বসন্ত ঋতু বাংলার সৌন্দর্যের প্রতীক,  সবদিক থেকে জনজীবনের জন্য নিরাপদ সময়। এ সময় খোলা আকাশের নিচে রাত কাটানো যায়। লেপ-কাঁথা ছাড়া শোয়া যায় যেখানে খুশি সেখানে। বসন্তে প্রকৃতির কাছে এ নিরাপত্তা পেয়ে মানুষ বিভিন্ন প্রকার অনুষ্ঠানাদির আয়োজন করে। বিভিন্ন স্থানে শুরু হয় ধর্মসভা। বিবাহ অনুষ্ঠান ও বউভাতের আয়োজন হয় শহর-গ্রামে সর্বত্র। বছরের সব মেলামোদিনী গান সার্কাসের আয়োজন হয় এ ঋতুতেই। উন্মুক্ত আকাশের নিচে পসরা সাজিয়ে বসে কত দোকানপাট।


ঋতুরাজ বসন্তেন স্থায়িত্বকাল খুবই কম। ফাল্গুন-চৈত্র মাসকে তার স্থায়িত্বকাল ধরা হলেও ফাল্গুনের মাঝামাঝি গ্রীষ্মকাল এসে পড়ে। বাংলাদেশে বনভূমি কমে যাওয়ায় শুধু বন্যপ্রাণী নয়, আবহাওয়ায়ও অস্থিরতা শুরু হয়েছে। শীত ও বর্ষা কমে গিয়ে গ্রীষ্মের দাপট বেড়ে গেছে। শুধু দাপট নয়, গ্রীষ্ম ঋতু বসন্তকে প্রায় গ্রাস করে ফেলেছে। তাই তখন আমরা ঘাম মুছতে মুছতে ও পাখার বাতাস নিতে নিতে প্রাণান্ত হই।


প্রাণী ও উদ্ভিদ জগতে বসন্তকাল বৃহৎ বৃহৎ কল্পনা ও স্বপ্নের জন্ম দেয়। জীবনকে রঙিন ও মধুর করে ভাবতে শিখায়। বসন্তের এ মুহূর্তে মানব মনে জাগে কত কথা, কত গান— ‘আজি এ বসন্ত সমীরণে/কত কথা মোর মনে পড়ে।’ দখিনা বাতাসের মৃদুদোলা দেহ ও মনের ক্লান্তি জুড়ায়। বসন্তের মনোমুগ্ধকর পরিবেশ আমাদের প্রাণকে চঞ্চল করে তোলে। বসন্তের দক্ষিণা বাতাসে নবজাগরণের দোলা লেগে এ সময় বাংলার প্রকৃতি যেমন শিহরিত হয়; তেমনি অজানা এক সুরের প্রত্যাশায় মন ব্যাকুল হয়ে ওঠে বাঙালির। দখিনা হাওয়া পথিকের হৃদয়ে উদাসীনতার সুর তোলে। হৃদয় পাগল করা বাংলার অপরূপ শুধুই দৃষ্টির সীমানা অতিক্রম করে।

প্রকাশক : কাজী জসিম উদ্দিন   |   সম্পাদক : ওয়াহিদুজ্জামান

© Deshchitro 2024