রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে চারুকলা অনুষদ এলাকায় শিক্ষার্থীদের রেললাইন অবরোধের ঘটনায় মামলা করেছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। গতকাল সোমবার পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের ঊর্ধ্বতন উপসহকারী প্রকৌশল (পথ) ভবেশ চন্দ্র রাজবংশীর করা আবেদনটি রাত ১১টার দিকে মামলা হিসেবে গ্রহণ করেছে রাজশাহী রেলওয়ে থানা।


মামলায় আসামি হিসেবে কারও নাম উল্লেখ করা হয়নি। তবে এতে ২০০-৩০০ জন অজ্ঞতানামা ‘বিক্ষুব্ধ জনতার’ কথা বলা হয়েছে।


রাজশাহী রেলওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) গোপাল কর্মকার বলেন, রাতে মামলা হয়েছে। তাঁরা তদন্ত করে ব্যবস্থা নেবেন। এতে কোনো প্রতিষ্ঠানের কারও নাম উল্লেখ করে মামলা করা হয়নি। মামলায় বিক্ষুব্ধ জনতার কথা উল্লেখ করা হয়েছে।


মামলার আবেদনে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ উল্লেখ করেছে, গত রোববার রাত পৌনে আটটার দিকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা গেট এলাকায় বিক্ষুব্ধ জনতা রেললাইনে আগুন লাগিয়ে দেন। তাঁরা গুমটিঘরের জানালা ভাঙচুর করেন। এ সময় রেললাইন সম্পত্তি নাশকতা চালিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত করা হয়। আগুনে পুড়ে তিনটি কাঠের স্লিপার সম্পূর্ণভাবে নষ্ট হয়ে যায়। আনুমানিক রাত সাড়ে ১১টার দিকে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে নষ্ট হওয়া মালামালের বিপরীতে ৯২টি প্যান্ডল ক্লিপ, একটি স্টিল স্লিপার এবং তিনটি কাঠের স্লিপার লাইনে লাগানো হয়। পরে রাত ১২টা ১০ মিনিটে লাইনে ট্রেন চলাচলের জন্য উপযুক্ত হয়।


বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, গত শনিবার সন্ধ্যায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থীর সঙ্গে এক বাসচালকের তর্কাতর্কির সূত্র ধরে নগরের বিনোদপুর বাজারে সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে লোকজন এই সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন। হামলা-সংঘর্ষ ও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ছোড়া কাঁদানে গ্যাসের শেলে আহত হয়েছেন দুই শতাধিক শিক্ষার্থী। এর মধ্যে একটি পুলিশ বক্স ও রাস্তার ধারের অন্তত ৩০টি দোকান পুড়িয়ে দেওয়া হয়।


ঘটনার প্রতিবাদে রোববার সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত বিক্ষোভ করেন শিক্ষার্থীরা। ওই দিন সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে একদল শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনের মহাসড়ক থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে চারুকলা এলাকায় রেলপথের ওপর অবস্থান নেন। বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন স্লোগান দেন। একপর্যায়ে চারুকলা থেকে পয়লা ফাল্গুন উপলক্ষে তৈরি ডামি ও ভাস্কর্য রেললাইনে ওপর এনে পুড়িয়ে দেওয়া হয়। স্লিপার ভাঙারও চেষ্টা করেন কেউ কেউ। পরে রাত পৌনে ১১টার দিকে ওই এলাকায় পুলিশের একটি বিশেষ দল উপস্থিত হলে শিক্ষার্থীরা চলে আসেন। পরে রাত সোয়া ১২টার দিকে ট্রেন চলাচল শুরু হয়। এর আগে শনিবার রাতেও রেলপথ অবরোধ করেন শিক্ষার্থীরা। তখন সাড়ে তিন ঘণ্টা ট্রেন চলাচল বন্ধ ছিল।


পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের মহাব্যবস্থাপক অসীম কুমার তালুকদার বলেন, চারুকলায় রেললাইন ক্ষতিগ্রস্ত করার জন্য তাঁরা একটি মামলা করেছেন।


স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষের ঘটনাকে কেন্দ্র করে এর আগে গত রোববার বিকেলে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার অধ্যাপক আবদুস সালাম বাদী হয়ে নগরের মতিহার থানায় একটি মামলা করেন। ওই মামলায় বিনোদপুর এলাকার ৪০০ থেকে ৫০০ জন অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিকে আসামি করা হয়। একই দিন রাতে সরকারি কাজে বাধাদানের অভিযোগে পুলিশও একটি মামলা করে।

প্রকাশক : কাজী জসিম উদ্দিন   |   সম্পাদক : ওয়াহিদুজ্জামান

© Deshchitro 2023