|
Date: 2025-04-11 16:20:50 |
ঢাকা, ১১ এপ্রিল ২০২৫ — বাংলাদেশের কর্মক্ষেত্রে সরকারি ও বেসরকারি খাতে জবাবদিহিতা ও শাস্তিমূলক ব্যবস্থায় উল্লেখযোগ্য পার্থক্য বিদ্যমান। বেসরকারি খাতে কর্মীদের কাজের মান ও আচরণের উপর নিয়মিত মূল্যায়ন করা হয়, এবং প্রয়োজন অনুযায়ী পদোন্নতি বা চাকরিচ্যুতি ঘটে। অপরদিকে, সরকারি খাতে শৃঙ্খলা লঙ্ঘনের পরও অনেক সময় সাময়িক বরখাস্ত বা বদলির মাধ্যমে বিষয়টি নিষ্পত্তি করা হয়, যা পরবর্তীতে পুনরায় নিয়োগের মাধ্যমে পূর্বের অবস্থানে ফিরে আসার সুযোগ সৃষ্টি করে।
বেসরকারি খাতে কঠোর জবাবদিহিতা ও শাস্তিমূলক ব্যবস্থা
বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোতে কর্মীদের কাজের মান, সময়ানুবর্তিতা ও আচরণ নিয়মিতভাবে পর্যবেক্ষণ করা হয়। কর্মীদের নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা অর্জন, সময়মত কাজ সম্পন্ন করা এবং পেশাদার আচরণ প্রদর্শনের উপর ভিত্তি করে পদোন্নতি, বেতন বৃদ্ধি বা অন্যান্য সুবিধা প্রদান করা হয়। অপরদিকে, কাজের মান নিম্নমানের হলে বা শৃঙ্খলা লঙ্ঘন করলে সতর্কতা, বেতন হ্রাস, এমনকি চাকরিচ্যুতির মতো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। এই প্রক্রিয়ায় কর্মীদের মধ্যে দায়বদ্ধতা ও পেশাদারিত্বের মানসিকতা বৃদ্ধি পায়।
সরকারি খাতে শৃঙ্খলা লঙ্ঘন ও পুনর্নিয়োগের প্রবণতা
সরকারি খাতে শৃঙ্খলা ও আচরণবিধি লঙ্ঘনের ক্ষেত্রে প্রায়শই সাময়িক বরখাস্ত, বদলি বা তিরস্কারের মতো শাস্তি প্রদান করা হয়। তবে, অনেক ক্ষেত্রে এই শাস্তিগুলো স্থায়ী না হয়ে সংশ্লিষ্ট কর্মচারীরা পুনরায় পূর্বের পদে বা সমমানের পদে নিয়োগ পান। উদাহরণস্বরূপ, ২০১৮ সালের সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালার ২(ই) ধারায় অসদাচরণকে শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হয়েছে, এবং শাস্তি হিসেবে তিরস্কার থেকে শুরু করে চাকরিচ্যুতি পর্যন্ত ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশনা রয়েছে। তবে, বাস্তবে এই বিধিমালার প্রয়োগে শিথিলতা দেখা যায়।
ফৌজদারি মামলায় শাস্তি ও পুনর্বহালের সুযোগ
সরকারি চাকরি আইন, ২০১৮ অনুসারে, কোনো সরকারি কর্মচারী ফৌজদারি মামলায় আদালত কর্তৃক ১ বছরের কম মেয়াদের কারাদণ্ডে দণ্ডিত হলে, নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষ তাকে তিরস্কার, পদোন্নতি স্থগিতকরণ, নিম্ন পদে অবনমিতকরণ বা ক্ষতিপূরণ আদায়ের মতো শাস্তি দিতে পারে, তবে চাকরিচ্যুত করা হয় না। এই ধরণের বিধান কর্মচারীদের পুনরায় চাকরিতে ফিরে আসার সুযোগ সৃষ্টি করে।
জনপ্রশাসনে শৃঙ্খলা লঙ্ঘনের সাম্প্রতিক ঘটনা
সাম্প্রতিক সময়ে, সরকারি কর্মকর্তাদের চাকরিবিধি না মেনে জমায়েত ও কলমবিরতির মতো কার্যক্রম পরিচালনার ঘটনা ঘটেছে। ২০১৮ সালের সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালার ২(ই) ধারায় এ ধরনের আচরণকে অসদাচরণ হিসেবে গণ্য করা হয়েছে, এবং শাস্তি হিসেবে চাকরিচ্যুতি পর্যন্ত ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশনা রয়েছে। তবে, এই ধরণের শৃঙ্খলা লঙ্ঘনের পরও অনেক ক্ষেত্রে কার্যকর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি।
বিশ্লেষণ ও সুপারিশ
সরকারি খাতে শৃঙ্খলা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে শাস্তিমূলক ব্যবস্থার কার্যকর প্রয়োগ জরুরি। শৃঙ্খলা লঙ্ঘনের ক্ষেত্রে সাময়িক বরখাস্ত বা বদলির পরিবর্তে স্থায়ী ও কার্যকর শাস্তি প্রদান করা উচিত, যাতে কর্মচারীরা দায়বদ্ধতা অনুভব করেন এবং জনসেবা উন্নত হয়। বেসরকারি খাতের মতো নিয়মিত মূল্যায়ন ও শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে সরকারি খাতের কর্মদক্ষতা ও পেশাদারিত্ব বৃদ্ধি করা সম্ভব।
এই প্রতিবেদনটি বিভিন্ন সরকারি নীতিমালা ও সাম্প্রতিক ঘটনার উপর ভিত্তি করে প্রস্তুত করা হয়েছে।
© Deshchitro 2024