|
Date: 2022-08-24 15:05:20 |
◾ নিউজ ডেস্ক
চরম সংকটে পড়েছে নতুনত্বের শর্তে বাজারে আসা ৯টি ব্যাংক। এগুলো হলো : পদ্মা ব্যাংক, ইউনিয়ন ব্যাংক, মিডল্যান্ড ব্যাংক, সাউথ বাংলা অ্যাগ্রিকালচার অ্যান্ড কমার্স ব্যাংক, মেঘনা ব্যাংক, মধুমতি ব্যাংক, এনআরবি ব্যাংক, এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংক এবং গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক। এ ব্যাংকগুলোর অনুমোদনপ্রাপ্তির পূর্বশর্ত ছিল, কৃষি ও গ্রামীণ অর্থনীতিকে গুরুত্ব দেওয়া ও সেবায় নতুনত্ব আনা। পাশাপাশি অনুমোদনের তিন বছরের মাথায় দেশের পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু এসব শর্তের কোনোটাই পূরণ করতে পারেনি বেশিরভাগ ব্যাংক।
আগ্রাসী ব্যাংকিংয়ের কারণে চতুর্থ প্রজন্মের ৯টি ব্যাংকের খেলাপি ঋণের বোঝা ক্রমান্বয়ে বাড়ছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের জুন শেষে ৯টি ব্যাংকের খেলাপি ঋণ দাঁড়িয়েছে ৬ হাজার ৮১০ কোটি টাকা। তবে পাঁচ বছর আগে ২০১৭ সাল শেষে তাদের খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ১ হাজার ১৫০ কোটি টাকা। সুতরাং পাঁচ বছরের ব্যবধানে খেলাপি বৃদ্ধি পেয়েছে ৫ হাজার ৬৬০ কোটি টাকা। হিসাব অনুযায়ী, আলোচ্য সময়ে ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণ বৃদ্ধির হার ৮৩ শতাংশ। পক্ষান্তরে ঋণ বিতরণ বৃদ্ধি পেয়েছে ৫০ শতাংশ। অর্থাৎ চতুর্থ প্রজন্মের ব্যাংকগুলোতে বিতরণের তুলনায় খেলাপি ঋণ বৃদ্ধির হার অনেক বেশি।
খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একাধিক নির্দেশনার পরও শৃঙ্খলার মধ্যে আসেনি তারা। এই ব্যাংগুলোর ঘাড়ে জেঁকে বসেছে অনিয়ম-দুর্নীতি ও পরিবারতন্ত্র। ফলে হুমকিতে পড়েছে এসব ব্যাংক। সেই সঙ্গে ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে আর্থিক খাত। রাজনৈতিক বিবেচনায় এসব ব্যাংককে লাইসেন্স দেওয়া হয়েছিল বলে অভিযোগ রয়েছে। এ কারণেই তারা নিয়ম মানার তোয়াক্কা করছে না। এসব সমস্যা সমাধানে ব্যাংক নিয়ন্ত্রণকারী ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে আরও কঠোর ভূমিকা পালন করতে হবে।
এদিকে নতুন ব্যাংকগুলো কৃষি ও পল্লী ঋণ বিতরণেও পিছিয়ে পড়েছে। এদের মধ্যে সবচেয়ে খারাপ অবস্থায় আছে পদ্মা ব্যাংক। এই ব্যাংক অনুমোদনের সময় কৃষি ও পল্লী ঋণ বিতরণ প্রধান শর্ত থাকলেও গত অর্থবছরে এ খাতে কোনো ঋণ বিতরণ করেনি। কারণ বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবেও ব্যাংকটির কৃষি ও পল্লী ঋণের কোনো তথ্য নেই। তা ছাড়া পদ্মা ব্যাংকের ওয়েবসাইটেও কৃষিঋণ সংক্রান্ত কোনো পণ্যের বিবরণ পাওয়া যায়নি।
এ ছাড়া গত অর্থবছরে ইউনিয়ন ব্যাংক লক্ষ্যমাত্রার ১৯ শতাংশ ঋণ বিতরণে সক্ষম হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ তথ্য অনুযায়ী, পদ্মা ব্যাংকের খেলাপি ঋণের হার ৬৮ শতাংশ। কারণ গত জুন শেষে ব্যাংকটির ঋণ বিতরণের পরিমাণ ছিল ৫ হাজার ৮৪০ কোটি টাকা। এর মধ্যে ৩ হাজার ৯৫০ কোটি টাকা খেলাপি হয়ে পড়েছে। কিন্তু পাঁচ বছর আগেও ব্যাংকটির ঋণ বিতরণের পরিমাণে খুব বেশি পার্থক্য ছিল না। কারণ ২০১৭ সালের ডিসেম্বর শেষে পদ্মা বা সাবেক ফার্মারস ব্যাংকের ঋণের পরিমাণ ছিল ৫ হাজার ১৩০ কোটি। এর মধ্যে খেলাপি ছিল ৭২৩ কোটি টাকা। সুতরাং সে সময় খেলাপি ঋণের হার ছিল মাত্র ১৪ শতাংশ।
ইউনিয়ন ব্যাংকের বর্তমান খেলাপির পরিমাণ ৭১২ কোটি টাকা, যা মোট ঋণের প্রায় চার শতাংশ। তবে পাঁচ বছর আগে ব্যাংকের খেলাপির হার ছিল শূন্য দশমিক ৫৭ শতাংশ। ২০১৭ সালের ডিসেম্বর শেষে মেঘনা ব্যাংকের ঋণ বিতরণের পরিমাণ ছিল ২ হাজার ৭৩২ কোটি টাকা। তবে এর মধ্যে খেলাপির পরিমাণ ছিল মাত্র ৯৩ কোটি টাকা, যা বিতরণকৃত ঋণের প্রায় সাড়ে তিন শতাংশ। হালাগাদ তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের জুন শেষে মেঘনা ব্যাংকের খেলাপি দাঁড়িয়েছে ২৪১ কোটি টাকা, যা বিতরণকৃত মোট ঋণের প্রায় ৬ শতাংশ।
এ বছরের জুন শেষে ৪ হাজার ৭৯০ কোটি টাকা বিতরণ করেছে মিডল্যান্ড ব্যাংক। এর মধ্যে খেলাপি হয়ে পড়েছে ১৬২ কোটি টাকা। হিসাব অনুযায়ী খেলাপি ঋণ বিতরণকৃত মোট ঋণের প্রায় সাড়ে তিন শতাংশ। বর্তমানে মধুমতি ব্যাংকের খেলাপি ঋণের হার তিন দশমিক ৪৩ শতাংশ। কারণ চলতি বছরের জুন শেষে ৫ হাজার ২৫৪ কোটি টাকার ঋণ বিতরণ করেছে মধুমতি ব্যাংক। এর মধ্যে খেলাপি হয়ে পড়েছে ১৮০ কোটি টাকা। যদিও পাঁচ বছর আগে ব্যাংকের খেলাপির হার ছিল একেবারেই নগণ্য। কারণ ২০১৭ সালের ডিসেম্বর শেষে ব্যাংকের বিতরণ ছিল ২ হাজার ৭৯০ কোটি টাকা। যেখানে খেলাপি ছিল মাত্র ৯ কোটি টাকা।
বর্তমানে সাউথ বাংলা অ্যাগ্রিকালচার অ্যান্ড কমার্স ব্যাংকের বিতরণের পরিমাণ ৭ হাজার ৭১ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপি হয়ে পড়েছে ৪১৮ কোটি টাকা, যা বিতরণকৃত ঋণের প্রায় ছয় শতাংশ। পাঁচ বছর আগে ব্যাংকের ঋণ ছিল ৪ হাজার ৩০৬ কোটি টাকা। যার মধ্যে খেলাপি ছিল মাত্র ৩১ কোটি টাকা। বর্তমানে এনআরবি ব্যাংকের মোট খেলাপির পরিমাণ ২১৫ কোটি টাকা। যা বিতরণকৃত ঋণের ৪ দশমিক ৫২ ভাগ। গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ৩৩০ কোটি টাকা এবং এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংকের খেলাপি ঋণের হার প্রায় পাঁচ শতাংশ। অঙ্কে যার পরিমাণ ৬০০ কোটি টাকা।
তথ্য মতে, ব্যাংক অনুমোদনের প্রথম তিন বছরের মধ্যেই পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়ার কথা ছিল এই নয় ব্যাংকের। কিন্তু ১০ বছর অতিক্রম করলেও এখন পর্যন্ত পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হতে পেরেছে মাত্র তিনটি ব্যাংক। সেগুলো হলো, সাউথ বাংলা অ্যাগ্রিকালচার অ্যান্ড কমার্স, এনআরবি কমার্শিয়াল এবং ইউনিয়ন ব্যাংক। বাকিরা এখনও তালিকাভুক্ত হতে পারেনি।
© Deshchitro 2024