|
Date: 2025-05-10 19:11:52 |
◾নবাব শাহজাদা : গণমাধ্যম একটি রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ হিসেবে পরিচিত। একটি দেশের রাজনীতি, সমাজনীতি, সংস্কৃতি ও অর্থনীতির চালচিত্র গণমাধ্যমে প্রতিফলিত হয়। তাই এই শক্তিশালী মাধ্যমটি যদি হয় মুক্ত, নিরপেক্ষ ও বস্তুনিষ্ঠ, তবে সমাজের প্রতিটি স্তরে প্রতিষ্ঠা পায় ন্যায়, স্বচ্ছতা ও গণতন্ত্রের মূল চেতনা। গণমাধ্যমের মূল কাজ হলো—সত্য উদ্ঘাটন, জনমত গঠন এবং ক্ষমতাসীনদের জবাবদিহির আওতায় আনা। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে, অনেক সময় গণমাধ্যমকে নিয়ন্ত্রণ করার অপচেষ্টা দেখা যায়, যা একটি গণতান্ত্রিক সমাজের জন্য ভয়ানক হুমকি।
একটি মুক্ত গণমাধ্যম সমাজকে অবিরাম জাগিয়ে রাখে। এটি শুধুমাত্র সংবাদ প্রচার করে না, বরং মানুষের অধিকার, স্বাধীনতা ও মতপ্রকাশের পক্ষে সোচ্চার ভূমিকা পালন করে। বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পাঠকের মধ্যে চিন্তাশীলতা গড়ে তোলে এবং ভুয়া তথ্যের বিপরীতে দাঁড়ানোর সাহস যোগায়। কিন্তু যখন গণমাধ্যম একপক্ষীয় হয়ে পড়ে, তখন সত্য চাপা পড়ে যায়, বিভ্রান্তি ছড়ায় এবং জনগণ ভুল সিদ্ধান্তে উপনীত হয়। তখন সংবাদ হয়ে উঠে ক্ষমতার দালালি, যা সমাজে বিশৃঙ্খলা ও মিথ্যার চর্চা তৈরি করে।
আজকের প্রযুক্তিনির্ভর বিশ্বে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের প্রসার ঘটেছে বহুগুণে। ফলে যেকোনো সংবাদ মুহূর্তেই ছড়িয়ে পড়ে কোটি মানুষের কাছে। এ বাস্তবতায় গণমাধ্যমের দায়িত্ব আরও বেড়ে গেছে। এখন আর শুধু সংবাদ প্রকাশ করলেই দায় শেষ হয় না, বরং সেটা যাচাই করে, নির্ভরযোগ্য সূত্র থেকে এনে, প্রাসঙ্গিক ব্যাখ্যা দিয়ে পরিবেশন করাই সাংবাদিকতার নৈতিক কর্তব্য। কোনো গুজব বা প্ররোচনামূলক তথ্য প্রচার করলেই জনমনে ভুল বার্তা ছড়িয়ে পড়তে পারে, যা রাষ্ট্রের স্থিতিশীলতাকে হুমকির মুখে ফেলে।
গণমাধ্যমের স্বাধীনতা মানে যেনতেনভাবে যা খুশি প্রচার করার অধিকার নয়। বরং এটি এমন একটি ভারসাম্যপূর্ণ স্বাধীনতা, যার ভেতরে রয়েছে নৈতিকতা, দায়িত্ববোধ ও সততা। সাংবাদিকদেরও হতে হবে সাহসী, ন্যায়ের পক্ষে অবিচল ও তথ্যনির্ভর। প্রভাবশালী গোষ্ঠী বা রাজনৈতিক চাপের কাছে নত না হয়ে তাদের কাজ করতে হবে পেশাদারিত্বের সঙ্গে। একইসঙ্গে গণমাধ্যম মালিকদেরও উচিত সাংবাদিকদের স্বাধীনভাবে কাজ করার সুযোগ করে দেওয়া এবং কোনো লোভ-লালসার ফাঁদে পড়ে সংবাদকে বিকৃত না করা।
একটি মুক্ত ও বস্তুনিষ্ঠ গণমাধ্যম রাষ্ট্রের দর্পণ। এটি যেমন সরকারের ভুল-ত্রুটি তুলে ধরে, তেমনি সমাজের ইতিবাচক দিকগুলোও সামনে নিয়ে আসে। মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, মানবাধিকার রক্ষা এবং গণতন্ত্রের অগ্রযাত্রায় গণমাধ্যম এক অপরিহার্য হাতিয়ার। তাই রাষ্ট্র ও সমাজের সকল মহলের উচিত—এই মাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা, এবং এর ওপর রাজনৈতিক বা অর্থনৈতিক হস্তক্ষেপ বন্ধ করা। তখনই আমরা পাব এক সত্যভিত্তিক, মানবিক ও প্রগতিশীল সমাজ।
লেখক : নবাব শাহজাদা
শিক্ষার্থী: ঢাকা কলেজ
© Deshchitro 2024