লাখাইয়ে মিষ্টি মধুর সুঘ্রানই বলে দেয় ফলের মাস জৈষ্ঠের আগমন। প্রকৃতিতে এখন জ্যৈষ্ঠ মাস। জ্যৈষ্ঠকে বলা হয় মধুমাস। এ মাসেই আম, কাঁঠাল, জামসহ নানা জাতের ফল পাকতে শুরু করে। এসব পাকা ফলের মিষ্টি গন্ধ সহজেই মন কাড়ে। বাজারের দোকানি ও ফুটপাতের দোকানদার ফলের ঝুড়ি নিয়ে বসেছেন। বিক্রিও হচ্ছে প্রচুর। আম, জাম, লিচু, জামরুল, আনারস, কলা ছাড়াও মিলছে লটকন, পেয়ারা, বাঙ্গি ইত্যাদি। তবে খুব বেশি দিন স্থায়ী হয় না বাঙালির রসনাতৃপ্তির এই মাস। মূলত গ্রীষ্ম ঋতুর খরতপ্ত বৈশাখ ও জ্যৈষ্ঠ দুই মাসই মিষ্টি ফলের মাস। তবে তা জমে ওঠে জ্যৈষ্ঠেই। জ্যৈষ্ঠের কাঁঠাল পাকা গরমের কথা সবারই জানা। এমন গরম এ সময়ে পড়ে তাতে মানুষ রীতিমতো অতিষ্ঠ। দর দর করে ঘাম ঝরে নেয়ে ওঠার অবস্থা। অল্প শ্রমে পরিশ্রান্ত। এই মধুমাসের কদর কম নয়। লাখাইয়ের গ্রামের বাজারগুলোতেও দেখা মিলছে হরেক ফলের। পাকা ফলের মধুর ঘ্রাণ আর মৌমাছির গুঞ্জরনে মুখরিত চারদিক। জ্যৈষ্ঠে ঘরে ঘরে দেখা যাবে ফল উৎসবের আমেজ। একে অন্যের বাড়িতে উপহার হিসেবেও পাঠাবে ফল। জ্যৈষ্ঠ মাস বাংলার গ্রামীণ সমাজের ঐতিহ্যেরও অনিবার্য অংশ। গ্রামের মানুষ আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে আম-কাঁঠালের উপহার পাঠিয়ে থাকে এই জ্যৈষ্ঠেই। শহরেও ফলের উৎসব এখন। গ্রাম কিংবা শহরের ফুটপাতে এবং ফলের দোকানগুলোয় নজর কাড়ছে এখন গ্রীষ্মের মৌসুমি ফল। সাম্প্রতিককালে ফল বেচা-বিক্রির ধরনও পাল্টে গেছে। রিকশাভ্যানে নানা রূপ বৈচিত্র্যের রসালো ফলের পসরা সাজিয়ে বিক্রেতারা সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ঘুরে বেড়ায় শহর বাজার গ্রাম মহল্লায়। তবে দাম কিন্তু চড়া। নতুন নতুন সব বাহারি ফলের চড়া দামের ভারে সাধারণ ক্রেতারা তাদের চাহিদা মেটাতে হিমশিম খায় রীতিমতো। বাংলাদেশে চাষ করা ফলের ৯০ ভাগই আম, কাঁঠাল, লিচু, তরমুজ ও নারিকেল। আমের কথাই ধরা যাক। প্রায় ৬ হাজার বছর ধরে আমের চাষ শুরু হলেও বাণিজ্যিকভাবে শুরু হয় আঠারো শতকের দিকে। বর্তমানে সুস্বাদু ও পুষ্টিগুণসমৃদ্ধ আমের প্রায় ৩ হাজার বুনো ও চাষের প্রজাতি রয়েছে। আম বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় ফল হওয়ায় আমকে বলা হয় ফলের রাজা। বাংলাদেশের প্রায় সব অঞ্চলে আম উৎপাদনে অনেক এগিয়ে। গুণগত মানের কারণেও আমের রয়েছে বিভিন্ন নাম যেমন- মোহনভোগ, ল্যাংড়া, ক্ষীরসাপাতি, রসগোল্লা, রাজভোগ, মিশ্রিদানা, কালোপাহাড়, হাজারী, গুটুলে, বুলবুলি, রসখাজা, মনোহরা, বিশ্বনাথ, গৌরজিত, হাঁড়িভাঙা, কুয়াপাহাড়ি, সাটিয়ারপরা, সিঁদুরে, বউভুলানি ইত্যাদি। এসব আম ছাড়াও নতুন উদ্ভাবিত আম্রপালি, মল্লিকা, সিন্ধু, রত্না, পুপিতো, মহানন্দা, আলফানসো, চোষা ইত্যাদি আম মধুমাসে দেশের সব জায়গাতে পাওয়া যায়। স্বাস্থ্যবিদদের মতে, দেশীয় ফল পুষ্টিগুণ বিদেশি ফলের চেয়ে অনেক বেশি। মৌসুমি ফল দেহের রোগ প্রতিরোধ করতে ব্যাপক সাহায্য করে থাকে। যেমন ভিটামিন সমৃদ্ধ কাঁচা আম চোখ ভালো রাখতে সহায়তা করে থাকে, কোলন ক্যান্সার প্রতিরোধে সহায়তা করে থাকে। দেশীয় ফল ত্বকের সৌন্দর্য বৃদ্ধিসহ দেহের খাদ্য পরিপাক ও পানির চাহিদা মেটাতে সাহায্য করে থাকে।
প্রকাশক : কাজী জসিম উদ্দিন   |   সম্পাদক : ওয়াহিদুজ্জামান

© Deshchitro 2024