|
Date: 2022-08-22 16:50:10 |
◾ নিউজ ডেস্ক
দেশের সব জেলা পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠানে নির্বাচন কমিশনে (ইসি) তোড়জোর শুরু হয়েছে। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় থেকে জেলা পরিষদের সীমানা বিন্যাস চূড়ান্ত হওয়ার পরেই এ কর্মযজ্ঞে নেমেছে ইসি। মেয়াদোর্ত্তীণ জেলা পরিষদের চেয়ারম্যানরাই বর্তমানে পরিষদের প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। এ প্রশাসকের মেয়াদ দায়িত্বের শুরুর দিন থেকে ৬ মাস।
অর্থাৎ আগামী ২৬ অক্টোবর তাদের মেয়াদ শেষ হবে। সে অনুযায়ী আগামী অক্টোবরের মধ্যেই এ নির্বাচন শেষ করতে চায় স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় ও ইসি। আগামী মাসেই ঘোষণা করা হবে তফসিল। এ লক্ষ্যে জেলা পরিষদের নির্বাচনের জন্য ভোটার তালিকা চূড়ান্ত করতে কমিশনের জেলা নির্বাচন কর্মকর্তাদের চিঠি পাঠিয়েছে। গত রোববার এ চিঠি পাঠানো হয়। চিঠিতে দ্রুত তালিকা চূড়ান্ত করে কমিশনে তথ্য পাঠানোর তাগিদ দেয়া হয়েছে। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় ও ইসি সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর হোসেন বলেন, জেলা পরিষদ নির্বাচন করার বিষয়ে মন্ত্রণালয় থেকে ইসি একটা চিঠি পেয়েছে। এর আলোকে পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে। শিগগিরই কমিশনে সভা আয়োজন করে নির্বাচনের দিনক্ষণের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
কমিশনের অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ বলেন, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় জেলা পরিষদ নির্বাচন করতে সীমানা সংক্রান্ত কোনো জটিলতা নেই, সেটা তাদেরকে জানিয়েছেন। ওই চিঠির আলোকে কমিশন নির্বাচন সম্পন্ন করার প্রাথমিক ধাপে ভোটার তালিকা চূড়ান্ত করবে। সেজন্য জেলা নির্বাচন কর্মকর্তাদের চিঠি পাঠানো হয়েছে। তাদের এ কার্যক্রম সম্পন্ন হলে চলতি বছরের মধ্যে যেকোনো সময় এ নির্বাচন হবে। অক্টোবারের মধ্যেই নির্বাচনটি করা হবে। এ জন্য স্থানীয় সরকার থেকে সম্মতি লাগবে।
কমিশনের একাধিক জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা জেলা পরিষদের ওয়ার্ডের নির্বাচন মন্ডলী ও ভোটার তালিকা সম্পন্নকরণের চিঠি পেয়েছেন বলে সূত্র নিশ্চিত করে বলেছে। এ তালিকা চূড়ান্ত করার জন্য কোনো সময়সীমা না থাকলেও দ্রুত সময়ের মধ্যে করার তাগিদ আছে।
ইসি সচিবালয়ের নির্বাচন পরিচালনা-২ শাখার উপ-সচিব খোরশেদ আলম স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘স্থানীয় সরকার বিভাগ থেকে জেলা পরিষদ (সংশোধন) আইন, ২০২২ এবং জেলা পরিষদ (ওয়ার্ডের সীমা নির্ধারণ), বিধিমালা, ২০১৬ অনুযায়ী দেশের ৬১টি জেলা পরিষদের সাধারণ ও সংরক্ষিত ওয়ার্ডের সীমানা পুনর্নির্ধারণের কার্যক্রম সম্পন্ন করে পরবর্তী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অনুরোধ করা হয়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে জেলা পরিষদ আইন, ২০০০ এর ধারা ১৭ এবং জেলা পরিষদ নির্বাচন বিধিমালা, ২০১৬ এর বিধি ৯ অনুযায়ী নির্বাচনমণ্ডলী ও ভোটার তালিকা প্রস্তুত ও প্রাসকিঙ্গ কার্যক্রম সম্পন্ন করে ইসিতে অবহিত করার জন্য নির্দেশিত হয়ে অনুরোধ করা হলো।’
জানা গেছে, জেলা পরিষদ নির্বাচনে এবার একটি সংসদীয় আসনকে ইউনিট না ধরে উপজেলাকে একটি ইউনিট ধরে সাধারণ সদস্য নির্বাচিত করা এবং ৩টি উপজেলা একটি ইউনিট হিসেবে একজন সংরক্ষিত নারী নির্বাচিত হবেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক উত্তরাঞ্চলের একজন জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা বলেন, গত জেলা পরিষদ নির্বাচনে সংসদীয় আসনের মধ্যে যে কয়টি উপজেলা ছিল সেটাকে একটা ইউনিট ধরে একজন নির্বাচিত ভাইস চেয়ারম্যান দায়িত্ব পালন করলেও এবার একটি উপজেলায় একজন ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হবেন। আর তিনটি উপেজলা নিয়ে একজন সংরক্ষিত ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত করা হবে। ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচিত চেয়ারম্যান, সাধারণ সদস্য ও সংরক্ষিত সদস্যদের ভোটে জেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান, সংরক্ষিত ভাইস চেয়ারম্যান ও একজন জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হবেন। অর্থাৎ নির্বাচিত প্রতিনিধিরাই ভোট দিয়ে জেলা পরিষদ গঠনে ভুমিকা রাখেন।
ইসি ও মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, দেশের ৬১ জেলায় ২০১৬ সালের ২৮ ডিসেম্বর প্রথমবারের মতো জেলা পরিষদ নির্বাচন হয়। ২০১৭ সালের ১১ জানুয়ারি নির্বাচিতরা শপথ নেন। ওই বছরের জানুয়ারি মাসেই জেলা পরিষদগুলোর প্রথম বৈঠক হয়। ফলে পরিষদের ৫ বছরের মেয়াদ চলতি বছরের জানুয়ারিতেই শেষ হয়েছে। জেলা পরিষদ আইন অনুযায়ী, পরিষদের মেয়াদ শেষ হওয়ার ১৮০ দিন আগে নির্বাচন অনুষ্ঠানের কথা রয়েছে। কিন্তু দেশের ৬১টি জেলা পরিষদের মেয়াদ পাঁচ বছর উত্তীর্ণ হওয়ায় গত ১৭ এপ্রিল পরিষদগুলো বিলুপ্ত করা হয়। ওই দিন এক প্রজ্ঞাপন দিয়ে প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাদের (সিইও) জেলা পরিষদের প্রশাসনিক ও আর্থিক ক্ষমতা পরিচালনার দায়িত্ব দেয়া হয়। জেলা পরিষদ আইনের ধারা ৮২ অনুযায়ী সরকারের পক্ষ থেকে প্রশাসক নিয়োগের আগ পর্যন্ত আইনের ধারা ৭৫-এ প্রদত্ত ক্ষমতাবলে দায়িত্বপ্রাপ্ত হন। এতে ক্ষুদ্ধ হন নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা। দেন-দরবার শুরু করেন সরকারের সঙ্গে। পরবর্তী সময়ে অন্য এক আদেশে ওই মাসের ২৭ এপ্রিল সদ্য সাবেক জেলা পরিষদের চেয়ারম্যানদেরই পরিষদের প্রশাসকের দায়িত্ব দেয়া হয়। এ সংক্রান্ত জারি প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, ওই দিন থেকেই তাদের দায়িত্ব শুরু হয়। তবে প্রশাসক হিসেবে তাদের মেয়াদ কোনোভাবেই ছয় মাসের বেশি হবে না।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আগামী অক্টোবরের ২৬ তারিখে বর্তমান প্রশাসকদের মেয়াদ শেষ হবে। এ সময়ের আগে নির্বাচন করতে সব ধরনের প্রস্তুতি নিচ্ছে ইসি। এখন জেলা পরিষদের নির্বাচনে কোন জটিলতা নেই। কারণ ভোটার সংখ্যা কম এবং নির্বাচিতরাই ভোটার। আর জেলা প্রশাসকরা (ডিসি) এ নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করেন। সেপ্টেম্বরের শেষ অথবা অক্টোবরের প্রথম ভাগে এ নির্বাচন করতে হবে। কারণ মেয়াদ পূর্ণের আগেই নির্বাচন করে নির্বাচিতদের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে।
উল্লেখ্য, জেলা পরিষদে প্রশাসক নিয়োগের বিধান যুক্ত করে গত ৬ এপ্রিল ‘জেলা পরিষদ (সংশোধন) বিল-২০২২’ সংসদে পাস হয়। ১৩ এপ্রিল সংশোধিত জেলা পরিষদ আইনের গেজেট প্রকাশ করা হয়। এর ধারাবাহিকতায় মেয়াদোত্তীর্ণ জেলা পরিষদ বিলুপ্ত করে প্রজ্ঞাপন জারি করে স্থানীয় সরকার বিভাগ। সংশোধিত জেলা পরিষদ আইন অনুযায়ী জেলা পরিষদের ‘সচিব’ পদের নাম বদলে ‘নির্বাহী কর্মকর্তা’ করা হয়েছে।
© Deshchitro 2024