শহরে নান্দনিকতা আজকাল গ্রামের চলে এসেছেশীতে সকালে কিংবা বিকালে ভাবা পিঠা রাস্তা পাশে বসে বিক্রি করে ঠাণ্ডায়  খেজুর রসের তীব্র ঝাঝের স্বাদসত্যি অদ্ভুত রকম অমৃত স্বাদ দেখে মনে পড়ে যায় মায়ে হাতে নানান রকম পিঠের কথা সকালের হিমেল ঠান্ডার গরম গরম ভাবা পিঠা খাওয়া কথা জীবিত থাকা অবস্থা ভুলা যাবে না মা আজ নেই কিন্তু মায়ে ভালোবাসা আজও মনে পরে নিজে সন্তান যখন আমার স্ত্রীকে মা বলে  ডাকে তখন মনে হয় আমিও এমনি করে ডেকে ছিলাম আমার মাকে

আমি রুমি রহমান প্রবাসিআট বছর ধরে ইতালিতে আমার স্ত্রী মোছাঃ রুচি রহমান আর মেয়ে রুহিকে নিয়ে বসবাস করিআজ আট বছর পর দেশে ফিরলামগ্রামের বাড়ি পলাশপুর যাচ্ছি ভ্যানে  বসে মনে হয় শান্তি নীড়ে যাচ্ছি ফিরেঅন্তকাল হলে এই বাংলারূপ  হারিয়ে ছিলাম পরবাসে  পাশ্চাত্য দুনিয়ার মোহ কাটতে এতদেরি হয়ে গেছে বুঝতেই পারিনিভ্যানে বসে চারদিকে ঘুরে ফিরে তাই কত পরিবর্তন হয়েছে আমাদের সমাজের রাস্তা পাকা করা, ইট সিমেন্টের বাড়ির দেয়ালে নকশা করা দেখে মনে হচ্ছে শহরে নান্দনিকতা গ্রামের ঘরে পৌছে গেছে ভাবতেই মনে প্রশান্তি চলে আসে হিমেল বাতাস বইছে, বেশ ঠাণ্ডাও পড়েছে

দেখতে দেখতে বাড়িতে আসলাম আমাদের বাড়ির পাশে কয়কটা বাড়ি আছে বাড়িগুলো দেখলে মনে হয় আমি সেই বিশ বছর পুরোনো গ্রামেই ফিরে আসলামবাড়িতে আসতে সবাই দেখে আবেগটা আর ধরে রাখতে পারলাম নাচোখে পানি চলে এসে যায় আর মনে হল,কতটা যান্ত্রিক হলে আপন মানুষদের রেখে এভাবে দুরে থাকা যায় কত আদর যত্ন ভালোবাসা পরবাসে হারিয়ে যায় ভাবতে অবাক হয়ে যাই নিজেই নিজেকে ধিক্কার দেই পুঁজিবাদের যুগে মানুষ আর মানুষ নেইহয়ে গেছে সব মেসিনের মত সুইচে মধ্যে তার জীবন বন্দি

এমনিতে শীতে সূর্য দেখা যাচ্ছে না তারপর আবার উত্তরে বাতাস তাই খুব শীত পড়েছে দুইদিন হলো বাড়িতে আসারঘর বন্দি থেকে মুক্ত হতে চায় বাঁধন ছাড়া ছুটতে চাইছে মনমুক্ত পাখির মত খোলা আকাশে উড়ে যেমন যাই একটু ঘুরে আছি বাজারে যাওয়া উদ্দেশ্য বের হলাম আট আাটটি বছর হলো  হয়নি গ্রামে আসা বাজার উদ্দেশ্যে যেতেই  বাড়ির পাশে কয়কটা বাড়ি দেখেছিলাম যেখানে এসে মনে হয়েছে সভ্যতা এখানে আসেনি-যেখানে অভাব অনাটনে জর্জরিত জীবনে সেই আগের অধ্যায়ে বন্দি অভাবের টানে বিদেশ দিয়ে পাড়ি-জীবনে কত সময় গেছে ছাড়ি আপনজনকে শেষবার দেখায় সৌভাগ্য হয়নি আমার যে মাকে ছাড়া কোনো দিন,একটা রাত কেটে যায়নিতাকে ছাড়া কেটেছে আট বছর

আর এখন কেটে যাবে বাকি জীবনমাকে শেষবারে মত দেখা ভাগ্য আমার হয়নিগত দুই বছরে আগে মা পরকাল গমন করছে প্রবাসির কষ্ট কেউ বুঝে না আপনজন খুঁজে টাকাতাই নিজের কষ্ট নিজের রাখি জমা কয়েকটা বাড়ির মধ্যে রহিম চাচা বাড়িতে গেলামউঠানের কোণে ছোট একটা ছেলে শীতে কাঁপছে নাম জিজ্ঞাসা করলাম বলল,রাতুল রহিম সাহেব তোমার কি হয় রাতুল বলল-দাদা তোমাকে ঠাণ্ডা লাগে না গায়ে হাত দিয়ে বলাম,এই তোমার গা তো জমে বরফরাতুল বলল-কৈ ঠাণ্ডাগায়ে যে ঠাণ্ডা জামা নেই,সেটা দেখে বুঝা যাচ্ছে অভাব এখানে এসে বাসা বেধেছে রহিম চাচা বের হয়ে আসল,গায়ে একটা কম্বল দিয়েবলল-কেমন আছ,বাবা? আমি কি বলল, বুঝতে পারছি না চাচা দেহের এত পরিবতন চোখে না দেখলে বিশ্বাস করা যেত না বয়স বেশি না কিন্তু ৬০ বছর বয়স মনে হচ্ছেবলাম ভালো আছি,চাচা চাচা আপনারা কেমন আছেন চাচা-আমরাও ভালো আছি,বাবাঅনেক দিন পর আসলে,বাবা মাকেও শেষ দেখা দেখতে পারলে নাবুকের ভিতর আহাকার করে ওঠে, মাকে দেখতে পারিনি কিছু কষ্ট নিজের বুকে চেপে রেখে চলতে হয়আমি তাদের মতই একজন চাচা আপনাদের এমন অবস্থা কেনো ছেলেটার গায়ে শীতে কাপড় নেইবাড়ির বাকি সবার একই অবস্থা শীতের জন্য কষ্ট হচ্ছে না চাচা-আরে বাবা,তেমন না কাজের সময় হলে, সব ঠিক হয়ে যাবেতাছাড়া এবার কেনো জানি, কেউ শীতে পোশাক দিলো নাগতকাল বাজের মাঠে গিয়ে বসে ছিলামঅনেকে বলছে দিবে শীতের জামা দিবে কিন্তু কৈ দিলো না আমি অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলামনিজের ভিতর পাষণ্ড হৃদয়টা ক্ষতবিক্ষত হলআমার প্রতিবেশি আপন চাচা চেয়েও কম নাকিন্তু একটা দিনও তাদের খোঁজ নেওয়া হয়নিঅমানুষ মনে হয় দেখতে আমার মত টাকা তো অভাব নেই আজ কিন্তু তাদের পাশে দাঁড়াবো এমন মানুষ হতে পারিনি  বর্তমান এই সময়ের আমাদের সমাজে এমন মানুষ আছে পাশ্চাত্যে বসে চিন্তাও আসেনি কখনযারা কোনো নেতা জন্য অপেক্ষা করে যে কখন আসবেতাদের পাশে দাড়াবে শীতে বস্ত দিয়ে পাশ্চাত্য বসবাস করতে করতে ভুলে গেছি এমন মানুষ আছে সেই সময় চাচি বলে উঠে-প্রতিবারে দেয় বাবা কিন্তু শীতের শেষের দিকেআবার কেউ পায় আবার কেউ পায় না আবার কিছু পাতি নেতা আছে যারা অনেক শীতবস্ত্র বাসে নিয়ে আসেপরে আবার বিক্রি করে দেয়কি বলেন চাচি, এমন হয়কথা বলতে বলতে একজন ভাবাপিঠা নিয়ে এসে বলল-ভাই খায়েনআমি বললাম-চাচা চিনতে পারিনি তোচাচা বলে-আমাদের আরিফের বউ,রাতুলের মাতখনি আমার মনে আরিফের কথাএকসাথে কত সময় পার করেছি আমি জানতে চাইলাম-আরিফ কৈচাচি কেঁদে উঠে বলল-তুমি জানো না, বাবাআমাদের আরিফ নাই,একবছর হল ঢাকা থেকে আসার সময় এক্সিডেন্ট করেআমার বাবা আর ফিরে আসেনিআমি-এতখন চাচার কষ্টটা বুঝতে পারলাম বাড়ির একমাত্র ছেলের আয়ে চলত সংসারতাই তো এই শীতে মধ্যে কাজ করে ঠাণ্ডাকে কাবু করতে চায়মনে জোরে যে মানুষ বেঁচে থাকে সয়ং আল্লাহ তাদের সাথে থাকে বলে,হাজার কষ্টেও বেঁচে থাকেএরা আমাদের সমাজে হতাশা গ্রস্ত মানুষের প্রতিকযারা না পায় শীতে বস্ত, না পায় তৃপ্তি সহ খেতে পাশ্চাত্যে এমন মানুষ খুজে পাওয়া যাবে কি, তা জানি না তবে মনে হয় তারা বেঁচে থাকতো না সমান্য কষ্টেই যারা আত্মহত্যা করে হাজার কষ্টের সংগ্রাম করা মানুষেরা আমাদের কাছে কি কিছুই চায় নাগরিব বলে তাদের সাথে আমরা যে অমানবিক আচারণ করি যেমন এই শীতবস্ত্রর নামে নেতা আসার অপেক্ষা,শীতে মৌসুমে শীত বস্ত না পাওয়াপাশ্চাত্য বসে খবরে দেখি আমার সোনার বাংলার কত উন্নতকিন্তু একজন রহিম চাচা সাহা্য্য করার মত যে গ্রামে কোনো নেতা বা মোড়ল নেইভাবতেই কষ্ট হয়,আমরা বিবেকবান মানুষ দেশের হাজার হাজার কোটি কোটি টাকা বিদেশে ব্যাংকে জমা রেখে করি বিলাসিতা যেখানে কিন্তু রহিম চাচার মত অগণিত মানুষের টাকাও আছে

সমাজে কয়কটা পরিবার শীতে জন্য কষ্ট করেতাদের পাশে দাড়ানো যে আমাদের অবহেলা,সেখানে আমি মানুষ পরিচয়ে প্রাণী থাকিমানুষ আসলে রহিম চাচা মত,যারা কনকনে শীতে বস্তদান করবে বলে আশা নিয়ে থাকেকাল আসবে তাদের শীতের কষ্ট দুর হবেএই আশায়,শীত কষ্ট থাকবে না আর রহিম চাচা আসলে একজন নাহাজার রহিম চাচা আছে সমাজে যারা আধুনিক এই যুগে শীতের জন্য কষ্ট করেশীতের কষ্টে তার জীবন এভাবে হয় তো কেটে যাবেসন্তান হারা কষ্টে নিয়ে মাঠে অন্যের কাজ করেবুকের ভিতর চাপা কষ্টে জমতে জমতে চাচাও একদিন চলে যাবেনকিন্তু তার এই অবস্থা আমরা প্রতিবেশি হিসাবে আমরা কি পার পাবো, ওপারে অর্থবিত্তের জন্য ছুটছি আর ছুটছি লোভ লালসার মগজ পঁচে গেছে টাকা চাই আরো চাই বিবেক হয়েছে পশুর মত আমরা শিক্ষিত সমাজেই সবচেয়ে অভাগা বিদ্যা অর্জন করেও অন্য কষ্টে বুঝিতে পারি না রহিম চাচার বিবেক আছে বলেই শত কষ্টে অন্যের মাঠে কাজ করে শীতকে হার মানায় তার নাতি ঠাণ্ডার মাঝেও বলে শীত কৈআর আমরা অমানুষ থেকে গেলাম মৃত্যু আমাদের হবেভুলে যাই,,,,,,,


 

প্রকাশক : কাজী জসিম উদ্দিন   |   সম্পাদক : ওয়াহিদুজ্জামান

© Deshchitro 2024