|
Date: 2025-05-30 11:39:49 |
◾জাহেদ কায়সার : জিয়াউর রহমান, ডাক নাম কমল। ১৯৩৬ সালের ১৯ জানুয়ারি বগুড়া জেলার বাগ বাড়ীতে তার জন্ম। ছাত্র জীবন থেকে তিনি ছিলেন অত্যন্ত মেধাবী ও লাজুক স্বভাবের। ১৯৫৩ সালে পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে যোগদান করে ১৯৫৫ সালে স্বীয় কর্মদক্ষতা ও যোগ্যতার বলে কমিশন প্রাপ্ত হন। ১৯৬৫ সালে তিনি পাক-ভারত যুদ্ধে অসীম বীরত্বের পরিচয় দিয়ে সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। ১৯৭০ সালে তিনি অষ্টম ইষ্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট গঠনের দায়িত্ব নিয়ে চট্টগ্রাম আসেন এবং কঠোর পরিশ্রম ও তীক্ষ্ণ মেধা শক্তির সমন্বয়ে এই রেজিমেন্টকে শক্তিশালীরূপে গড়ে তোলেন। মূলত তখন থেকে তিনি এই দেশের আপাময় জনতাকে নিয়ে ভাবতে থাকেন।
১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ জাতিকে কোন দিক নির্দেশনা না দিয়ে শেখ মুজিবর রহমান যখন পাক সেনাদের হাতে আত্মসমর্পণ করেন এবং আওয়ামী লীগের অন্যান্য নেতারা জাতিকে নেতৃত্ব শূন্য করে হতাশা ও অন্ধকারে ফেলে ভারতে আশ্রয় নিলেন ঠিকতার পর পরই সে সময় জিয়াউর রহমান চট্টগ্রাম সেনানিবাসে বিদ্রোহ ঘোষণা করে তার অন্যান্য সহযোগীদের নিয়ে অত্যন্ত সাহসীকতা ও বিচক্ষণতার সাথে চট্টগ্রাম কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে ২৭ মার্চ স্বাধীনতার ঘোষণা দেন। নেতৃত্বহীন বাংলাদেশের আপামর ছাত্র-জনতা জিয়াউর রহমানের সেই ডাকে উজ্জীবিত হয়ে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েন এদেশের সাহসী মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতিরোধের মুখে বাধ্য হয় পাক সেনাদের আত্মসমর্পণ করতে। ১৯৭১ সালে ১৬ ডিসেম্বর দেশ স্বাধীন হয়। মুক্তিযুদ্ধে অসামান্য বীরত্বের জন্য জিয়াউর রহমান বীর উত্তম খেতাব লাভ করেন। ১৯৭৫ সালে শেখ মুজিবর রহমান নিহত হলে দেশের আইন-শৃঙ্খলা চরম অবনতি ঘটে। এ সময় আওয়ামীলীগের নেতৃত্বাধীন সংসদ সদস্য ও মন্ত্রীরা পদত্যাগ না করে অনেকেই খন্দকার মোশতাকের মন্ত্রীসভায় যোগদান করে।
৩ নভেম্বর জিয়াউর রহমানকে বন্দী করে খালেদ মোশারফ নিজেকে সেনাপ্রধান ঘোষণা করলে ঢাকা সহ সারা দেশে সিপাহী জনতা বিক্ষোভে ফেটে পড়ে। ৭ নভেম্বর সাধারণ সিপাহীরা সেনানিবাসে বিপ্লব ঘটিয়ে জিায়উর রহমানকে বন্দিদশা থেকে মুক্ত করে নিয়ে এসে একজন রাষ্ট্রনায়ক বা রাজনৈতিক নেতার মতো মাথার উপর তুলে স্লোগান দিতে থাকে। সেদিন ঢাকা সহ সারা বাংলাদেশে জনগণ স্বতঃস্ফূর্ত আনন্দ উল্লাসের যে বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়েছিল তা এদেশের মানুষ আজও তা মনে রেখেছে। ৭ নভেম্বর সিপাহী-জনতার উত্তাল আবেগ ও আনন্দের জোয়ারকে মনে হয়েছিল ১৬ ডিসেম্বর এর মতো আরেকটি বিজয় দিবস।
সে দিন জিয়াউর রহমান সিপাহী জনতার সম্মিলিত আহ্বানে সাড়া দিয়ে দেশকে গৃহযুদ্ধ ও আগ্রাসী শক্তির হাত থেকে রক্ষা করে রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব গ্রহণ করেন।
শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের রাজনৈতিক অঙ্গনে আগমন ছিল আকস্মিক। ৭৫ সালের নভেম্বর মাসে সেনাবাহিনী যখন স্বার্থদ্বন্দ্বের ঘাত-প্রতিঘাতে ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন, স্বাধীনতা-সর্বভৌমত্ব যখন বিপন্ন সে সময়ের ঘটনা প্রবাহে অপ্রত্যাশিতভাবে তাঁকে জাতীয় রাজনীতির কেন্দ্রে নিয়ে আসে। সেনাবাহিনীর মধ্যে অন্তদ্বন্দ নিরসর, আইন-শৃঙ্খলা পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা ইত্যাদি জরুরী দায়িত্বগুলো তিনি অত্যন্ত বিচক্ষণ তার সাথে সম্পন্ন করেন। তিনি রাজনীতি, অর্থনীতি, পররাষ্ট্রনীতি পুনঃ প্রতিষ্ঠা করেন।
এই ধারাবাহিকতায় ১৯৭৮ সাল এর ৩ জুন সর্বজনীন ভোটাধিকার এবং বহুদলীয় অংশগ্রহণের মাধ্যমে সম্পূর্ণ অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন দিয়ে জনগণের ভোটে দেশের প্রথম রাষ্টপ্রতি নির্বাচিত হন এবং সংবিধানে "ধর্ম নিরপেক্ষতা বাদ দিয়ে" বিছমিল্লাহির রহমানির রাহিম” সংযোজন করেন এবং একই সালের ১লা সেপ্টেম্বর বহুদলীয় রাজনীতির ধারাকে শক্তিশালী করার লক্ষ্যে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বি.এন.পি) প্রতিষ্ঠা করেন এবং বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ, গনতন্ত্র ও ধর্মীয় মূল্যবোধ রক্ষার্থে তিনি ১৯ দফা কর্মসূচি ঘোষণা করেন। ১৯৮০ সালের ২৬ শে আগস্ট তিনি জাতিসংঘের বিশেষ অধিবেশনে গুরুত্বপূর্ণ ভাষণ দেন। ১৯৮১ সালের ৩০ মে দেশী বিদেশী চক্রান্তে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসে একদল বিপদগামী সেনা সদস্যের হাতে এই মহান রাষ্ট্রনায়ক শাহাদাত বরণ করেন।
লেখক - সাবেক যুগ্ম সম্পাদক।
জাতীয়তাবাদী সামাজিক সাংস্কৃতিক সংস্থা (জাসাস)
চট্টগ্রাম মহানগর কমিটি ।
© Deshchitro 2024