লাখাইয়ের নিম্ন আয়ের মানুষদের সংসার চালানো এখন বেজায় কঠিন। এক দিন আয় করতে না পারলে অধিকাংশ নিম্ন আয়ের মানুষের জীবন সংকটে নিপতিত হয়। এই নিম্ন আয়ের মানুষদের অবস্থা ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। নিম্ন আয়ের পরিস্থিতিটা স্বচক্ষে দেখা গেলেও দেখা যাচ্ছে না নিম্ন মধ্যবিত্ত ও মধ্যবিত্তদের অবস্থা।প্রতিবেদক প্রতিবেদন করতে গিয়ে শুনতে হয়েছে কিছু নিদারুণ কষ্টকর কথামালা । লাখাইয়ের বুল্লাবাজারের রিকশা চালক বাদশা মিয়ার পরিবারে সদস্য ৭জন। দিনে আয় প্রায় ৫০০ টাকা। যে টাকা শেষ হয়ে যায় পাঁচ কেজি চাল কিনতেই। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির বাজারে এখন তাঁর সংসার চালানো বেজায় কঠিন। বাদশা মিয়া লাখাই উপজেলার ৬নং বুল্লা ইউনিয়নে পুর্ববুল্লা গ্রামের বাসিন্দা। গতকাল লাখাই উপজেলার বুল্লাবাজারে তাঁর সাথে কথা হয়।বাদশা মিয়া জানান, রিকশাযোগে দিনভর বিভিন্ন দোকানের মালামাল টেনে প্রায় ৫০০/৬০০' টাকা আয় হয়। বিকেলে ৫ কেজি চাল/ ডাল কিনলে আর কোন কিছু কেনার টাকা থাকে না। সকালে বাড়ি থেকে বের হওয়ার সময় ছোট্ট মেয়েটি বিভিন্ন আবদার করে, সবদিন মেয়েটার আবদার পূরণ করতে পারিনা। মন চাইলেও ভাল মন্দ খেতে পারি না। এরকম আরও কয়েকজন রিকশা চালকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন তারা। দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতির সঙ্গে প্রতিদিনকার আয়ের সামঞ্জস্য নেই। গত কয়েক মাসের ব্যবধানে তাদের সংসারে অভাব। এক বছরের মেয়েকে কোলে নিয়ে টিসিবি পণ্য নেওয়ার জন্য লাইনে দাঁড়িয়ে ছিলেন পশ্চিম বুল্লার লুৎফা বেগম। তিনি জানান, লাইনে দাঁড়িয়ে থেকে টিসিবি পণ্য না পেয়ে খালি হাতে ফিরে গিয়াছেন, তার স্বামী সব্জি বিক্রেতা, প্রতিদিনের আয়ে ছয় সদস্যের পরিবার চলে না। তাই প্রখর রোদেও দুধের শিশুকে নিয়ে লাইনে দাঁড়িয়ে থাকেন। এখান থেকে কিছু চাল ডাল তৈল পেলে কয়েকটি দিন অন্তত ভাল যাবে। বুল্লাবাজারের সবজি বিক্রেতা রাকিব মিয়া বলেন,আমার পরিবার লোক ৬জন, দিন শেষে যা ইনকাম হয় তা দিয়ে সংসার চালাতে হিমশিম পাই। কৃষক জুনাইদ মিয়া বলেন,আমার একমাত্র আয়ের উৎস হলো কৃষিকাজ,এ বছর বোরোধানে ফলন ভাল হলেও বর্তমানে সংসার চালাতে কষ্ট হচ্ছে। চা বিক্রেতা মোঃ রিপন মিয়া বলেন, আমি প্রতিদিন ৬০০/৭০০ ইনকাম করি, ৮জন সদস্য নিয়ে আমার সংসার,কিন্তু দিনে শেষে লাভাংশের এক টাকাও নিয়ে বাড়ী যেতে পারি না। সিএনজি চালক আব্দুল কাইয়ুম বলেন,দৈনিক ইনকাম ভালই হয়,কিন্তু এনজিও কিস্তি তুলে সিএনজি গাড়ী কিনেছিলাম, এখন প্রতি সপ্তাহে মোটা অংকের টাকা গুনতে হয়,সব মিলিয়ে বেশি ভাল না। পরিশেষে, আমরা দেখছি সমাজে নানান অসংগতির চিত্র। একটা শ্রেণি সত্যিকার অর্থেই অভুক্তপ্রায় আর মধ্যবিত্তের অবস্থাও দিন দিন খারাপের দিকেই যাচ্ছে। সরকারের উচিত দ্রুত সময়ে সংকট বিবেচনায় কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা।
প্রকাশক : কাজী জসিম উদ্দিন   |   সম্পাদক : ওয়াহিদুজ্জামান

© Deshchitro 2024