্ত জুনিয়র শিক্ষকদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। এর ফলে ইফতার অনুষ্ঠানে খাবারের সংকটের বিষয়টিও আলোচনায় এসেছে।
এই বিষয়ে সোনালী দলের শিক্ষকদের মাঝে নানান প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। শিক্ষকদের দাবি, ৫ আগস্টের আগে অনেকেই স্বৈরাচার ফ্যাসিস্ট সরকারকে সহায়তা করার লক্ষ্যে শান্তি মিছিলে অংশগ্রহণ করেছিলেন।
সোনালী দলের কৃষি অনুষদীয় কমিটির সভাপতি ও কৌলিতত্ত্ব ও উদ্ভিদ প্রজনন বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. আমির হোসেন জানান, আওয়ামীপন্থী জুনিয়র শিক্ষকদের আমন্ত্রণ জানানোর বিষয়ে আগে থেকে কিছু জানতেন না।
আওয়ামীপন্থী জুনিয়র শিক্ষকদের আমন্ত্রণ জানানোর বিষয়ে জানতে চাইলে পশুপালন অনুষদীয় কমিটির সভাপতি এনিম্যাল সায়েন্স বিভাগের অধ্যাপক ড. এ. কে. এম. আহসান কবীর বলেন, "আমি শুধু ইফতারে উপস্থিত হয়েছি। এই আয়োজনের সাথে যুক্ত ছিলাম না।"
আওয়ামীপন্থী শিক্ষকদের ওই ইফতারে দাওয়াত ও অংশগ্রহণ করার বিষয়ে সোনালী দলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. আবুল কালাম আজাদ বলেন, "যারা এই কাজের সাথে জড়িত তাদের সঠিক তদন্তের মাধ্যমে জবাবদিহিতার আওতায় আনতে হবে। আওয়ামী দোষীদের ছাড় দেওয়ার মতো মানসিকতা সোনালী দলের নেই।"
৪ আগস্টের শান্তি মিছিলে ছিলেন এমন শিক্ষকও ওই অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকার বিষয়ে তিনি বলেন, "শান্তি মিছিলে ছিলেন এমন শিক্ষকদের অনুষ্ঠানে যারা ডেকেছে, তাদেরও জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে। এই কাজটিও করবে আগামী সোনালী দল।"
সোনালী দলের সাধারণ সম্পাদক ও কৃষিতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ড. আহমদ খায়রুল হাসান জানান, "আমরা তাদের দাওয়াত দেইনি। তারাই আগ্রহ প্রকাশ করেছিল ইফতার মাহফিলে যোগ দিতে। কেউ ইফতারে নিজ ইচ্ছায় যোগ দিলে চাইলে সামাজিকভাবেও না করা যায় না।"
তাদের মধ্যে অনেকেই ৪ আগস্ট শান্তি মিছিলে উপস্থিত ছিলেন- এই বিষয়ে অধ্যাপক খায়রুল বলেন, "এখানে ফ্যাসিস্টদের প্রশ্রয় দেওয়ার মতো কিছু হয়নি। ওরা ইফতার মাহফিলে আসতে চেয়েছে, কিভাবে না করি? ওরা আসা মানেই যে সোনালী দলে তাদের জায়গা করে নিয়েছি, ব্যাপারটা এমন নয়।"
ওই ইফতার মাহফিলের বিষয়ে জানতে চাইলে সোনালী দলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও একোয়াকালচার বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. আলী রেজা ফারুক জানান, "এটা সোনালী দলের ইফতার বলা যাবে না, বরং এটা পারিবারিক ইফতার মাহফিল।"
সোনালী দলের ইফতারে আওয়ামীপন্থী শিক্ষকদের দাওয়াত দেওয়া হয়েছিল কি না-এই প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, "অনুষ্ঠানটি রাজনৈতিকভাবে দেখার সুযোগ নেই। আমাদের সহকর্মী জুনিয়র শিক্ষকরা আগ্রহ দেখানোর কারণেই অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করতে পেরেছেন। তাদের অংশগ্রহণ মানেই এই না যে অফিসিয়ালি সোনালী দলে তারা যোগ দিয়েছেন। এই অনুষ্ঠানটি সামাজিকভাবে দেখতে হবে।"
ওই ইফতার মাহফিলে উপস্থিত একাধিক জুনিয়র শিক্ষকের সাথে যোগাযোগ করলে তারা জানান, তাদের বিভাগীয় সিনিয়র শিক্ষক, যারা সোনালী দলের সাথে সংশ্লিষ্ট রয়েছেন, তারাই দাওয়াত করেছিলেন।
উল্লেখ্য, ৪ আগস্ট "শেখ হাসিনাতেই আস্থা" স্লোগানকে সামনে রেখে কেআইবি ও বঙ্গবন্ধু কৃষিবিদ পরিষদের যৌথ উদ্যোগের সাথে সামঞ্জস্য রেখে কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন বাংলাদেশ, বাকৃবি শাখার নেতৃত্বে "শান্তি সমাবেশ ও মিছিলে" অংশগ্রহণ করেছিল এমন অনেক জুনিয়র শিক্ষক উপস্থিত ছিলেন ওই অনুষ্ঠানে। এর আগে গত ৯ ডিসেম্বর এক প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে অরাজনৈতিক ব্যক্তি কিংবা অন্য কোনো দলের কাউকে বিএনপিতে যোগদান করানো যাবে না বলে হুঁশিয়ার করে দিয়েছিলেন দলটির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। এই নিয়েই আলোচনার ঝড় উঠেছে সোনালী দলের শিক্ষকদের মাঝে।
© Deshchitro 2024