ঝিরঝির বাতাসে ঝনঝন শব্দে গমের কাঁচা-পাকা শীষ হেলেদুলে পড়ছে একে অপরের গাঁয়ে।এ দৃশ্য দেখে কৃষকের মুখে ফুটে উঠেছে অনাবিল তৃপ্তির হাসি।কাঁচা-পাকা গমের শীষে দোল খাচ্ছে চাষির মন ও শরীর।সোনালী রোদে চিকচিক করছে প্রতিটি গমের শীষ। কৃষকের স্বপ্ন যেন মিশে গিয়েছে সোনালী গমের শীষে।


ময়মনসিংহের নান্দাইলে প্রতিটি মাঠেই বর্তমানে গমের সোনালী কাঁচি-পাকা শীষ বাতাসে দোল খাচ্ছে।আগামী ১০ থেকে ১৫ দিন পর জমি থেকে কৃষকরা গম কাটা শুরু করতে পারবেন। রোগবালাইয়ের তেমন আক্রমণ না থাকায় চলতি মৌসুমে গমের বাম্পার ফলনের আশা করছেন কৃষকগণ।


রবি শস্যের মধ্যে অন্যতম একটি লাভজনক আবাদ হচ্ছে গম। বর্তমানে গমের বাজার ভালো থাকায় গম চাষে লাভের আশা করছেন চাষিরা।


কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, চলতি রবি মৌসুমে নান্দাইলে ৮০ হেক্টর জমিতে কৃষক গম চাষ করেন। অধিকাংশ জমিতে কৃষক উচ্চ ফলনশীল জাত হিসেবে পরিচিত বারি-২৮,৩০, ৩২ ও ৩৩ রোপণ করেছেন। এছাড়া বারি-২৫ ও ২৭ জাতের গমও চাষ করা হয়েছে। গমের ৫টি রাজস্ব প্রদর্শনী প্লটও রয়েছে।


অনুকূল আবহাওয়া এবং কৃষি বিভাগের সঠিক তদারকি ও পরামর্শে গম ক্ষেতে কোনো রোগবালাই ছিল না। তাই গমের বাম্পার ফলন হয়েছে।


শনিবার (৪ মার্চ) সকালে সরেজমিন উপজেলার বীরকামট খালী,চরকামট খালী,চরকোমরভাঙা গ্রামে গিয়ে দেখা যায়,প্রতিটি গম ক্ষেতে কাঁচা-পাকা শীষ বাতাসে দোল খাচ্ছে। শেষ সময়ের পরিচর্যায় ব্যস্ত কৃষক। নতুন গম মাড়াই করে ঘরে তুলবেন এ প্রত্যাশায় বুক বেঁধে আছেন প্রতিটি কৃষক পরিবার। 


উপজেলার বীরবেতাগৈর, চরবেতাগৈর,শেরপুর  আচারগাঁও,নান্দাইল, সিংরইল, গাঙ্গাইল, জাহাঙ্গীরপুর, মুশুলী ইউনিয়নসহ অন্যান্য ইউনিয়নেও বিক্ষিপ্তভাবে গমের আবাদ হয়েছে। তবে চরকামট খালী, চরউত্তরবন্দ, চরকোমরভাঙা,চরভেলামারী, চরলক্ষিদিয়া, বীরকামট খালী এবং হাটশিরার চরাঞ্চলে গমের আবাদ বেশি হয়েছে।


বীরকামট খালী গ্রামের গমচাষি ইলিয়াস উদ্দিন, আঃ জলিল,আফাজ উদ্দিনসহ  অনেকেই জানান, বিগত সময়ের চেয়ে এবার গমের শীষ খুব ভালো এসেছে।প্রতিটি শীষ অনেক বড় হয়েছে।


গম চাষি ইলিয়াস উদ্দিন বলেন,প্রথম দিকে আমার ক্ষেতে ঈদুনের আক্রমণ ছিল।অনেক গমের গাছ কেটে ফেলেছে। 


গম চাষি ,আঃ জলিল,আব্দুল হাই- আফাজ উদ্দিনসহ অনেকেই জানান, যদি আবহাওয়া শেষ পর্যন্ত গমের অনুকূলে থাকে ও গমের বাজার ভালো থাকে তাহলে গম চাষে তারা লাভবান হবেন।


গম চাষে বীজ,কীটনাশক ও দিনমজুরসহ ৩ থেকে ৪ হাজার টাকা খরচ হলেও বিঘাপ্রতি ৭ থেকে ৮ মণ গম পাবেন বলে জানান চাষিরা। প্রতি মণ গম বর্তমান বাজার দর ১ হাজার ২ শত টাকারও বেশি, তাই বিঘা প্রতি প্রায় ১০ হাজার টাকার গম বিক্রি করতে পারবেন বলে জানান কৃষকেরা।


গম চাষ একটি অধিক লাভজনক আবাদ। গম চাষে তেমন পানি, সার, কীটনাশক, বালাইনাশক ও নিড়ানীর প্রয়োজন হয় না এতে খরচ অনেক কম। আর কম পরিশ্রমে অধিক লাভ করা যায়। এছাড়াও গমে পোকা-মাকড়ের আক্রমণও তেমন একটা হয় না। গম গাছ জ্বালানি ও বেড়া হিসেবে ব্যবহার করা যায়।


উপজেলা উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা আমিনুল হক বলেন,গত বছরের চাইতে এবছর হেক্টরপ্রতি ফলন বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। বাজার দর ও বেশী, ফলনও  ভালো হয়েছে। তাই চাষিরা অন্য বছরের তুলনায় এ বছর বেশি লাভবান হবেন। চাষিরাও এবার আশাবাদী।


উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ মোহাম্মদ আনিসুজ্জামান বলেন, ‘চলতি মৌসুমে গমের বাম্পার ফলন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। কারণ এ পর্যন্ত গমে তেমন উল্লেখযোগ্য কোন রোগ-বালাইয়ের আক্রমণ হয়নি। চলতি মৌসুমে হেক্টর প্রতি প্রায় ৩.৫ টন হারে ফলন পাওয়া যাবে বলে আশা করা যাচ্ছে।’

প্রকাশক : কাজী জসিম উদ্দিন   |   সম্পাদক : ওয়াহিদুজ্জামান

© Deshchitro 2024