|
Date: 2025-04-28 20:16:18 |
৪কোটি টাকার সেতু যেন বিষফোঁড়া
ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামালীগ সরকারের আমলে মৌলভীবাজারের রাজনগর উপজেলার কুশিয়ারা নদী তীরবর্তী কালার বাজার সংলগ্ন নলু নদের ওপর ৪ কোটি ১২ লক্ষ টাকা ব্যয়ে নির্মিত সেতটিু এখন এলাকাবাসির কাছে বিষফোঁড়া হয়ে দাঁড়িয়েছে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, এলজিইডি-ঠিকাদার কর্তৃপক্ষের নয়ছয় ও গাফিলতিতে নদ থেকে কম উচ্চতায় সেতু নির্মাণ করায় সড়ক যোগাযোগ চললেও নৌপথের যোগাযোগে ভোগান্তি দেখা দিয়েছে। এতে বর্ষা মৌসুমে সেতুর নিচ দিয়ে কৃষিপণ্যবাহী নৌকা, ট্রলার, বালু বোঝাই নৌকা ও মৎস্যজীবীদের নৌকা চলাচল করতে পারছে না। এছাড়া নদীতে সামান্য একটু পানি বাড়লেই ব্রিজ ছুঁয়ে যায়।
স্থানীয় বাসিন্দা, কৃষক, জেলে এবং ব্যবসায়ীরা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, এতো টাকা ব্যয়ে নির্মিত উন্নয়নের সেতুটিই এখন তাদের জন্য বিষফোঁড়া হয়ে দাঁড়িয়েছে।
সোমবার সরেজমিনে নলু নদের পাড়ে গিয়ে দেখা যায়, নদ থেকে কম উচ্চতায় অপরিকল্পিতভাবে সেতুটি নির্মাণ করা হয়েছে। আর এখন সেটি মানুষের গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, শুরু থেকেই আমরা উচ্চতা বাড়িয়ে সেতু নির্মাণের দাবি জানিয়েছিলাম। কিন্তু ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ও এলজিডি কর্তৃপক্ষ তখন বলেছিল, পানির স্তর বাড়লেও নৌ-চলাচলে কোনো সমস্যা হবে না। এখন নদীতে সামান্য একটু পানি বাড়লেই ব্রিজ ছুঁয়ে যায়। ট্রলারসহ সব ধরনের নৌযান চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। বর্ষার মৌসুমে নৌকার মাঝি, মৎস্যজীবি, কৃষক, ব্যবসায়ীসহ অনেকেই ব্যপক ক্ষতিগ্রস্তের শিকার হচ্ছেন।
কামালপুর গ্রামের কৃষক রজ্জত মিয়া বলেন, সঠিক উচ্চতায় সেতুটি নির্মাণ করা হয়নি। নির্মাণের সময় এলাকার লোকজন আরেকটু উঁচু করে সেতুটি নির্মাণের দাবি জানিয়েছিল। কিন্তু এলজিইডি ও ঠিকাদার কর্তৃপক্ষ গ্রামবাসির দাবিকে উপেক্ষা করে তাদের খেয়াল-খুশিমতো সেতু নির্মাণ করেছে। যার কারণে বর্ষকালে গ্রামের কৃষকরা বোরো ধান বোঝাই, বালু ব্যবসায়ীরা বালু বোঝাই এবং মৎস্যজীবিরা মৎস্য বোঝাই নৌকা-ট্রলার নিয়ে যাতায়াত করতে পারছেন না। এতে কয়েকটি গ্রামের হাজার হাজার মানুষ ভোগান্তির শিকার।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক বাসিন্দা বলেন, তৎকালীন আওমীলীগ সরকারের আমলে তৈরি এ সেতুটি নির্মাণ করার সময় স্থানীয় আওমীলীগ নেতারা ও এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী মিলে সেতুর টাকা নয়ছয় করেছেন। তারা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, উজানের পাহাড়ি বালুমহাল থেকে বালু বোঝাই নৌকা নিয়ে মাঝিরা এই নদ দিয়ে কুশিয়ারা নদীতে পার হয়ে সিলেটের বালাগঞ্জ, ফেঞ্চুগঞ্জসহ বিভিন্ন এলাকায় বালু বিক্রি করেন। এছড়া বর্ষায় কৃষকরা বোরো ধান বোঝাই করে এবং জেলেরা নৌকা নিয়ে মাছ শিকার করেন। কিন্তু এই সেতুতে এখন নৌকা চলাচলে বাধা সৃষ্টি হচ্ছে। স্থানীয় বকশিপুর গ্রামের বাসিন্দা
রকিব মিয়া বলেন, এই এলাকায় বেশিরভাগ দরিদ্র কৃষক ও মৎস্যজীবি পরিবার রয়েছে। বর্ষায় কৃষকরা বোরো ধান বোঝাই করে এবং জেলেরা মাছ ধরতে নৌকা নিয়ে যাতায়াত করতেন। যারা বর্ষা মৌসুমে নদীতে মাছ শিকারসহ প্রয়োজনীয় কৃষিপণ্য নিয়ে যাতায়াত করে জীবিকা নির্বাহ করতেন। সেতু নিচু করে নির্মাণ করায় জেলেদের জীবিকার পথ প্রতিবন্ধকতা তৈরি হয়ে গেলো। মানুষের যাতায়াতের সুবিধাসহ সেতুর নিচ দিয়ে নৌকা ও ট্রলার চলাচলের উপযোগী করে সেতু নির্মাণ করার কথা থাকলে কর্র্তৃপক্ষের গাফিলতির কারণে এ অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে।
জানা যায়, মৌলভীবাজার এলজিইডির অধিনে ৪৬ মিটার দৈর্ঘ্য আরসিসি গার্ডার ব্রিজ, সংযোগ সড়ক ও ছোট কালভার্ট নির্মাণে ২০২০ সালে ‘ভেরিয়েশন কন্ট্রাক্ট’ মূল্য ধরা হয়েছে ৪ কোটি ১২ লাখ ৫ হাজার ৩শ ৬৫ টাকা। কাজটি ২০২১ সালের ৮ মার্চ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও পূণঃসংশোধন করে মেয়াদ বৃদ্ধি করে ২০২২ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত সমাপ্তির তারিখ নির্ধারণ করা হয়। অতিরিক্ত প্রায় আড়াই বছর পর মূল সেতুর কাজ শেষ হলেও নতুন কালভার্ট ও সংযোগ সড়কের কাজ এখনো চলমান রয়েছে। এসব নির্মাণ কাজের দায়িত্বে রয়েছে শেরপুর জেলার ধ্রুব মোশারফ নামের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান।
জানতে চাইলে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ধ্রুব মোশারফ (জেবি)’র প্রতিষ্ঠানের এক সহযোগী গণমাধ্যমকর্মীদের জানান, প্রকৌশলী যেভাবে ডিজাইন দিয়ে কাজের অনুমোদন দিয়েছেন আমরা সেভাবেই সেতু নির্মাণ করেছি। আমাদের বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ সঠিক নয়।
এ বিষয়ে মৌলভীবাজার এলজিইডি’র নির্বাহী প্রকৌশলী আহমেদ আব্দুল্লাহ দৈনিক খোলা কাগজকে স্থানীয়দের অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, সেতুটি পরিকল্পিতভাবে এবং ডিজাইন মতই নির্মাণ করা হয়েছে। তিনি বলেন, শুধু সেতু করলেই তো হবে না। তাই সেতু চলাচল উপযোগী করার জন্য আমরা সংযোগ সড়ক ও কালভার্ট নির্মাণ করছি। তবে আনুষ্ঠানিকভাবে সেতুটি এখনও উদ্বোধন হয়নি বলেও জানিয়েছেন মৌলভীবাজার এলজিইডি’র নির্বাহী প্রকৌশলী আহমেদ আব্দুল্লাহ।
© Deshchitro 2024