|
Date: 2023-02-19 02:07:34 |
পিঠা বিক্রির টাকায় ভালো আয় হচ্ছে এরশাদের। এরশাদ মিয়ার দোকানে তৈরি হচ্ছে সুস্বাদু চিতই ও ভাঁপা পিঠা।সাথে ৩-৪ রকমের নানান পদের ভর্তা । আর চুলা থেকে নামানোর পর মুহূর্তেই তা চলে যাচ্ছে ক্রেতার হাতে।
চিতই ও ভাপা পিঠা বিক্রি করে ভালো আয় রোজগার হচ্ছে এরশাদ মিয়ার। সংসারও চলছে পিঠার আয় দিয়ে।এই আয় দিয়েই চলছে ছেলেমেয়ের লেখাপড়া।
প্রতিদিন তিনি দুই থেকে আড়াই হাজার টাকার পিঠা বিক্রি করছেন। খরচ বাদে তার আয় হয় প্রায় ১০০০ টাকা।প্রতিমাসে তিনি প্রায় ৩০ হাজার টাকা আয করেন। যা দিয়ে ভালোভাবে সংসার খরচ মিটিয়েও আয় করতে পারছেন। এতে তিনি বেশ লাভবান হচ্ছেন। এখন তার মুখে তৃপ্তির হাসি।
৩ বছর ধরে পিঠা বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করছেন ময়মনসিংহের নান্দাইলের চরবেতাগৈর ইউনিয়নের চরউত্তরবন্দ গ্রামের মৃত হাসিম উদ্দিনের ছেলে এরশাদ মিয়া (৩৫)।স্ত্রী,৩ ছেলে ও ১ মেয়ে নিয়ে তার অভাবের সংসার।পিঠা বিক্রি করে তার সংসারে এসেছে স্বচ্ছলতা।
নিজে বাড়ি থেকে চালের গুঁড়া কুটে সেই গুড়া থেকেই তৈরি করেন স্বাদের চিতই ও ভাঁপা পিঠা।অনেক পরিচ্ছন্নতার সহিত তিনি তৈরি করেন এই পিঠা।এতে তার পিঠার কদর বাড়ছে। সকাল বিকাল পিঠা খেতে দলবেঁধে লোকজন চলে আসে এরশাদ মিয়ার দোকানে।
প্রতিটি চিতই এবং ভাপা পিঠা বিক্রি হয় ১০ টাকায়। ভাপা পিঠা মুখরোচক করতে ঝুড় ঝুড়ে খেজুরের গুড়, নারিকেল দিয়ে বানানো হয়। চিতই পিঠার স্বাদ বাড়াতে সরষে বাটা, ধনে পাতার ভর্তা,শুঁটকি ভর্তা,মরিচের ঝাল দোকানে রাখা হয়।মুখরোচক হওয়ায় দলবেঁধে নারী, পুরুষ, শিশু,বৃদ্ধসহ সকল শ্রেণীর মানুষ মজা করে পিঠা খাচ্ছেন।
পিঠা তৈরিতে এরশাদের দোকানে রয়েছে ৩টি মাটির চুলা। একসঙ্গে তিনটি চুলায় চিতই ও ভাঁপা পিঠা তৈরি করা যায়।চিতই পিঠা তৈরিতে চালের গুঁড়া লবণ ও পানি ছাড়া তেমন কোনো উপকরণ লাগে না। চালের গুঁড়া পানিতে মিশিয়ে মাটির সাচে বিশেষ উপায়ে তৈরি করা হয় চিতই পিঠা।
ভাপা পিঠা তৈরির উপকরণ হচ্ছে চালের গুঁড়া, নারকেল ও গুড়। গোল আকারের পাতিলে কাপড় পেচিয়ে ঢাকনা দিয়ে পাতিলের ফুটন্ত পানিতে ভাপ দিয়ে তৈরি হয় ভাপা পিঠা।
সন্ধ্যার পর থেকে লাইন দিয়ে কিনতে হয় এরশাদ মিয়ার পিঠা। উত্তরবন্দ বাজারে এরশাদের দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে অনেককেই দেখা যায় পিঠা খেতে। আর শীতের পিঠা খাওয়ার তৃপ্তি মেটাতে গিয়ে তার পরিবারের উপার্জন আসছে এখান থেকেই, যা দিয়ে চলছে তার সংসার।
সরেজমিন রবিবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) সকালে চরউওরবন্দ বাজারে গিয়ে দেখা গেছে, এরশাদ মিয়া বাজারে বসে পিঠা বিক্রি করছেন। তিনটি চুলায় তিনি পিঠা তৈরি করছেন।চারদিকে পিঠা খেতে আগ্রহী লোকজন ভীড় জমিয়েছেন। কেউ বসে কেউবা দাঁড়িয়ে পিঠা খাচ্ছেন।এই দৃশ্য চোখে পড়ার মত।
পিঠা হাতে নিয়ে একজন করে বের হচ্ছেন আর অন্যরা পিঠা নিতে লাইনে দাঁড়াচ্ছেন,কেউ আবার চেয়ারে বসে অপেক্ষা করছেন।এসব দোকানে সকাল ও সন্ধ্যার পর ভিড় জমায় সকল শ্রেণি পেশার মানুষ।
কার্তিক মাস থেকে ফাল্গুন মাস পর্যন্ত এই পাঁচ মাস এরশাদ মিয়া পিঠা বিক্রি করেন। প্রতিদিন তার পিঠার দোকানে ভীড় সবসময় লেগেই থাকে।পিঠা বানিয়ে তিনি কুলোতে পারেননা। অনেকেই অপেক্ষা করে পিঠা না পেয়ে চলে যান। কেউ আবার অপেক্ষা করেও পিঠা খেয়ে তারপর যান।বাড়ির জন্যও নিয়ে যান।
স্থানীয় আওয়ামীলীগ নেতা খোকন মিয়া বলেন, এরশাদ মিয়ার দোকানে আমি প্রতিদিন পিঠা খাই।অনক স্বাদের পিঠা।খেতে আমার কাছে ভালোই লাগে।
স্থানীয় সোহেদ, শামছুল, রিপন,জসিম,সুমন ও আলামিন জানান,এরশাদ মিয়ার দোকানে পিঠা খাওয়ার জন্য অনেক ভীড় থাকে।তবুও আমরা অপেক্ষা করে চিতই এবং ভাপা পিঠা খাই।এ এক অন্যরকম আনন্দ।
বীরকামট খালী দক্ষিণ বাজারের পল্লী চিকিৎসক মো.গোলাম মোস্তফা বলেন আমি প্রতিদিন এরশাদের দোকান থেকে পিঠা কিনে খাই। তার বানানো পিঠার মান ভালো। তাই কিনে থাকি।
এরশাদ মিয়া জানান,অধিকাংশ মানুষের পছন্দের পিঠা হলো ভাপা ও চিতই পিঠা। এই পিঠার কদর সবচেয়ে বেশি। প্রতি পিস চিতই পিঠা ও ভাপা পিঠা ১০ টাকা করে বিক্রি করি।প্রতিদিন দুই থেকে আড়াই হাজার টাকার পিঠা বিক্রি করি।এতে পিঠা বিক্রি করে আমার ১০০০ টাকার মতো আয় হয়।
চরউত্তরবন্দ বাজারসহ পাশের স্থানীয় বীরকামট খালী দক্ষিণ,উত্তর বাজার এবং হাটশিরা বাজারের ও পিঠা বিক্রি করেন অনেকেই।তাদের মধ্যে মো.আব্দুস সাত্তার পিঠা বিক্রি করে অনেক লাভবান হয়েছেন।
© Deshchitro 2024