চলার পথে হঠাৎ চোখ পড়ল আমের মুকুলের দিকে,নিমিষেই নজর কাড়লো। দেশে আমের মুকুল বের হয়েছে। বাংলার আনাচকানাচে ইতোমধ্যে ছেড়ে যাচ্ছে আমের মুকুলের সমারোহে। বিধাতার বিধানে প্রাণীকূলের জন্য দিয়েছেন বৃক্ষরাশি।

মহান রাব্বুল আলামিনের নিকট প্রার্থনা আমাদের কে খাস রহমতের ছায়াতলে এমনি করে যেন রিজিকের অন্বেষণে ফলজ বৃক্ষের চারাগাছ লাগাই এবং আল্লাহ আমাদের মৃত্যু অবধি রিজিকের ব্যবস্থা করে দেন, আমিন।


জীবিকার পেছনে কমবেশি সবাই দৌঁড়ায়। জীবনের জন্য রিজিক, সেই রিজিকের সন্ধানে অনেকের জীবন পর্যন্ত চলে যায়। কেউ হাড়ভাঙা পরিশ্রম করে সামান্য অর্জন করে, আবার কেউ উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া সম্পদ বসে বসে খায়। এটাই দুনিয়ার রীতি।


রিজিক সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা কুরআনে কারিমে ইরশাদ করছেন , ‘পৃথিবীর প্রত্যেক জীবের জীবিকার দায়িত্ব আল্লাহর। তিনি জানেন তারা কোথায় থাকে এবং কোথায় সমাপিত হয়। সবকিছুই (উল্লেখ) এক সুবিন্যস্ত কিতাবে (লওহে মাহফুজে) রয়েছে।’ -সূরা হুদ: ৬


এই আয়াতের তাফসিরের প্রথম অংশে বলা হয়েছে, দুনিয়ায় বিচরণশীল সবার রিজিকের দায়িত্ব আল্লাহর। আয়াতের এই অংশে বলা হয়েছে, দুনিয়ার রিজিক নির্ধারিত সময়ের জন্য। মানুষের স্থায়ী ও অস্থায়ী একাধিক আবাসস্থল আছে। দুনিয়া অস্থায়ী আবাসস্থল আর আখেরাত স্থায়ী আবাসস্থল। উভয়ের অধিবাসীদের সম্পর্কে আল্লাহ সবিশেষ অবহিত।


আল্লাহতায়ালাই রিজিকদাতা। এ কথা মুসলমানমাত্রই বিশ্বাস করেন। আল্লাহ প্রদত্ত রিজিক মানুষ লাভ করে বিভিন্ন উপকরণের মাধ্যমে। এই রিজিক তিনি দান করেন নিজ অনুগ্রহে।


অনেকে মনে করেন, জীবিকার ব্যবস্থা হয় চাকরি, ব্যবসা বা চাষাবাদের মাধ্যমে। কিন্তু কোরআনের ঘোষণা হলো, রিজিকের সিদ্ধান্ত হয় আসমানে। আল্লাহ বলেন, ‘আকাশে রয়েছে তোমাদের রিজিক ও প্রতিশ্রুত সব কিছু।’ –সূরা জারিয়াত: ২২


আল্লাহতায়ালা নিজ বান্দাদের পরীক্ষার জন্য রিজিক কমবেশি করেন। রিজিক বৃদ্ধি আল্লাহর সন্তুষ্টির প্রমাণ নয়, অনুরূপ রিজিকের সংকীর্ণতাও তার অসন্তুষ্টির কারণ নয়। অধিকাংশ মানুষ এ বিষয় জানে না যে, দুনিয়ার সচ্ছলতা কারও শুভ লক্ষণের প্রমাণ নয়। কেননা আখেরাতের সাফল্য নির্ভর করে নেক আমলের ওপর। দুনিয়ায় আল্লাহ কখনও অবাধ্যকে দেন সচ্ছলতা, অনুগতকে দেন সংকীর্ণতা। আবার কখনও এর বিপরীত করেন্। কখনও উভয়কে সচ্ছলতা দেন, কখনও দেন সংকীর্ণতা। কখনও অবাধ্য বা অনুগত ব্যক্তিকে এক সময় দেন সচ্ছলতা, অন্য সময় দেন অসচ্ছলতা। এসব কিছু নিয়ন্ত্রণ করেন আল্লাহতায়ালা নিজ প্রজ্ঞা ও হিকমতের ভিত্তিতে।


রিজিকের এই হ্রাস-বৃদ্ধি পরীক্ষাস্বরূপ। এ প্রসঙ্গে আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘আমি অবশ্যই তোমাদের পরীক্ষা করব, কখনও ভয়ভীতি, কখনও অনাহার দিয়ে, কখনও তোমাদের জানমাল ও ফসলাদির ক্ষতির মাধ্যমে। (এমন পরিস্থিতিতে ধৈর্যধারণ করতে হবে) তুমি ধৈর্যশীলদের (জান্নাতের) সুসংবাদ দান করো।’ –সূরা বাকারা: ১৫৫


স্বভাবগতভাবে মানুষ তাড়াহুড়া প্রবণ। সে দ্রুত সব কিছু পেতে চায়। হাদিসে বলা হয়েছে, ‘নির্ধারিত জীবিকা আসবেই। কেউ তার রিজিক ভোগ না করে মৃত্যুবরণ করবে না।’


নবী করিম (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘হে মানুষ! তোমরা আল্লাহকে ভয় করো। ধনসম্পদ সংগ্রহে উত্তম পন্থা অবলম্বন করো। কেননা কেউ তার রিজিক পরিপূর্ণ না করে মৃত্যুবরণ করবে না। যদিও তা অর্জনে বিলম্ব হোক না কেন।’ –সুনানে ইবনে মাজাহ


বিখ্যাত বুজুর্গ হাসান বসরি (রহ.) বলেছেন, আমি কোরআনের নব্বই জায়গায় পেয়েছি, আল্লাহতায়ালা বান্দার রিজিক নির্ধারণ করে রেখেছেন এবং রিজিকের দায়িত্ব নিয়েছেন। কেবল এক জায়গায় পেয়েছি, ‘শয়তান তোমাদেরকে অভাব-অনটনের ভয় দেখায়।’ -সূরা বাকারা: ২৬৮


প্রকাশক : কাজী জসিম উদ্দিন   |   সম্পাদক : ওয়াহিদুজ্জামান

© Deshchitro 2024