• মোঃ নাছির প্রধান :


ইতিহাসের কালো অধ্যায় খ্যাত বঙ্গবন্ধুর ৪৭তম শাহাদাত বার্ষিকীতে বঙ্গবন্ধুর প্রতি জানাচ্ছি বিনম্র শ্রদ্ধাঞ্জলি। ১৯৭৫ সালের এই দিনে খন্দকার মোস্তাকের নেতৃত্বে কতিপয় বিপথগামী সেনা সদস্য তথা দেশি বিদেশি ষড়যন্ত্রের নীল নকশায় সপরিবারে শাহাদাত বরণ করেন হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বর ৩০ লাখ শহীদের রক্ত ও ২ লাখ মা বোনের সম্ভ্রমের বদৌলতে বাংলাদেশ স্বাধীনতার পূর্ণতা লাভ করে। অত:পর সদ্য স্বাধীন যুদ্ধবিদ্ধস্ত বাংলাদেশকে ঢেলে সাজাতে মনোনিবেশ করলেন স্বাধীন বাংলার স্বপ্নসারথি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।


৭১ এর পরাজিত শক্তি বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে হেরে গেলেও জাতির পিতার দীর্ঘদিনের লালিত স্বপ্ন সোনার বাংলাকে দুঃস্বপ্নে পরিণত তথা বাংলাদেশকে একটি ব্যর্থ ও অকার্যকর রাষ্ট্রে পরিনত করার স্বপ্নে সর্বদা বিভোর ছিলেন। তার‌ই ধারাবাহিকতায় ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগষ্ট শুক্রবার ভোররাতে বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে নৃশংস নরকীয় কায়দায় হত্যাযজ্ঞে মেতে ওঠে সেনা সদস্যরা। ঘাতকদের বুলেটের আঘাত থেকে বঙ্গবন্ধুর কনিষ্ঠ সন্তান শিশু শেখ রাসেলও রক্ষা পাননি। শিশু শেখ রাসেলের শেষ আকুতি ছিল তাঁকে হত্যা না করে লন্ডনে বসবাসরত তার হাসু আপার কাছে যেন পাঠিয়ে দেন। শিশু শেখ রাসেলের বিনয়াবনত আকুতি ঘাতকদের হৃদয় বিন্দুমাত্র টলাতে পারেনি। শিশু শেখ রাসেল তখন চতুর্থ শ্রেণীর ছাত্র। উল্লেখ্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে যখন সপরিবারে হত্যা করা হয় তখন জননেত্রী শেখ হাসিনা এবং শেখ রেহানা লন্ডনে বসবাস করতেন। যার জন্য সৌভাগ্য ক্রমে তাঁরা প্রানে বেঁচে যান।


দীর্ঘ চড়াই উৎরাই পেরিয়ে বঙ্গবন্ধু ৭ই মার্স তৎকালীন রেসকোর্স ময়দানে একটি জ্বালাময়ী ভাষণ দেন। ৭ই মার্সের ঐতিহাসিক ভাষণে ঘুমন্ত বাঙ্গালি সম্প্রদায়কে জেগে উঠার আহ্বান জানিয়েছেন বাঙ্গালী জাগরণের অগ্রদূত জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্সের ভাষন ৭ কোটি মানুষের হৃদয়কে গভীরভাবে নাড়া দেয়। যার ফলশ্রুতিতে গোটা বাঙালি জাতির হৃদয়ে স্বাধীনতার দাবানল দাউ দাউ করে জ্বলতে থাকে। এর‌ই ধারাবাহিকতায় তামাম বাঙালি জাতি একাত্বতা পোষণ করে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে। অবশেষে দীর্ঘ ত্যাগ তিতিক্ষা এবং বহু ঘাত-প্রতিঘাত অতিক্রম করে বাংলার আকাশে উদিত হয় স্বাধীনতার রক্তিম সূর্য।


কাউকে মেরে ফেলা মানে এই নয় যে, তাঁকে পরাজিত করা। বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের ‌ইতিহাসের একটি বিরাট অংশ দখল করে রয়েছেন। তিনি চিরঞ্জীব এবং কীর্তিমান। তাঁর মৃত্যু নেই। যুগের পর যুগ তিনি বেঁচে থাকবেন বাঙালির পরম শ্রদ্ধা এবং গভীর ভালোবাসায় তথা আবেগে। একটি অবহেলিত, শোষিত, নিপীড়িত জাতিসত্তার চেতনায় তিনি স্বাধীনতার মন্ত্রণা তথা বীজ বপন করে যার সুফল হিসেবে বাংলাদেশকে এনে দিয়েছেন একটি স্বাধীন সার্বভৌম ভূ-খন্ড তথা লাল সবুজের পতাকা। বিশ্বের মানচিত্রে নতুন করে বাংলাদেশ নামে একটি নতুন রাষ্ট্রের অভ্যুদয় ঘটে ।


জাতির জনক বঙ্গবন্ধু তার বর্নাঢ্য রাজনৈতিক জীবনে তের বার কারাবরণ করলেও প্রকৃতপক্ষে কখনো দমে যাননি। সকল রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা করে বীরদর্পে সামনে অগ্রগামী হোন। বাংলাদেশের স্বাধীনতার প্রশ্নে একটি মহল বাংলাদেশকে কটাক্ষ করে বলেছিলেন বাংলাদেশ হবে একটি তলাবিহীন ঝুড়ি। বঙ্গবন্ধু এসব কথায় কর্ণপাত না করে একাগ্র চিত্তে স্বাধীনতাকামী ৭ কোটি মানুষকে অভয় দেখিয়ে কঠিন লড়াকুর ভূমিকায় উত্তীর্ণ হ‌ওয়ার জোড়ালো আহ্বান জানান। বঙ্গবন্ধুর চৌকষ, বিচক্ষণতা ও দূরদর্শী নেতৃত্বে নিরস্ত্র বাঙালি জাতি আপোষহীন লড়াই চালিয়ে যেতে চুল পরিমান কার্পণ্যতাবোধ করেন নি।অত:পর পাক হানাদার বাহিনী বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতার করে পাকিস্তানের কারাগারে বন্দি করে রাখে এবং বঙ্গবন্ধুকে মেরে ফেলা হবে বলে সাফ জানিয়ে দেন। তাৎক্ষণিক এক প্রতিক্রিয়ায় বন্দিদশাবস্হায় বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন তোমরা আমাকে মেরে ফেললেও আমার লাশটি আমার বাঙালির কাছে পৌঁছে দিও।অত:পর বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশকে স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্রে পরিণত করতে হাসিমুখে মৃত্যুকে আলিঙ্গন করতে সংকোচ বোধ করবেন না বলে অভিমত পোষণ করেন।বঙ্গবন্ধু তার জীবন যৌবন বাংলার দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটানোর জন্য উৎসর্গ করেছেন। আমরা বাঙালি জাতি খুবই ভাগ্যবান বঙ্গবন্ধুর মতো একজন বরেন্য রাজনৈতিক ব্যাক্তিত্বকে পেয়ে। বঙ্গবন্ধুর শূন্যতা কখনো পূরণ হবার নয়। অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ বি‌নির্মানে বঙ্গবন্ধু আমৃত্যু সংগ্রাম করে গেছেন।


আজ বাঙালি জাতির কান্ডারি, মহানায়ক, অকোতভয়, দৃ‌ঢ়চেতা, তেজোদীপ্ত মহাবীর আমাদের নেই কিন্তু তার আদর্শ, সততা, ন্যায়পরায়ণতা, নিষ্ঠা, উদারতা, বিদ্রোহী মনোভাব যুগে যুগে দিশেহারা বাঙ্গালি জাতিকে আলোর পথ দেখাবে। বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে অন্তরে ধারণ করতে হবে। ১৫ আগস্টের শোককে শক্তিতে পরিণত করে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠা করার কাজে মনোযোগ দেওয়াই এখন আমাদের মূখ্য কাজ।


পরিশেষে, মহান আল্লাহ তায়ালার কাছে আরজ আল্লাহ তায়ালা যেন বাঙালি জাতির এই অবিসংবাদিত নেতাকে জান্নাতের সুউচ্চ মাকাম দান করেন।


লেখক,

মোঃ নাছির প্রধান


প্রকাশক : কাজী জসিম উদ্দিন   |   সম্পাদক : ওয়াহিদুজ্জামান

© Deshchitro 2023