|
Date: 2025-06-13 13:33:24 |
ঈদে কোরবানির কারণে অনেক পরিবার এখনো রান্না করছেন কোরবানির মাংস। রান্না করা মাংসেরও অনেকের হাঁসফাঁস অবস্থা। এমন পরিস্থতিতে ঈদ-পরবর্তী বাজারে গরু-খাসির মাংস পাওয়া গেলেও ক্রেতার দেখা নেই। তবে শহরের মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্তদের ভরসার জায়গা মাছ, মুরগি ও ডিমে স্বস্তি খুঁজছেন অনেকে। এদিকে সবজির বাজারে ক্রেতা কম থাকায় দামও কিছুটা কমেছে।
শুক্রবার (১৩ জুন) সকালে রাজধানীর বেশ কিছু বাজার ঘুরে দেখা গেছে, প্রতিকেজি ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ১৫০ থেকে ১৬০ টাকায়। সোনালি মুরগি ২২০ থেকে ২৩০ টাকা, লাল লেয়ার ২০০ থেকে ২২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। দেশি মুরগি এখনও কেজি ৫০০ থেকে ৫৫০ টাকা।
রাবেয়া খাতুন পেশায় একজন স্কুলশিক্ষিকা। তিনি দৈনিক দেশচিত্রকে বলেন, ঈদের পর পরিবারে আর কেউই মাংস খেতে চাচ্ছে না। গরু-খাসির মাংসে যেন অনেকটা বিতৃষ্ণা চলে এসেছে। তাই সোনালি ও ব্রয়লার মুরগি কিনেছি। মুরগির দামটা আমার কাছে অন্যান্য সময়ের তুলনায় বেশ কমই মনে হয়েছে। মোটামুটি সস্তা হওয়ায় এখন মুরগির মাংস সবাই খেতে পারে।
মুরগি বিক্রেতা নুরুল ইসলাম দৈনিক দেশচিত্রকে বলেন, ঈদের পর দুই দিন বিক্রি একেবারে থেমে গিয়েছিল। এখন আবার একটু গতি এসেছে। দামও একটু কমে এসেছে, সেটা ভালো লক্ষণ। তবে দেশি মুরগিতে আগ্রহ কম, দাম বেশি, তাই মানুষ হাতই দিচ্ছে না।
ডিমের বাজারেও রয়েছে কিছুটা স্বস্তি। আজ রাজধানীর বাজারে প্রতি ডজন ডিম বিক্রি হয়েছে ১৩০ টাকায়, যা এক সপ্তাহ আগে ছিল ১৩৫ থেকে ১৪০ টাকা।
ডিম কিনতে আসা বেসরকারি চাকরিজীবী সাইফুল ইসলাম দৈনিক প্রথম বলেন, সকাল-বিকেল মিলিয়ে পরিবারে প্রতিদিন ডিম লাগে। আগে ডজনপ্রতি ১০ টাকাও বেশি দিতাম। এখন ১৩০ টাকায় পেয়ে কিছুটা ভালো লাগছে। সব জিনিসের দাম যখন বাড়ছে, তখন অন্তত ডিমে স্বস্তি পাচ্ছি।
ডিম বিক্রেতা ইকবাল হোসেন বলেন, ঈদের পর ডিমের চাহিদা বেড়েছে। সবাই এখন ঘরে ফিরেছে, অফিস-স্কুলও খুলছে, তাই আবার প্রতিদিনকার খাবারে ডিমের ব্যবহার বাড়ছে। দাম একটু কমেছে সরবরাহ ভালো থাকায়।
ঈদের ছুটি শেষে মাছের বাজারে ব্যাপক ভিড় দেখা গেছে। অনেকেই বলছেন, বাড়িতে কোরবানির মাংস শেষ, এখন মাছের দিকেই ঝুঁকছেন। বাজারে আজ বড় রুই বিক্রি হয়েছে ৩০০ থেকে ৩২০ টাকায়, কাতল ৩০০ থেকে ৩৪০ টাকা, পাবদা ৩৫ থেকে ৪০০ টাকা, চিংড়ি ৬৫০ থেকে ৭০০ টাকা, টেংরা ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা, শিং ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকা, কৈ ২০০ থেকে ২২০ টাকা, তেলাপিয়া ও পাঙ্গাস ১৮০ থেকে ২০০ টাকায়। তবে দেশি জাতের শিং ও কৈ যথাক্রমে ১২০০ ও ১০০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।
রামপুরা বাজারে মাছ কিনতে আসা আকবর হোসেন নামক এক ক্রেতা বলেন, ঈদের পর মন চাচ্ছে হালকা কিছু খেতে। মাংস খেতে খেতে হাঁপিয়ে গেছি। এখন বাজারে এসে রুই মাছ কিনেছি ৩০০ টাকা কেজিতে, যা সাধারণত ৩৪০ টাকায় কেনা হতো। দামটা একটু কমতি দেখে বেশ খুশি হলাম।
মাছ বিক্রেতা হাসান আলী বলেন, ঈদের আগে মাছ একদম চলেনি। এখন আবার চাহিদা বেড়েছে। দামও কিছুটা কম, সরবরাহ ভালো। তবে দেশি শিং-কৈ এখনও খুব দামি, কারণ এগুলো খুঁজে পাওয়া কঠিন।
অন্যদিকে গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৭৫০ থেকে ৮০০ টাকা, খাসির মাংস ১১০০ টাকা কেজি দরে। কিন্তু ক্রেতা নেই বললেই চলে।
এদিকে আজকের বাজারে প্রতি পিস লাউ বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকায়, পেঁপে প্রতি কেজি ৪০ টাকা, মিষ্টি কুমড়া প্রতি কেজি ৪০ টাকা, ঢেঁড়স প্রতি কেজি ৪০ টাকা, করলা প্রতি কেজি ৬০ টাকা, পটল প্রতি কেজি ৬০ টাকা, কাঁকরোল প্রতি কেজি ৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
এছাড়া বরবটি প্রতি কেজি ৬০ টাকা, শসা ৬০ টাকা, চিচিঙ্গা ৬০ টাকা, ঝিঙ্গা ৬০ টাকা, ধন্দুল ৬০ টাকা, কচুমুখি ৮০ টাকা, টমেটো ৮০ টাকা, গাজর ৮০ টাকা, কাঁচা মরিচ ৮০ টাকা এবং কঁচুর লতি প্রতি কেজি ৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
রাজধানীর শান্তিনগর বাজারে বাজার করতে এসেছেন বেসরকারি চাকরিজীবী হায়দার হোসেন। তিনি বলেন, বাজারে সবজির দাম তুলনামূলক কমই আছে, তবে বাজারে ক্রেতা কম সে কারণে বিক্রেতারা সব ধরনের সবজি আনেনি। আর বাজারেও ক্রেতাদের উপস্থিতি বলতে গেলে খুবই কম। মূলত ঈদ শেষে এখনো সিংহভাগ মানুষ ঢাকায় ফেরেনি। সে কারণেই বাজারে ক্রেতার সংখ্যা খুব কম।
© Deshchitro 2024