◾ নিউজ ডেস্ক


নগদ টাকার চরম সংকটে পড়েছে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো। প্রায় প্রতিদিনই কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ধার নিয়ে দৈনিক চাহিদা মেটাচ্ছে কয়েকটি ব্যাংক। এ খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ঋণ আদায় ও নতুন আমানত কমে যাওয়ার পাশাপাশি ডলার সঙ্কটের কারণে এ অবস্থা তৈরি হয়েছে। 


বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, রবিবার (২১ আগস্ট)ও কয়েকটি ব্যাংক কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে প্রায় ৮০০ কোটি টাকা ধার নিয়েছে। এর আগে গত ১৭ আগস্ট সাড়ে সাত হাজার কোটি টাকা, ১৬ আগস্ট সাড়ে ৯ হাজার কোটি টাকা এবং ১৪ আগস্ট সাড়ে ১০ হাজার কোটি টাকা ধার দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এ জন্য ব্যাংকগুলোকে সর্বোচ্চ সুদ গুনতে হয়েছে ৫ দশমিক ৬ শতাংশ।


বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে না এলে সঞ্চয় ভাঙার প্রবণতা আরও বাড়বে। এতে ব্যাংকের বিনিয়োগ সক্ষমতা কমবে। তাই এমন পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য ব্যাংকগুলোকে ঋণ আদায়ে বেশি মনোযোগী হতে হবে। 


গত অর্থবছরের আগস্ট থেকে ব্যাংকিং খাতে ডলার সঙ্কট দেখা দেয়। এ কারণে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছ থেকে ডলার কিনে তাদের প্রয়োজনীয় চাহিদা মেটাচ্ছে ব্যাংকগুলো। 


বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান থেকে দেখা যায়, গত অর্থবছরে ডলারের সঙ্কটে পড়া ব্যাংকগুলো কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছ থেকে ৭৫০ কোটি ডলার কিনেছে। এর বিপরীতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক অন্য ব্যাংকগুলোর কাছ থেকে সাড়ে ৬৭ হাজার কোটি টাকা তুলে নেয়। গত অর্থবছরের ধারাবাহিকতায় চলতি অর্থবছরের শুরু থেকে ব্যাংকগুলোর ডলার সঙ্কট চলতে থাকে। বৈদেশিক মুদ্রাবাজার স্থিতিশীল রাখার জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ থেকে ব্যাংকগুলোর কাছে ডলার বিক্রি অব্যাহত রেখেছে।


সর্বশেষ পরিসংখ্যান থেকে দেখা যায়, চলতি অর্থবছরের শুরু থেকে ১৭ আগস্ট পর্যন্ত ৪৭ দিনে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছ থেকে ১৭ হাজার ৬০৩ কোটি টাকার বিনিময়ে ১৮৫ কোটি ৩০ লাখ ডলার কিনেছে ব্যাংকগুলো। 


বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যানে ব্যাংকগুলোর হাতে উদ্বৃত্ত তারল্য দেখানো হয়েছে ২ লাখ ৩ হাজার ৪২৩ কোটি টাকা। এর মধ্যে নগদ অর্থ মাত্র ২০ হাজার কোটি টাকা। বাকি উদ্বৃত্ত অর্থ সরকারি ট্রেজারি বিল ও বন্ডে আটকে রয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান থেকে দেখা যায়, জুন শেষে সরকারের কাছে ৩ লাখ ২২ হাজার ৬৯৬ কোটি টাকার ট্রেজারি বিল ও বন্ড রয়েছে, অর্থাৎ এ পরিমাণ ব্যাংকের অর্থ সরকারের কাছে ঋণ আকারে রয়েছে।


ব্যাংকাররা জানিয়েছেন, তাদের কাছে ট্রেজারি বিল ও বন্ড রয়েছে। কিন্তু নগদ অর্থের সঙ্কট রয়েছে। আর এ সঙ্কট মেটাতে অনেক ক্ষেত্রেই দৈনন্দিন ব্যয় মেটানো সম্ভব হচ্ছে না। বাধ্য হয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে হাত পাততে হচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ পরিসংখ্যান থেকে দেখা যায়, গত রোববার একটি ব্যাংক দু’দিন মেয়াদি রেপো সুবিধার আওতায় ২৭০ কোটি ৬৪ লাখ টাকার আবেদন করেছিল। বিপরীতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে নগদ টাকার সঙ্কটে পড়া ব্যাংকটিকে ১৩৫ কোটি ৩২ লাখ টাকা ধার দেওয়া হয়েছে। এ জন্য ব্যাংকটিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে সুদ গুনতে হবে সাড়ে ৫ শতাংশ হারে।


অপরদিকে ৭ দিন মেয়াদি রেপো সুবিধার আওতায় পাঁচটি ব্যাংক ৯ হাজার ৩৮৪ কোটি ৯৪ লাখ টাকার ঋণ চেয়েছিল, বিপরীতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ব্যাংকগুলোকে ঋণ দেওয়া হয় ৪ হাজার ৬৯২ কোটি ৪৭ লাখ টাকা। অপরদিকে ১৪টি ব্যাংক দু’দিন মেয়াদি বিশেষ তারল্য সহায়তার আওতায় ৭ হাজার ৪৫১ কোটি ৫০ লাখ টাকার ঋণ চেয়েছিল বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ১৪টি ব্যাংকের চাহিদা অনুযায়ী পুরো অর্থঋণ দেওয়া হয়। সব মিলে রোববারে ২০টি ব্যাংকের ১৭ হাজার ১০৮ কোটি টাকার চাহিদার বিপরীতে ঋণ দেওয়া হয় ১২ হাজার ২৭৯ কোটি ২৯ লাখ টাকা। এ জন্য সুদ গুনতে হয় সাড়ে ৫ শতাংশ থেকে ৫.৬ শতাংশ পর্যন্ত।

প্রকাশক : কাজী জসিম উদ্দিন   |   সম্পাদক : ওয়াহিদুজ্জামান

© Deshchitro 2024