বাঁধের মধ্যে থাকা ৩০-৪০ টি গাছ কেটে ফেলায় ও নিম্নমানের কাজ করে অক্ষত বাঁধের ক্ষতির প্রতিবাদে করায় শাল্লায় কৃষকদের উপর মামলা করেছে পিআইসি’র (প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি) সভাপতি। সোমবার বিকালে কৃষক কালাই মিয়া তালুকদার ও আজিজ মিয়া তালুকদারের উপর চাঁদাবাজির অভিযোগ এনে মামলা করেন পিআইসি সভাপতি রেজু মিয়া। ঘটনাটি ঘটেছে শাল্লা উপজেলার হবিবপুর ইউনিয়নের ছায়ার হাওর উপ-প্রকল্পের ২২ নম্বর পিআইসির আনন্দপুর এলাকায়। বিকালে শাল্লা থানার একজন সাবইন্সপেক্টরসহ কয়েকজন পুলিশ সদস্য ও পাউবোর উপ-সহকারী প্রকৌশলী বাঁধ এলাকায় গিয়ে মানববন্ধনকারীদের দোষারোপ করেছেন।
জানা যায়, ২০১১ সালে সওজ (সড়ক ও জনপদ) বিভাগের উদ্যোগে এই বাঁধে দিরাই-শাল্লা সড়ক নির্মাণের জন্য মাটি ফেলা হয়। দীর্ঘ ১২ বছর ধরে বাঁধটি অক্ষত রয়েছে। বাঁধের পূর্বপাশে সারিবদ্ধভাবে লাগানো ৩০-৪০টি মেরা, বড়ই ও অন্যান্য গাছও ছিল। কিন্তু ছায়ার হাওর উপ প্রকল্পের আওতায় ২২ নম্বর পিআইসির লোকজন এসব গাছ কেটে ফেলেছে। বাঁধের মধ্যে থাকা গাছগুলো কেটে ফেলায় বাঁধটিকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলেছে ওই পিআইসি কমিটি।
কৃষক আজিজ মিয়া বলেন, ছায়ার হাওরের আনন্দপুরের ২২ নম্বর পিআইসির কাজের অনিয়মের প্রতিবাদে আমরা গ্রামবাসী মানববন্ধন করেছি। বাঁধে রেন্টি, মেরা, বরইসহ বিভিন্ন প্রজাতির অনেক গাছ ছিল, কমিটির লোকজন গাছগুলো কেটে ফেলেছে। এতে বাঁধ দুর্বল হয়েছে।
তিনি বলেন, ২০ লাখ ৫৮ হাজার টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে বাঁধের কাজে। কিন্তু এখানে এতো বরাদ্দ লাগে না। কিছু কাজ করে কাজ শেষ করেছে। এই অনিয়মের প্রতিবাদ করায় আমাদের উপর চাঁদাবাজির মামলা করেছে।
কৃষক ও সাবেক মেম্বার কালাই মিয়া বলেন, অন্যায়ের প্রতিবাদে মানববন্ধন করায় তারা (পিআইসি কমিটি) আমাদের উপর ক্ষিপ্ত হয়ে চাঁদাবাজির মামলা করেছে। আমরা বয়স্ক মানুষ এলাকার কেউ আমাদের উপর কোন দিন এরকম অভিযোগ করে নি। এলাকাবাসীর সাথে প্রতিবাদ করায় আমার উপর মামলা করেছে পিআইসির লোকজন।
আজিজ মিয়া ও কালাই মিয়া জানালেন, সোমবার বিকালে পুলিশ ও পাউবোর প্রকৌশলী বাঁধে এসে তাদের দোষারোপ করে বলেছেন, মানববন্ধন করা ঠিক হয় নি। কাজে অনিয়ম হলে পাউবো প্রকৌশলীকে জানানোর কথাও বলে যান তারা।
পাউবো’র শাল্লার দায়িত্বপ্রাপ্ত উপ-সহকারী প্রকৌশলী আব্দুল কাইয়ুম অবশ্য বলেছেন, বাঁধে গিয়ে কাউকে দোষারোপ করা হয় নি। বলা হয়েছে কাজ এখনো শেষ হয় নি। শেষ হবার পর কোন ভুল হলে জানানোর কথা বলা হয়েছে। পুলিশ তিনি নিয়ে যান নি জানিয়ে বলেছেন, ওখানে আগে থেকেই পুলিশ ছিল। তারাও কাউকে দোষারোপ করেন নি।
২২ নম্বর পিআইসি সভাপতি রেজু মিয়া বলেন, আমার কাছে চাঁদা দাবি করায় আমি থানায় অভিযোগ করেছি। গত বৃহস্পতিবার এরা আমার কাছে ৫০ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করেছে। গাছ কাটার বিষয়ে তিনি বলেন, ২-৪ টা চারা গাছ কেটেছি। এতে বাঁধের কোন ক্ষতি হবে না।
শাল্লা থানার ওসি মো. আমিনুল ইসলাম বলেন, অভিযোগ পেয়েছি। তদন্তের পর সত্য মিথ্যা জানা যাবে।
প্রসঙ্গত, গত রোববার (২৮ জানুয়ারি) দুপুরে বাঁধের নামে এসব অপকর্মের প্রতিবাদে মানববন্ধন করেন গ্রামবাসী। এতে ছায়ার হাওর উপ প্রকল্পের আওতায় ২২নম্বর পিআইসির বিরুদ্ধে আইনানুগ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানানো হয়।
বিশ্বনাথ চক্রবর্তীর সভাপতিত্বে ও আব্দুল আজিজ তালুকদারের সঞ্চালনায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন হবিবপুর ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক সদস্য কালাই মিয়া তালুকদার।
বক্তব্য রাখেন কৃষক গরমোহন রায়, মৃৎশিল্পী অরবিন্দু পাল, উপজেলা সেচ্ছাসেবক লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মিহির কান্তি রায়, কৃষক সুশীল শীল, রবীন্দ্র বিশ্বাস, অমর চাঁদ দাশ, বাবুল দাশ, অঞ্জন দাশ, বকুল দাশ ও কলেজ শিক্ষার্থী জুয়েল রায় প্রমুখ।
মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, বাঁধের ক্ষতি করা হয়েছে করেছে বাঁধের দুই পাশের মধ্যভাগে বাঁশের আড়ি দিয়ে। বাঁশের গোড়া পচে গিয়ে গর্তের সৃষ্টি হবে। বাঁধে যেভাবে কাজ করা হচ্ছে তা খাল কেটে কুমির ডেকে আনার মত। প্রকৃতপক্ষে এই বাঁধে কোনো প্রকল্পেরই প্রয়োজনই ছিল না। তবুও এখানে হাওরের ফসলরক্ষার নামে বাঁধ মেরামতের জন্য প্রকল্প দেওয়া হয়েছে ২০ লাখ ৫৮ হাজার টাকা।

প্রকাশক : কাজী জসিম উদ্দিন   |   সম্পাদক : ওয়াহিদুজ্জামান

© Deshchitro 2023