|
Date: 2025-05-17 14:04:01 |
সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলায় যত্রতত্র ফেলা প্লাস্টিক বর্জ্য এখন এক ভয়াবহ পরিবেশগত সঙ্কটে পরিণত হয়েছে। খাল, নদী, জমি এবং বসতবাড়ির চারপাশে জমে থাকা এই অপচনশীল বর্জ্য পানি নিষ্কাশনে বাধা সৃষ্টি করছে, জমির উর্বরতা নষ্ট করছে এবং জনস্বাস্থ্যের জন্যও হয়ে উঠছে বড় হুমকি।আশাশুনির কুল্যা ইউনিয়নের মহিষাডাঙ্গা বাজার সংলগ্ন খালের পাশে বসবাস করেন ৬৫ বছর বয়সী অমল দাস। তিনি বলেন:“এই খালটা একসময় প্রাণ ছিল আমাদের। এখন শুধু প্লাস্টিক আর দুর্গন্ধ। ছোট বেলায় যেইখানে মাছ ধরতাম, এখন ওখানে হাঁটাও যায় না।”অন্যদিকে, প্রতাপনগর ইউনিয়নের বাসিন্দা যুবক কামরুল ইসলাম বলেন:“পলিথিনে খাল পুরা আটকা। বর্ষায় পানি নামতে পারে না, সব জমি ডুবে যায়। সরকার একবার সাফ করল, কিন্তু মানুষ আবার আগের মতোই ময়লা ফেলে।”প্লাস্টিক বর্জ্যের কারণে কৃষিজমির ক্ষতি এখন চোখে দেখা যাচ্ছে। স্থানীয় কৃষক রফিকুল ইসলাম বলেন:“আমার ৪ বিঘা জমিতে ধান হয় না আগের মতো। মাটিতে গাছের শিকড় প্রবেশই করতে পারে না। প্রতিবার চাষের আগে পলিথিন কুড়াই।”উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা জানান:“আমরা কৃষকদের সচেতন করছি। কিন্তু এই বর্জ্য যেহেতু পরিকল্পিতভাবে সরানো হচ্ছে না, তাই এর প্রভাব দিনে দিনে বাড়ছে।”খালের পানি ব্যবহার করায় অনেকেই চর্মরোগসহ নানা অসুখে আক্রান্ত হচ্ছেন। উপজেলার শ্রীউলা ইউনিয়নের বাসিন্দা গৃহবধূ লাইলী খাতুন বলেন:“আমার বাচ্চার গায়ে বারবার ঘা হয়। ডাক্তার বলে খালের পানি ব্যবহার করায় এই সমস্যা। কিন্তু নলকূপ নষ্ট, খাল ছাড়া উপায় নেই।”আশাশুনি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল অফিসার বলেন:“বর্জ্য থেকে পানিতে যে ক্ষতিকর উপাদান ছড়ায়, তা ত্বক ও পেটের রোগ সৃষ্টি করে। বিশেষ করে শিশুরা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।”আশাশুনি উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) কৃষ্ণা রায় বলেন:“বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় আমরা কাজ করছি। সচেতনতা বাড়াতে স্কুল-কলেজে ক্যাম্পেইন চালানো হচ্ছে। ভবিষ্যতে ইউনিয়ন পর্যায়ে বর্জ্য সংগ্রহ ও রিসাইক্লিংয়ের ব্যবস্থা চালু করার পরিকল্পনা আছে।”ইয়ুথ ফর দ্যা সুন্দরবন আহবায়ক কর্ণ বিশ্বাস কেডি বলেন,“এটা শুধু পরিবেশ নয়, আগামী প্রজন্মের টিকে থাকার প্রশ্ন। এখনই যদি পদক্ষেপ না নিই, তাহলে কৃষি, মৎস্য, এমনকি পানীয় জলের নিরাপত্তা চরম হুমকির মুখে পড়বে।”প্লাস্টিক দূষণ আশাশুনির নদী-খাল ও কৃষিজমিকে নিঃশেষ করে দিচ্ছে। এখানকার মানুষ স্বাস্থ্যঝুঁকি ও জীবিকা সংকটে পড়ছেন। এর থেকে পরিত্রাণ পেতে প্রয়োজন প্রশাসনের কার্যকর পদক্ষেপ, জনসচেতনতা এবং স্থানীয়ভাবে প্লাস্টিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনার টেকসই ব্যবস্থা।
© Deshchitro 2024