|
Date: 2025-03-27 17:10:09 |
মো. নুরুল আমিন
লাইলাতুল কদর একটি মহিমান্বিত রাত। এই রাতে মহান আল্লাহ মহা বিশ্বের মহাগ্রন্থ আল কুরআন অবতীর্ণ করেন। এই রাতের গুরুত্ব তুলে ধরে কুরআনুল কারিমে ‘কদর’ নামে পূর্ণাঙ্গ একটি সূরা অবতীর্ণ হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে- “নিশ্চয় আমি (কুরআনুল কারিম) লাইলাতুল কদর বা মহিমান্বিত রাতে অবতীর্ণ করেছি।” (সূরা কদর ১) এই রাতের গুরুত্ব বোঝানোর জন্য মহান আল্লাহ প্রশ্ন করছেন। “আপনি কি জানেন লাইলাতুল কদর কি “ (সূরা কদর ২) স্বয়ং আল্লাহ এর জবাবে বলেন-“এটি একটি মহিমান্বিত রাত যা হাজার মাসের চেয়ে উত্তম।” (সূরা কদর ৩) এই রাতের কর্মসূচির কথা উল্লেখ করে পরের দুই আয়াতে আল্লাহ বলেন- “এ রাতে ফেরেশতারা ও জিবরাইল (আ.) মহান রবের অনুমতিক্রমে সকল সিদ্ধান্ত নিয়ে পৃথিবীতে অবতরণ করেন। তাদের আগমনে ফজর পর্যন্ত এই রাত শান্তিময়।” (সূরা কদর ৪-৫) গভীরভাবে লক্ষ্য করলে দেখা যায়, এই রাতের সকল আয়োজন একটি উপলক্ষ্কে কেন্দ্র্র করে আর সেটি হলো এই রাতিতে মহান আল্লাহ আলোকিত মানুষ তৈরির করার জন্য আলোকিত কিতাব আল কুরআন বিশ্ববাসীর ওপর অবতীর্ণ করেন। একইভাবে পবিত্র রামাদান মাস অন্যান্য মাসের চেয়ে শ্রেষ্ঠ মাস। এই মাসের সম্মান ও মর্যাদা অত্যাধিক। এই মাসে মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে অগনিত রহমত, বরকত, মাগফিরাত ও নাজাত বিশ্ববাসীর ওপর অবতীর্ণ হতে থাকে। মানুষ আত্মসংযম ও আত্মশুদ্ধির শিক্ষা পেয়ে থাকে এই মাসে। সর্বদা তাকওয়া বা আল্লাহর ভয় নিজেদের মধ্যে ধারণ করার প্রশিক্ষণ দেওয়া হয় এই সময়। মৃত্যুপর মহান রবের সামনে দাঁড়ানো লাগবে এবং জীবনের সকল কিছুর জন্য জবাবদিহিতা তার নিকট করতে হবে। এই চিন্তা সবসময় ধারণ করে সততার সাথে জীবন যাপন করার মহান শিক্ষা লাভের চর্চা মানুষ এই মাসে করে থাকে। এছাড়াও এই মাসের নফল ইবাদত ফরয ইবাদতের সমতুল্য। আবার একটা ফরয আদায় অন্য মাসের সত্তরটি ফরয আদায়ের ন্যায় সমান গুরুত্বপূর্ণ। এই মাসে জান্নাতের দরজাসমূহ খুলে দেওয়া হয় এবং জাহান্নামের দরজাসমূহ বন্ধ করে দেওয়া হয়। রোজাদারদের জন্য রয়েছে মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে বিশেষ প্রতিদান। হাদিসে কুদসির এক বর্ণনায় আল্লাহ বলেন- “রোযা আমার জন্য সুতরাং এর প্রতিদান আমি নিজ হাতে দিব।” এই মাসের এই মর্যাদা ও মাহাত্ন্য একটি বিষয়কে কেন্দ্র করে আর তা হলো এই মাসের লাইলাতুল কদর রাত্রিতে বিশ্ব মানবতার হিদায়েতের মহাগ্রন্থ আল কুরআন নাযিল করা হয়। এতদ প্রসঙ্গে পবিত্র কুরআনের সূরা বাকায় আল্লাহ বলেন- “রামাযান মাস। যে মাসে নাযিল হয়েছে কুরআন, মানবজাতির হেদায়েত জন্য ও হেদায়েতের স্পষ্ট বর্ণনা দিয়ে এবং হক ও বাতিলের মধ্যে পার্থক্যকারী হিসেবে।” (সূরা আল বাকারা ১৮৫) এটি স্পষ্টভাবে বলা যায়, পবিত্র কুরআনের কারণে লাইলাতুল কদর মহিমান্বিত ও মর্যাদাপূর্ণ এবং হাজার মাস হতে উত্তম ও বরকতময়। একই কারণে পবিত্র রামাযান এতটা গুরুত্বপূর্ণ ও সম্মানিত। মহান আল্লাহ বিশ্ব মানবতার কল্যাণ ও পরিপূর্ণ জীবন ব্যবস্থারূপে কুরআনুল কারিম অবতীর্ণ করেছেন। আর পবিত্র কুরআন এমন গ্রন্থ যেখানে জীবনে চলার জন্য সকল কিছুর বিশদ বর্ণনা ও নির্দেশনা পাওয়া যায়। যারা এই কুরআন অনুযায়ী চলবে তাদের সফলতা অনিবার্য। কিন্তু বড়ই পরিতাপের বিষয় হলো, যে কুরআনকে মহান রব এতটা গুরুত্ব, মর্যাদা ও মানব জাতির জীবন বিধানরূপে নাযিল করেছেন। যে কুরআনের ধারক ও বাহক আমরা মুসলমানরা আজ কুরআন থেকে অনেক দূরে। পবিত্র কুরআন যে উদ্দেশ্যে অবতীর্ণ হয়েছে সে কাঙিক্ষত উদ্দেশ্যে আমরা কুরআনকের বাস্তবিক প্রয়োগ করি না। আমরা একে শুধু ধর্মীয় কিতাব মনে করি। আমাদের জীবন বিধান হিসেবে যেন একে মেনে নিতে পারছি। সুবিধা অনুযায়ী আমরা পবিত্র কুরআনের কিছু নির্দেশনা অনুসরণ করি আবার কিছু নির্দেশনা অমান্য করি। পরিপূর্ণভাবে কুরআন অনুসরণ না করার কারণে আমরা মুসলমানরা বিশ্বময় নির্যাতিত , লাঞ্ছিত ও অপমানিত। এই প্রসঙ্গে আল্লাহ বলেন, “তোমরা কি কিতাবের কিছু অংশে ইমান রাখ আর কিছু অংশ অস্বীকার কর? সুতরাং তোমাদের মধ্যে যারা তা করে দুনিয়ার জীবনে লাঞ্ছনা ছাড়া তাদের কী প্রতিদান হতে পারে? আর কিয়ামতের দিনে তাদেরকে কঠিনতম আযাবে নিক্ষেপ করা হবে। আর তোমরা যা কর, আল্লাহ সে সম্পর্কে গাফেল নন।” (সূরা আল বাকারা ৮৫) তাই আসুন, পবিত্র কুরআন নাযিলের মাসে আমরা শপথ গ্রহণ করি, এই কুরআনুল কারিমকে আমরা প্রতিনিয়ত অধ্যয়ন করব, বুঝার চেষ্টা করব এবং প্রতিটি নির্দেশনা আমাদের সার্বিক জীবনে বাস্তবায়ন করব। তবেই দুনিয়া ও আখেরাতে আমরা সফল হতে পারব। মহান আল্লাহ আমাদের পবিত্র কুরআনের ধারক, বাহক ও প্রচারক হওয়ার তাওফিক দান করুক।
লেখক-অধ্যক্ষ, প্রিন্সিপাল কাজী ফারুকী কলেজ, রায়পুর, লক্ষ্মীপুর।
© Deshchitro 2024