মিসবাহ ভেবে আইনজীবি সুজনকে খুন করে ভাড়াটিয়া খুনি, গ্রেফতার-৫


মৌলভীবাজার শহরে আইনজীবি সুজন মিয়ার নির্মম হত্যাকাণ্ডের রহস্য অবশেষে উদঘাটন করেছে পুলিশ। ভাড়াটিয়া খুনিদের ভুলে শত্রুর বদলে প্রাণ গেল নিরপরাধ আইনজীবির। মূল পরিকল্পনাকারী নজির মিয়া মুজিব প্রতিপক্ষ মিসবাহকে হত্যা করতে গিয়ে ভুলে খুন করিয়েছে আইনজীবি সুজন মিয়াকে।

৬ এপ্রিল রাত প্রায় ১১টার দিকে মৌলভীবাজার পৌর এলাকার মেয়র চত্বরে তামান্না ফুসকা চটপটির দোকানের সামনে ফুটপাতে বসে ছিলেন সুজন মিয়া। ঠিক সেই সময় একদল দুর্বৃত্ত ধারালো অস্ত্র নিয়ে তার ওপর হামলা চালায়। উপর্যুপরি ছুরিকাঘাতে ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারান তিনি। এই ঘটনায় নিহতের ভাই এনামুল হক সুমন থানায় মামলা করেন।

মামলা দায়েরের পর থেকেই তদন্তে নামে পুলিশ। মৌলভীবাজারের পুলিশ সুপার এম, কে, এইচ, জাহাঙ্গীর হোসেনের নির্দেশে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার নোবেল চাকমার নেতৃত্বে তদন্ত শুরু হয়। সিসি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ, তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার এবং একাধিক অভিযান চালিয়ে পুলিশ গ্রেফতার করে পাঁচ আসামিকে।

গ্রেফতারকৃতরা হলেন নজির মিয়া মুজিব, আরিফ মিয়া, হোসাইন আহমদ সোহান, লক্ষন নাইডু ও আব্দুর রহিম। মূল পরিকল্পনাকারী নজির মিয়ার কাছ থেকে উদ্ধার করা হয় হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত মোবাইল ফোন। জিজ্ঞাসাবাদে উঠে আসে চাঞ্চল্যকর তথ্য।

পুলিশ সুপার জানান, নজির মিয়া মুজিবের শত্রু ছিল পাশের বাড়ির সিকিউরিটি গার্ড মিসবাহ। মিসবাহকে মারার জন্য ভাড়াটিয়া খুনি নিয়োগ করে নজির। পরিচিত লক্ষনের মাধ্যমে টাকা দিয়ে লোক ভাড়া করে মিসবাহকে হত্যার পরিকল্পনা করে সে। মোবাইলে ছবি পাঠিয়ে টার্গেট চিহ্নিত করার নির্দেশ দেয় নজির।

হত্যাকাণ্ডের দিন বানিজ্য মেলায় ভাড়াটিয়া খুনিরা ভুল করে আইনজীবি সুজন মিয়াকে মিসবাহ ভেবে নজিরকে কল দেয়। ভিডিও কলে সুজনকে দেখিয়ে নিশ্চিত হয় নজির। এরপরই নির্দেশ দেয় খুন করতে। মুহূর্তেই সুজনের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে খুনিরা।

ভয়ঙ্কর এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনার সময় উপস্থিত ছিল আরও ১০-১২ জন দুর্বৃত্ত। তারা সবাই মিলে সুজন মিয়াকে নির্মমভাবে হত্যা করে। ঘটনার পর বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে পুলিশ গ্রেফতার করে মূল পরিকল্পনাকারী ও তার সহযোগীদের।

এ ঘটনার পর মৌলভীবাজার জেলাজুড়ে নেমে এসেছে তীব্র প্রতিক্রিয়া। নিরপরাধ আইনজীবিকে ভুলে খুনের ঘটনায় ক্ষোভে ফেটে পড়েছে সাধারণ মানুষ। অভিযুক্তদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন সহকর্মী আইনজীবিসহ এলাকাবাসী।


প্রকাশক : কাজী জসিম উদ্দিন   |   সম্পাদক : ওয়াহিদুজ্জামান

© Deshchitro 2024